গন্তব্য অনিশ্চিত by সাজেদুল হক

রাজনীতির দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বহুবারই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছেন বিরোধীনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তবে আজকের মতো পটভূমিতে অতীতে কখনোই নয়। আগামীকাল তার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণার দিন ঠিক রয়েছে। কী হবে সে রায়। মূলত এ প্রশ্নের ওপরই নির্ভর করছে বহু কিছু। এরইমধ্যে কারাগারে ধোয়ামোছার খবর বেরিয়েছে গণমাধ্যমে।
গত কয়েকদিনে দলীয় নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন খালেদা জিয়া। মতামত নিয়েছেন তৃণমূল নেতাদের। সাফ বার্তাও দিয়েছেন তাদের। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দলীয় নেতাদের কোনো ধরনের সহিংসতায় না জড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। দলীয় প্রধানের সাজা হলেও এখনই যে বিএনপি হার্ডলাইনে যাচ্ছে না সে বার্তাও মোটামুটি স্পষ্ট। যেকোনো মূল্যে ঐক্য ধরে রেখে দলকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করতে চান খালেদা জিয়া।
আগামীকাল কী হবে তা এখন অনেকটাই স্পষ্ট। রাজপথ দখলে রাখতে সবরকমের প্রস্তুতিই সম্পন্ন হয়েছে শাসক মহলের তরফে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ। ঢাকায় কোথাও বিএনপির নেতাকর্মীদের দাঁড়াতেই দেয়া হবে না। ঢাকার বাইরের চিত্র অবশ্য এখনো স্পষ্ট নয়। কাল মাঠের চিত্র যাই হোক, রাজনীতি যে ফের এক অনিশ্চিত পথে যাত্রা শুরু করছে তা এখন অনেকটাই নিশ্চিত।
রায় যদি বিরুদ্ধে যায় তবে খালেদা জিয়া কি নির্বাচনে অযোগ্য হবেন? নানা মুনীর নানা মত। সংখ্যাগরিষ্ঠ আইনবিদরা বলছেন, আপিল বিভাগে চূড়ান্ত রায় হওয়ার আগ পর্যন্ত নির্বাচনে যোগ্যতা-অযোগ্যতার প্রশ্ন আসবে না। তবে আরো কিছু মতও রয়েছে। কারও কারও মতে, নিম্ন আদালতে সাজা হলেই নির্বাচনে অযোগ্য হবেন। আবার কারও মতে নিম্ন আদালতের সাজার রায় হাইকোর্টে স্থগিত হলেই কেবল তিনি নির্বাচনের সুযোগ পাবেন।
সে যাই হোক, ২০১৮ নির্বাচনের বছর। নানা নাটকীয়তা যে অপেক্ষা করছে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। যদিও নিরুত্তাপ রাজনীতিতে উত্তেজনা একটু তাড়াতাড়িই তৈরি হয়েছে। আগেভাগেই হয়তো বিএনপির শক্তি পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছে। শক্তি পরীক্ষা আর শক্তি সঞ্চয়ের তত্ত্ব রাজনীতিতে আলোচিত হচ্ছে। যদিও সঞ্চিত শক্তি শেষ পর্যন্ত অনেক সময় কাজে লাগে না। আগামী নির্বাচনের চালচিত্র কেমন হবে? সিইসি নুরুল হুদা এটা কবুল করেছেন যে, বিএনপি ছাড়া অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না। ওবায়দুল কাদের কয়দিন আগে বলেছেন, বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে যেতে চেষ্টা করছে। আর রিজভীর কথা হচ্ছে, সরকার বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে চায়। কার কথা সত্য কে জানে।
আমরা জনগণ, এসব দৃশ্য দেখা ছাড়া আমাদের হয়তো আর কিছু করার নেই। একসময় আমরা একদিনের বাদশাহ ছিলাম এখন তাও নেই। বাড়তি সাবধানতাবশতঃ সিটবেল্ট বেঁধে অপেক্ষা করা ছাড়া আমাদের আর কীইবা করার আছে।

No comments

Powered by Blogger.