অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ by সালাহউদ্দিন বাবর

কিছু দিন আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা সিইসি বলেছেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে না থাকলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না।’ তার এই বক্তব্য সর্বাংশে সত্য। রাজনৈতিক মহল, ঘটনাপ্রবাহের পর্যবেক্ষক ও সাধারণ মানুষ বিষয়টি উপলব্ধি করছে এবং বলে আসছে কথাটা। তবে সিইসির বক্তব্যের ভিন্ন তাৎপর্য রয়েছে। দেশে একটি প্রশ্নমুক্ত নির্বাচন করানোর দায়িত্ব তাদের। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়ার তাৎপর্য সবার চেয়ে বেশি উপলব্ধি করেন তারাই। নির্বাচনের পর রাজনৈতিক দলবিশেষের কোনো দায় থাকে না, কিন্তু কমিশনের দায় নির্বাচনের পূর্বাপরই থেকে যায়।
সে দায় থেকে যায় বলেই বাস্তবতা তাদেরই বেশি উপলব্ধির কথা। সিইসির এই উপলব্ধি এবং তা প্রকাশ করায় সব মহলেই তা প্রশংসিত হয়েছে। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হওয়ার ব্যাপারে কমিশনের যতটুকু ভূমিকা রাখার তা তারা রাখবেন বলে আশা করা যায়। একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য কমিশনের ওপর আস্থা সৃষ্টির মতো অবস্থান তৈরি হওয়া উচিত। সেটাই তারা করা উচিত। নির্বাচনে সবাই তথা অংশগ্রহণকারী দলগুলো যাতে ভরসা নিয়ে আসতে পারে, সেটা কমিশনের দেখতে হবে। তবে পরিতাপের বিষয়, দেশে বিদ্যমান যে পরিবেশ, তা কিন্তু একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনুকূলে নয়। সে আশঙ্কা থেকেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার হয়তো বলেছেন, বিএনপিকে বাইরে রেখে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না। ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে বিরোধী দল বিশেষ করে বিএনপির সাথে বৈরী আচরণ করছে, এই প্রেক্ষাপটে দলটির পক্ষে নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রায় অসম্ভব। দেশে বিএনপির নেতাকর্মী ও শুভার্থীদের যে দমনপীড়ন করা হচ্ছে, তাতে দলটির পক্ষে স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা সম্ভব নয়। দলের চেয়ারপারসনসহ নেতাকর্মীদের ওপর শত মামলার বোঝা চাপানো রয়েছে। মাথার ওপর হুলিয়া নিয়ে তাদের এক প্রকার পলাতক জীবন যাপন করতে হচ্ছে। এসব ব্যক্তির পারিবারিক জীবন পর্যন্ত এখন বিপর্যস্ত, তাই তাদের অবকাশ কোথায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়ার? বিএনপির লোকদের এমন এক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে চলতে হচ্ছে যে, তাতে আত্মরক্ষা করা ছাড়া ভিন্ন কিছু ভাবার সুযোগ নেই। এ পরিস্থিতিতে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন খুবই কঠিন। নামসর্বস্ব কয়েকটি দলকে নিয়ে হয়তো নির্বাচনের আয়োজন হতে পারে, কিন্তু তা সত্যিকার নির্বাচন হবে না। জাতীয় পার্টিকে মেকআপ রুমে নিয়ে বিরোধী দলের প্রতিনিধি হিসেবে সাজিয়ে নাটক করা যাবে। কিন্তু বিরোধী দলের মৌলিক চরিত্র আগেই জাতীয় পার্টি হারিয়ে বসে আছে। সরকারের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবেই দলটিকে জনগণ মনে করে।
