বন্ধ হোক ফেসবুকের নেতিবাচক ব্যবহার by মুন্নাফ হোসেন

ফেসবুক সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম। মার্ক জুকারবার্গ তার কয়েকজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে ২০০৪ সালে এটি আবিষ্কার করেছিলেন। মূল উদ্দেশ্য ছিল সবার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা। ফেসবুকের কল্যাণে অসংখ্য ভালো কাজ হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এটি জরুরি। ফেসবুক ব্যবহারে শিশু-কিশোরদের ওপর একধরনের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বয়স বাড়িয়ে আইডি খুলে ব্যবহার করছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। এতে তাদের পড়াশোনা মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। শিক্ষিত অভিভাবকরাই তার সন্তানের হাতে তুলে দিচ্ছে স্মার্টফোন। তারা বন্ধুদের প্ররোচনায় খুলছে আইডি, আর সারাক্ষণ ডুবে থাকছে ফেসবুকে। বাবা-মাকে ধোঁকা দিচ্ছে এই বলে যে, তারা ফেসবুকে পড়াশোনা করছে। ফেসবুক আসক্তির কারণে সন্তানরা বাবা-মা, প্রতিবেশী বা শিক্ষকদের সম্মান করে না। স্কুল-কলেজ ফাঁকি দিয়ে পার্কে বা নদীর ধারে বসে ব্যবহার করছে ফেসবুক। এতে করে পারিবারিক কলহের সৃষ্টি হচ্ছে। বই হচ্ছে শিক্ষার্থীদের উত্তমসঙ্গী। কিন্তু বই না পড়ে কতটুকু জ্ঞান অর্জন সম্ভব, তা আমার মাথায় আসে না। জ্ঞান অর্জনে বইয়ের চেয়ে উত্তম হাতিয়ার কিছু হতে পারে না। তাই ফেসবুক ছেড়ে বইয়ের পাতায় শিক্ষার্থীদের মগ্ন হওয়া উচিত। বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হল ফেসবুক। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে এবং ব্যবহারকারীর অধিকাংশই বয়সে তরুণ। নিজের কোনো অভিজ্ঞতা,
আনন্দ, অনুভূতি, স্মৃতি অথবা বিভিন্ন ধরনের ছবি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পেজে পোস্ট করে দিয়ে ফেসবুক বন্ধুদের মন্তব্য উপভোগ করা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ঘটনা সংক্রান্ত মতামত শেয়ার করার কার্যকর মাধ্যম হল ফেসবুক। নিঃসন্দেহে এটি বিশ্বকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসার আরেকটি যুগান্তকারী উদ্ভাবন। কিন্তু প্রতিটি উদ্ভাবনেরই যে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক রয়েছে, সেটিও মনে রাখা দরকার। বাংলাদেশের তরুণ সমাজের মধ্যে ফেসবুকের ব্যবহার কী অর্থে হচ্ছে তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনা ফেসবুকের নেতিবাচক ব্যবহার প্রমাণ করে। প্রেম, বন্ধুত্ব কিংবা ভালোবাসা মানবিক জীবনে চিরন্তন বাস্তবতা। বিভিন্নকালে এর বিকাশ বিভিন্নভাবে হয়েছে এবং সবসময়ই বিশ্বাস, আস্থা ও পারস্পরিক বোঝাপড়া ছিল এ ধরনের মানবিক সম্পর্কের ভিত্তি। আর এর জন্য প্রয়োজন উভয়ের মধ্যে পারস্পরিক জানাশোনা, যেখানে আর্থ-সামাজিক বাস্তবতাকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। কিন্তু ফেসবুকের মাধ্যমে তরুণ-তরুণীদের মাঝে পারস্পরিক যে সম্পর্ক তৈরি হয় তার মধ্যে থাকে না কোনো পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস। কেবল সাময়িক আবেগনির্ভর এ ধরনের সম্পর্কের অশুভ পরিণতি সামাজিক জীবনে নানা ধরনের অস্থিরতা তৈরি করছে। কারও সংসার ভাঙছে, কেউবা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে এবং কারও কারও জীবনটাই বিপন্ন হয়ে পড়ছে। আর এভাবেই দেশের সামাজিক মূল্যবোধের দ্রুত অবক্ষয় হচ্ছে। ফেসবুকে চলমান এসএসসি পরীক্ষার প্রায় সব প্রশ্ন পাওয়া যাচ্ছে, যা আগামী প্রজন্মকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এ ব্যাপারে অভিভাবকসহ সর্বস্তরের মানুষকে সচেতন হওয়ার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।
মুন্নাফ হোসেন : সহকারী শিক্ষক, মোহাম্মদ নগর উচ্চ বিদ্যালয়, ফুলবাড়ীয়া, ময়মনসিংহ

No comments

Powered by Blogger.