জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আবিদের স্ত্রী

নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতানের   স্ত্রী আফসানা খানম জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। রাজধানীর নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে তাকে। মাথার ডান পাশে রক্ত জমাট বাঁধার কারণে জরুরি ভিত্তিতে রোববার সকালে অস্ত্রোপচার করা হয়। একই রাতে তিনি দ্বিতীয় দফা স্ট্রোক করায় তার মাথায় পুনরায় অস্ত্রোপচার করা হয়। অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়াতে চিকিৎসকরা তাকে লাইফ সাপোর্টে রেখেছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আফসানা দ্বিতীয়বার স্ট্রোক করায় অবস্থা খারাপের দিকে চলে গেছে। এরকম অবস্থা থেকে ফিরে আসার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। নিউরো সায়েন্স হাসপাতালের আইসিইউ চিকিৎসক ডা. মাসুদ খান মানবজমিনকে বলেন, ৭২ ঘণ্টার অবজারভেশনে আমরা রেখেছি। তবে তিনি শঙ্কামুক্ত নন। বলতে গেলে আমরা মাত্র ২ শতাংশ আশা নিয়েই চেষ্টা করছি। এদিকে গতকাল বিভিন্ন টেলিভিশনে দেয়া স্ক্রলে আফসানার মৃত্যুর খবর দেখে হাসপাতালে ভিড় করতে থাকেন তার স্বজনরা। পারিবারিক আত্মীয়স্বজন ছাড়াও আফসানার ছোটবেলার বান্ধবী, তার ছেলে তানজিদ মাহীর স্কুলের শিক্ষিকা, ছোট বোনের মেয়ে, আবিদ সুলতানের সহকর্মীসহ আরো অনেকে এসে গভীর পর্যবেক্ষণ ইউনিটের (আইসিইউর) সামনে ভিড় করেন। আফসানার বড় বোনের মেয়ে মীম মানবজমিনকে জানান, আমি কিছুক্ষণ আগে আইসিইউর ভেতর থেকে এসেছি। খালার অবস্থা ভালো না। তার মুখ অন্যরকম হয়ে গেছে। মাথা ঢেকে দেয়া হয়েছে। আফসানার ছেলে মাহীর মাস্টার মাইন্ড স্কুলের শিক্ষিকা মাসুমা আক্তার মানবজমিনকে বলেন, আমরা আসলে এরকম একটা পরিস্থিতিতে কি করব ভেবে পাচ্ছি না। মাহীকে আমাদের নিজের সন্তানের মতই দেখি। এখন তার পরিবারের এরকম একটা অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বাবা মারা গেলেন এখন তার মা জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। আমরা মাহীকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা খোঁজে পাচ্ছি না। আফসানার এক বান্ধবী মানবজমিনকে বলেন, তার কোনো সমস্যাই ছিল না। রোববার সকালে হঠাৎ করেই সে হাত পা নড়াচড়া করতে পারছিল না। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এখন তার অবস্থা মনে হচ্ছে খুবই খারাপ। এদিকে তার স্বামীর মরদেহ ঢাকায় আসছে। তার জানাজাও সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু সে কিছুই দেখতে পারল না। তাদের একমাত্র সন্তান মাহীকে কেউ সান্ত্বনা দিতে পারছে না। তার চোখে শুধুই জল। আবিদ-আফসানা দম্পতির একমাত্র সন্তান মাহী মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ও লেভেলের ছাত্র। গতকাল তার বাবা আবিদ সুলতানের লাশ দেশে আসে। এক চাচার সঙ্গে বাবার লাশ গ্রহণ করতে আর্মি স্টেডিয়ামে যায় মাহী। সেখানে তার অন্য স্বজনরাও ছিলেন। তারা জানিয়েছেন, বাবার মৃত্যু ও মায়ের এই সংকটাপন্ন অবস্থার সময় ছেলেটিকে মানসিকভাবে শক্ত রাখার চেষ্টা করছেন তারা।

No comments

Powered by Blogger.