মানবাধিকার কর্মী আসমা জাহাঙ্গীর আর নেই

পাকিস্তানের মানবাধিকার কর্মী আইনজীবী আসমা জাহাঙ্গীর (৬৬) মারা গেছেন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রোববার হাসপাতালে যাওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। দ্য ডন। একাত্তরে নির্যাতিত বাঙালির পক্ষে যেসব পাকিস্তানি দাঁড়িয়েছিলেন তাদের অন্যতম ছিলেন আসমার বাবা মালিক গোলাম জিলানী।
১৯৭১ সালে তিনি ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের পর তার মুক্তির দাবিতে জেনারেল ইয়াহিয়াকে খোলা চিঠি লেখেন তিনি। এ জন্য কারাবরণ করতে হয় তাকে। ২০১৩ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়ানো ৬৯ জন বিদেশি বন্ধুকে সম্মাননা দেয়া হয়। তার মধ্যে যে ১৩ জন পাকিস্তানি ছিলেন, তাদের একজন মালিক গোলাম জিলানী। বাবা মালিক গোলাম জিলানীর সম্মাননা নিতে ঢাকায় আসেন আসমা। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে সংঘটিত বর্বরতার জন্য পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়ার পক্ষে ছিলেন আসমা জাহাঙ্গীর। বাংলাদেশে দুই যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর নিয়ে পাকিস্তান সরকারের ‘দ্বৈতনীতির’ সমালোচনা করায় অনলাইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাকিস্তানিদের রোষের মুখেও পড়েছিলেন তিনি। খবরে বলা হয়েছে, চূড়ান্ত নিপীড়ন ও নির্যাতনের মুখেও অটল এই আইনজীবী মানবাধিকার রক্ষায় বরাবরই সোচ্চার ছিলেন। পাকিস্তানকে আরও গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রে পরিণত করার সংগ্রামে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ১৯৫২ সালে লাহোরে জন্ম নেন আসমা জাহাঙ্গীর। তিনি পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি নেন।
১৯৮০ সালে লাহোর হাইকোর্ট এবং ১৯৮২ সালে সুপ্রিমকোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। পরে তিনি নারী হিসেবে প্রথম সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্টও হন। সামরিক শাসক জিয়াউল হকের আমলে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে গিয়ে ১৯৮৩ সালে তিনি কারাবন্দি হন। ২০০৭ সালে আইনজীবীদের আন্দোলনেও তিনি সক্রিয় ছিলেন এবং তাকে গৃহবন্দি করা হয়েছিল। ২০১০ সালে হিলাল-ই-ইমতিয়াজ ও সিতারা-ই-ইমতিয়াজসহ একাধিক সম্মাননা পান আসমা জাহাঙ্গীর। মানবাধিকার সংস্কৃতির উন্নয়নে ভূমিকার জন্য তিনি ইউনেস্কো/বিলবাও পুরস্কার এবং ফরাসি সরকারের দে লা লিজিঅঁ ডি অনার পুরস্কার পান। তিনি ২০১৪ সালে রাইট লাইভলিহুড অ্যাওয়ার্ড ও ২০১০ সালে পান ফ্রিডম অ্যাওয়ার্ড।

No comments

Powered by Blogger.