সরকারের মন্ত্রিসভায় তারা আছেন। আরো কৌতূহলের ব্যাপার যে, সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদের পক্ষে যে তিনটি মনোনয়নপত্র দাখিল করা হয়েছে, এর একটি দাখিল করা হয়েছে, যাতে প্রস্তাবক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। তিনি মন্ত্রী পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। মন্ত্রিসভায় থাকা এবং রাষ্ট্রপতি পদের প্রস্তাবক হওয়ার পর তাদের পক্ষে সরকারের বাইরে নিজেদের অবস্থান করা প্রমাণ করা যাবে না কিংবা জনগণকে বোঝানো যাবে না যে, তারা সরকারের অংশ নন। জাতীয় পার্টির মতো একটি দলকে বিরোধী পক্ষ বলে যতই প্রচার করা হোক না কেন, তাতে জনগণের বিশ্বাস জন্মাবে না। দেশ এখন প্রকৃতপক্ষে এক দলের শাসনাধীনে চলছে। এভাবে তো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চলতে পারে না। এতে শুধু দেশের ক্ষতি হচ্ছে না, গণতন্ত্র অচল হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে বিরোধী দল শুধু বিনাশ হবে না- ভিন্ন মতাদর্শ ও বিকল্প নেতৃত্বের বিকাশও ঘটবে না। সরকারের বিরোধিতা করার আইনগত অবস্থান না থাকলে দেশে অস্বাভাবিক পন্থার উদ্ভব ঘটবে; যার ফলে সামগ্রিকভাবে দেশের, আইনের শাসনের ও গণতান্ত্রিক পন্থা হুমকির মুখে পড়তে পারে। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিকল্প নেই। কেননা, দেশের অন্যতম বড় দল বিএনপির সমর্থক হিসেবে বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠী রয়েছে। বিএনপি নির্বাচনে না এলে এই বিপুলসংখ্যক মানুষ নির্বাচন নিয়ে তাদের উৎসাহ হারাতে পারে। ফলে তখন নির্বাচনে জনমতের সঠিক প্রতিফলন ঘটবে না। তাই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কর্তব্য- যাতে বিএনপিসহ সব দল নির্বাচনে অংশ নেয়ার মতো উপযুক্ত পরিবেশ পায়। কিন্তু বর্তমানে দেশের পরিস্থিতি এমন নয় যে, সবাই আগামী নির্বাচনে আসার ক্ষেত্রে উৎসাহী হবেন। বিশেষ করে বিএনপির সাথে ক্ষমতাসীনেরা যে বৈরী আচরণ করছেন, তা কোনো অবস্থায় স্বাভাবিক নয়। তাই সরকারের প্রতি বিএনপি বারবার আহ্বান জানাচ্ছে, তাদের সাথে বৈরী আচরণ না করে একটি বড় দল হিসেবে তারা যাতে নির্বাচনে আসতে পারে, তার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টির জন্য। বিশেষ করে নির্বাচনের আগে এখন থেকেই একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা দরকার। প্রতিটি দলের এ অধিকার রয়েছে যে, রাষ্ট্রযন্ত্র সবার সাথে সম-আচরণ করবে; কারো প্রতি অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী হবে না। কিন্তু অনেক দিন ধরে লক্ষ করা যাচ্ছে, বিএনপিকে তার স্বাভাবিক কার্যক্রম পর্যন্ত চালাতে দেয়া হচ্ছে না। নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হামলা-মামলা চালানো হচ্ছে। তাদের কারান্তরালে রাখা হচ্ছে। বিএনপির বক্তব্য এক রাজনৈতিক মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। তাকে রেখে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। এমন পরিস্থিতি বিরাজ থাকলে বিএনপির পক্ষে নির্বাচনে অংশ নেয়া সম্ভব হবে কি? সে ক্ষেত্রে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ভাগ্যে কী ঘটবে? বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে উদ্বেগ শুধু দেশের ভেতরেই নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বিরাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অবর্তমানে উগ্রপন্থা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এ ছাড়া দেশে জবাবদিহিতামূলক শাসনব্যবস্থা কায়েম নেই, যা গণতন্ত্রের প্রধান অনুষঙ্গ। ফলে দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব জার্নালিজমের আর্চার ব্লাড সেন্টার ফর ডেমোক্র্যাসি আয়োজিত বাংলাদেশ ডেমোক্র্যাসি শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য দেয়ার সময় বিশেষজ্ঞরা এই আশঙ্কা প্রকাশ করেন। সেমিনারে মত প্রকাশ করা হয়, বাংলাদেশে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের