সীমান্তে থাকা ৬ হাজার রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে চলে যেতে সেনাদের মাইকিং

বান্দরবান ও মিয়ানমার সীমান্তের জিরো লাইনে অবস্থানকারী ছয় হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে চলে যাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। গত কয়েক দিন থেকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তের জিরো লাইনে অবস্থানকারী এসব রোহিঙ্গাকে সেনাবাহিনী ও বিজিপির সদস্যরা হুমকি-ধমকি দিচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। রোববার সকালে জিরো লাইন থেকে রোহিঙ্গাদের সরে যেতে সেনাবাহিনী কাঁটাতারের বেড়ার কাছে মাইকিং করেছে। এ দিকে সীমান্তে প্রায় সময় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ফাঁকা গুলি, নতুন করে ঘরবাড়িতে আগুন দেয়া ও কাঁটাতারের বেড়া ঘেঁষে সৈন্য সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েছে। জিরো লাইনে অবস্থানের কারণে জটিলতা দেখা দেয়ায় এসব রোহিঙ্গাকে সেখান থেকে সরিয়ে নেয়াও সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক নির্যাতনের ঘটনায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সীমান্তের বিভিন্ন স্থানে ২০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান নেন। তাদের মধ্যে ছয় হাজারের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান নেন তুমব্রু সীমান্তের জিরো লাইনে। ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে সরকারের শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশন আন্তর্জাতিক শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের সহায়তায় জানুয়ারিতে উপজেলার সাপমারা ঝিড়ি, বড় ছনখোলা, দোছড়ি ও ঘুনধুম সীমান্তের বাহির মাঠ এলাকায় অবস্থানকারী সব রোহিঙ্গাকে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে সরিয়ে নেয়। তবে সীমান্তের জিরো লাইনে অবস্থানের কারণে তুমব্রু এলাকার ছয় হাজার রোহিঙ্গাদের এখনো সরিয়ে নেয়া হয়নি। সীমান্তে নতুন করে মিয়ানমারের সৈন্য সংখ্যা বৃদ্ধি, গুলিবর্ষণ ও রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়ায় এসব রোহিঙ্গা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। রোহিঙ্গা মো: আরিফ ও দিল মোহাম্মদ জানান, জিরো লাইনে অবস্থান নেয়া রোহিঙ্গাদের কোনো সমস্যা হচ্ছিল না। তবে গত এক সপ্তাহ থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বিজিপি প্রায় সময়ই ফাঁকা গুলি করছে। এ ছাড়া তুমব্রু সীমান্তের ওপারে ঢেকুবুনিয়া এলাকায় নতুন করে বাড়িঘরে আগুন দিয়েছে। কাঁটাতারের বেড়া ঘেঁষে তাঁবু টাঙিয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছে। এসব কারণে রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
রোহিঙ্গারা জানান, শুক্রবার সে দেশের সেনাকর্মকর্তা ও সরকারের এক মন্ত্রী সীমান্তের ঢেকুবুনিয়া সফর করেছেন। তারা রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলতে চেয়েছেন। তবে রোহিঙ্গারা তাদের জানিয়েছেন রাখাইনে এখনো রোহিঙ্গাদের বসবাসের পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান হলে তারা রাখাইনে ফিরে যাবেন। নাইক্ষ্যংছড়ির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরওয়ার কামাল জানান, ইউএনএইচসিআরের সহায়তায় নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে ৯ হাজার ১৯৮ জনকে উখিয়ার শরণার্থী শিবিরে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তবে তুমব্রু সীমান্তে জিরো লাইনের রোহিঙ্গারা এখনো মিয়ানমারের ভূখণ্ডেই অবস্থান করছেন। সে কারণে তাদের সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক জানান, যেহেতু তুমব্রু সীমান্তের জিরো লাইনে অবস্থানকারী রোহিঙ্গারা মিয়ানমার অংশে অবস্থান করছেন সে কারণে তাদের সেখান থেকে সরিয়ে নিতে কোনো চুক্তির প্রয়োজন নেই। এ বিষয়টি মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। বিজিবির কক্সবাজার সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আবদুল খালেক জানান, জিরো লাইনে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের সেখান থেকে সরে যেতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের চাপ প্রয়োগের বিষয়টি আমরা খবর পেয়েছি। এ ছাড়া সীমান্তে মাঝে মধ্যে ফাঁকা গুলিবর্ষণ, ঘর পোড়ানো এসব ঘটনা ওপারে ঘটছে। তবে বিজিবির পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের ওপর নজর রাখা হচ্ছে। সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর বিজিবি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

No comments

Powered by Blogger.