সুইস প্রেসিডেন্টের সফর

সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালেন বেরসের চার দিনের বাংলাদেশ সফর আমাদের জন্য নানা দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি এমন এক সময় এ সফরে এসেছেন, যখন মিয়ানমার থেকে আসা দশ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার ভার মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ। এ সংকট নিরসনে নানামুখী কূটনৈতিক প্রয়াস চলছে। এ পটভূমিতে সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরের যে একটি বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে, তা অস্বীকার করা যায় না। স্বভাবতই তার এ সফরে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন ইস্যুর পাশাপাশি প্রাধান্য পেয়েছে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি। মূলত রোহিঙ্গা ইস্যুতেই গতকাল ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন সুইস প্রেসিডেন্ট। গতকাল কক্সবাজারে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন ছাড়াও কক্সবাজার সদর হাসপাতালে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা স্থাপিত রোহিঙ্গা ইউনিটে চিকিৎসাধীন রোগী ও চিকিৎসা ব্যবস্থা পরিদর্শন করেন। সোমবার ঢাকায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন সুইস প্রেসিডেন্ট। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অ্যালেন বেরসে বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট আমাদের দেশের জন্য বড় উদ্বেগের বিষয়।’ উল্লেখ্য, রোহিঙ্গাদের জন্য সুইজারল্যান্ড গত বছরের অক্টোবরে জেনেভায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ৮০ লাখ সুইস ফ্রাঁ জরুরি মানবিক সাহায্য দেয়ার প্রতিশ্র“তি দিয়েছে। আর চলতি বছর আরও ১ কোটি ২০ লাখ সুইস ফ্রাঁ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট অ্যালেন বেরসে। এ পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে সুইজারল্যান্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে আমাদের বিশ্বাস। রোহিঙ্গা ইস্যুতে সুইজারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক সমর্থন প্রয়োজন আমাদের। বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গারা যাতে মিয়ানমারে টেকসইভাবে ফিরে যেতে পারে এবং সেখানে নিরাপদে বসবাস করতে পারে, সে ব্যাপারে সুইজারল্যান্ড রাখতে পারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা।
স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ সুইজারল্যান্ড বিশ্বের অন্যতম ধনী ও উন্নত রাষ্ট্র। দেশটির বৈশিষ্ট্যপূর্ণ গণতন্ত্র থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। সুইজারল্যান্ড বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতিদানকারী ইউরোপীয় দেশগুলোর অন্যতম। ১৯৭২ সালের ১৩ মার্চ বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ডের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। তবে এই প্রথম কোনো সুইস প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশ সফরে এলেন। তার এ সফরে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের (এসডিজি) বিষয়ে সহযোগিতার জন্য একটি দলিলে স্বাক্ষরে একমত হয়েছে দু’দেশ। বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো উন্নত দেশের এ ধরনের দলিল স্বাক্ষরে সম্মতির ঘটনা এটাই প্রথম। শুরুতে সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক লেনদেন খুব বেশি না হলেও গত সাত বছরে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ভবিষ্যতে বাণিজ্য সম্প্রসারণের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে সুইস ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী করে তোলা যায়। এ ক্ষেত্রে কূটনীতি অনুঘটকের ভূমিকা পালন করতে পারে। আজকের বিশ্বে কূটনীতি অর্থনৈতিক স্বার্থকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়। পারস্পরিক আদান-প্রদানের মধ্য দিয়েই সম্পর্কের উন্নতি ঘটে এবং তা থেকে লাভবান হতে পারে উভয় দেশই। সফররত সুইস প্রেসিডেন্ট অ্যালেন বেরসে আশা প্রকাশ করেছেন, দু’দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ভবিষ্যতে নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে। তার এ প্রত্যাশা বাস্তবে রূপ নিক।

No comments

Powered by Blogger.