কারণে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিনিয়ত বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। গুম ও খুনের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। শক্তিশালী বিরোধী দলের অভাবে জবাবদিহিতার সঙ্কটের কারণে অপশাসন বিস্তৃত হচ্ছে। এ পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার উপায় অনুসন্ধান এবং গণতন্ত্র অনুসরণে মনোযোগী হতে হবে বলে তাগিদ দেয়া হয়। সেমিনারে পর্যবেক্ষণে আসে- বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখন নানা সমস্যায় জড়িত এবং ক্রমশ তার আরো অবনতি ঘটছে। তাছাড়া, সমালোচনামূলক সাংবাদিকতার পথ বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। মিডিয়ার ওপর ক্ষমতাসীনদের অদৃশ্য হস্তক্ষেপ ও নানা প্রভাব মত প্রকাশের ক্ষেত্রে এই অবনতির কারণ। ক্ষমতাসীনেরা বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিকাশের ব্যাপারে তেমন আগ্রহী নন বলে সেমিনারে মত প্রকাশ করা হয়। অর্থ পাচার রোধের ব্যাপারে প্রশাসনের উদ্যোগ আয়োজন নিতান্ত কম বলে মন্তব্য করা হয়েছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সুষ্ঠু অনুশীলনের ঐতিহ্য বা সংস্কৃতি আজো সৃষ্টি হয়নি; অথচ এর বিপরীত কর্মকাণ্ড অহরহ চলছে। দেশের জন্মের পর থেকেই গণতন্ত্র অনুশীলনের মানসিকতার অভাব লক্ষ করা গেছে। যাদের এই ঐতিহ্য গড়ার দায়িত্ব ছিল, তারা সম্মুখপানে হাঁটতে পারেননি, কেবলই পিছিয়ে গেছেন। সূচনা ইতিবাচক হলেও তা অব্যাহত থাকেনি। ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হযনি, বরং প্রচণ্ড আঘাত এসে সব কিছু ওলটপালট করে দিয়েছে। গণতন্ত্রের প্রাণ যে সুষ্ঠু ভোট ব্যবস্থা, তার প্রাণবায়ু বের হয়ে গেছে। সম-অধিকার ও মানবাধিকার হলো গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। কিন্তু এ দেশে মানুষ মত-পথের ভিন্নতার কারণে রাষ্ট্রযন্ত্রের কাছে সম-অধিকারের ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। অথচ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধান মত ও পথের ভিন্নতা নির্বিশেষে সবাইকে সম-অধিকার ভোগ করার অধিকার দিয়েছে। অথচ মানবাধিকার চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। গণতন্ত্রের একটি অপরিহার্য অনুষঙ্গ হচ্ছে বাকস্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা। বাংলাদেশে গণতন্ত্র যেমন বারবার হোঁচট খেয়েছে, তেমনি বাক ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নানাভাবে সঙ্কুচিত হয়েছে। ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের অন্তত তিনটি ধারা বাক ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কণ্ঠরোধকারী ছিল। সংবাদকর্মীরা দীর্ঘ দিন এই কালাকানুনের বিরুদ্ধে লড়েছেন। স্মর্তব্য, ১৯৭৫ সালে দেশে সংবাদপত্রের জন্য একটি কালো অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল। সরকারি মুখপত্র হিসেবে মাত্র চারটি পত্রিকা রেখে বাকি সব খবরের কাগজ বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর একপর্যায়ে আসে এরশাদের সামরিক শাসন। তখন প্রায় ১০ বছর দেশে সংবাদপত্র ও সংবাদকর্মীদের কণ্ঠকে সঙ্কুচিত করে রাখা হয়। ক্ষমতাসীন সরকারের শাসনামলে এবার তৈরি করা হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। সর্বশ্রেণীর সংবাদপত্রসেবী এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হলে সরকার সংশোধন করে পুনরায় সেই আইনের খসড়া প্রকাশ করেছে। আগের তুলনায় এই সংশোধনী আরো বেশি কঠোর ও কঠিন। সম্পাদক পরিষদের এক বৈঠকে এই বিধি নিয়ে আলোচনার পর এক বিবৃতিতে পরিষদ বলেছে, তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের হয়রানিমূলক ৫৭ ধারা বাতিল করে ওই ধারার বিতর্কিত বিষয়গুলো প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রেখে দেয়া হয়েছে এবং আরো নতুন কয়েকটি কঠোর ধারা সংযোজন করা হয়েছে। এতে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এই নতুন সংযোজন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিসরকে সঙ্কুচিত করবে। পরিষদের এই উদ্বেগের সাথে গোটা জাতি একাত্ম। সুশাসন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে সংবাদপত্রের ভূমিকা অপরিহার্য। আর এসবই গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ। একটি গণতান্ত্রিক সমাজে সংবাদপত্রের প্রয়োজন কতটুকু, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতা স্বাধীন সংবাদপত্র ভিন্ন সম্ভব নয়। সরকার গণতন্ত্র ও স্বাধীন সংবাদপত্র নিয়ে সব সময় উচ্চকণ্ঠ, কিন্তু বাস্তবে তাদের ভূমিকা ও আচরণ নিজেদের বক্তব্য-বিবৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সরকার তাদের প্রতিপক্ষের প্রতি যে আচরণ করছে, তাতে স্বাধীন সংগঠন করার যে সাংবিধানিক অধিকার তা খর্ব করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নানা ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। যেমন- মামলা, হামলা, আটক, সভা-সমাবেশ করতে না দেয়াসহ যাবতীয় দমনমূলক পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। মোট কথা, সরকারি আচরণে সহিষ্ণুতা ও শ্রদ্ধার কোনো লক্ষণ নেই।
গণতন্ত্রের যথাযথ অনুশীলন না থাকায় দেশে গণতান্ত্রিক শিষ্টাচার ও সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে মত-পথের ভিন্নতা সত্ত্বেও রাজনৈতিক অঙ্গনে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সহনশীলতার অপূর্ব দৃষ্টান্ত লক্ষ করা যায়। তবে বাংলাদেশে এমন উদাহরণ খুব পাওয়া যাবে না। ভিন্নমত ও পথের রাজনৈতিক সংগঠনগুলো পরস্পরকে সহযোগী মনে করে না এবং পরস্পরের প্রতি চরম বৈরী মনোভাব পোষণ করে থাকে। তাদের সামাজিকতা, সৌজন্য ও শ্রদ্ধাবোধ পোষণ করতে দেখা যায় না। দলগুলোর অবস্থান কারো উত্তর, কারো দক্ষিণ মেরুতে। আদর্শিক ও নীতিগত দূরত্ব অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু মতপার্থক্যের কারণে সম্পর্ক শত্রুতায় পৌঁছবে, এমন তো কাম্য নয়। রাজনীতিতে এমন অলঙ্ঘনীয় বিভাজনসহ দেশে সব ক্ষেত্রে বিভক্তি ও বিরোধিতার কারণে কোনো বিষয়ে জাতীয় ঐক্যের নজির খুঁজে পাওয়া যাবে না। অথচ কোনো জরুরি মুহূর্তে বা ক্রান্তিলগ্নে অটুট জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। কোনো যুক্তিতে বা বোধগম্য কারণে এই বিভক্তি ঘটলে প্রশ্ন ছিল না; কিন্তু দেখা যায়- একগুঁয়েমির দরুণ এবং যুক্তিহীন বিষয় নিয়েই এমন বিভক্তি সৃষ্টি হচ্ছে। পরস্পরের সমালোচনার যে ভাষা আমাদের রাজনীতিতে ব্যবহৃত হয়, তা একান্তই অপরিশীলিত। কাউকে অপমান ও হেয়প্রতিপন্ন করতেই সাধারণত যে ভাষা ব্যবহার করা হয়ে থাকে, এদেশে ক্ষমতার রাজনীতিতে সেটাই চর্চা হচ্ছে। জাতির কোনো সঙ্কটমুহূর্তে ভিন্নপথের রাজনীতিকদের একত্রে বসা ও সমস্যার সমাধান খোঁজা বাংলাদেশে কল্পনাও করা যায় না। অথচ এমন অলঙ্ঘনীয় বাধা দেশের জন্য বড় বিপদের। কিন্তু কেউ এটা উপলব্ধি করে বলে মনে হয় না। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনদের অগ্রণী ভূমিকা থাকার কথা, কিন্তু তারাই দলগুলোর পারস্পরিক সম্পর্কের দূরত্ব বৃদ্ধি করছেন।

No comments

Powered by Blogger.