তেহরান-মস্কো-আঙ্কারা সহযোগিতা অক্ষুণ্ণ রাখতে রুহানি-পুতিন সংলাপ

ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি বলেছেন, ইরান সিরিয়ার সরকারের অনুমতি ছাড়াই সেদেশের ভূখণ্ডে বিদেশি সেনা উপস্থিতির বিরোধী। মঙ্গলবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে টেলিফোন সংলাপে তিনি এ কথা বলেন। রুহানি আরও বলেছেন, সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে চলমান উত্তেজনা কারো জন্যই মঙ্গলজনক নয়। সব দেশেরই উচিত সিরিয়ার ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান দেখানো। এ সময় তিনি সিরিয়ায় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত ইরান, রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যে সহযোগিতা অক্ষুণ্ণ রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, তেহরান ও মস্কোর মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে। দ্বিপক্ষীয় সমঝোতাগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরি বলে তিনি মন্তব্য করেন। রুহানি বলেন, কোনো কোনো দেশ পরমাণু সমঝোতা বাতিলের ষড়যন্ত্র করছে। ইরানের অবস্থান হলো, অপর পক্ষ যতক্ষণ পর্যন্ত সমঝোতা মেনে চলবে ইরানও তা মেনে চলবে। তবে পরমাণু সমঝোতার বিরুদ্ধে চলমান তৎপরতা বন্ধে পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন। ইয়েমেনের বেসামরিক জনগণের ওপর সৌদি নেতৃত্বাধীন আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়ে বলেন, পরমাণু সমঝোতাকে দুর্বল করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন ইরানের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের অভিযোগ তুলেছে। ওই অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই বলে তিনি জানান। এ সময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, পরমাণু সমঝোতাকে দুর্বল করার যে কোনো চেষ্টাই গোটা অঞ্চলের জন্য ক্ষতি বয়ে আনবে। সব মিত্র দেশকেই রাশিয়া এ বিষয়টি অবহিত করেছে। ইয়েমেনে চলমান আগ্রাসনের বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন পুতিন। তিনি বলেন, বিশ্বের সব দেশের উচিত শান্তিপূর্ণ উপায়ে ইয়েমেন সমস্যার সমাধানে চেষ্টা চালানো এবং শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। পুতিনও সিরিয়ার সরকারের অনুমতি ছাড়া সেদেশে বিদেশি সেনা উপস্থিতির বিরোধিতা করেন। সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে সন্ত্রাসীরা যাতে আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেজন্য ইরানের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করবে রাশিয়া। তেহরানে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত লেভান জাগারিয়ান বার্তাসংস্থা ইন্টারফ্যাক্সকে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেছেন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় মস্কো তেহরানকে আরো বেশি সহযোগিতা করতে চায়। তিনি বলেন, ইরান রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ শরীক এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় তেহরানের সঙ্গে অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিগুলোকে হেফাজত করা হবে। রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, আমেরিকার নতুন নিষেধাজ্ঞা সামরিক ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে তেহরান-মস্কো দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতায় কোনো প্রভাব ফেলবে না। ইরান, রাশিয়া, ইরাক ও সিরিয়া ২০১৫ সালে সন্ত্রাস বিরোধী চারপক্ষীয় জোট গঠন করে। লেবাননের হিজবুল্লাহও এ জোটের সঙ্গে যুক্ত। মধ্যপ্রাচ্যে এই পাঁচ শক্তির কথাই চূড়ান্ত এবং সন্ত্রাসীদের নির্মূল করার ক্ষেত্রে তারা মৌলিক অবদান রেখেছে। সন্ত্রাস বিরোধী এই জোট গঠনের ক্ষেত্রে ইরানের ভূমিকা অনস্বীকার্য। রাশিয়াও ইরানের ভূমিকার ব্যাপারে ভালোভাবে অবহিত আছে। মস্কো বুঝতে পেরেছে ইরানের অংশগ্রহণ ছাড়া সিরিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিজয় অর্জন করা সম্ভব নয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে ইরানকে কোণঠাসা করার জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ রাশিয়ার বিরুদ্ধে নানা তৎপরতায় লিপ্ত। কিন্তু ওয়াশিংটনের এ আচরণ তেহরান-মস্কো সহযোগিতায় কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। ইরানের আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশ্লেষক আলী রেজা নাদের বলেছেন, এ অঞ্চলে মার্কিন হস্তক্ষেপ ও প্রভাব মোকাবেলায় ইরান ও রাশিয়া মধ্যপ্রাচ্যে নজিরবিহীন জোট গড়ে তুলেছে। যাইহোক, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিরিয়া বিষয়ে মস্কো-তেহরান সহযোগিতার সুফল সবাই প্রত্যক্ষ করেছে। এই সহযোগিতা এ অঞ্চলের অন্যান্য বিষয়েও অব্যাহত থাকবে। আমেরিকার ব্যাপক ষড়যন্ত্র সত্বেও ইরান আঞ্চলিক পরাশক্তিতে পরিণত হয়েছে এবং এ অঞ্চলে ইরানের প্রভাব দিন দিন বেড়েই চলেছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতার আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা আলী আকবর বেলায়েতি বলেছেন, "এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, মধ্যপ্রাচ্যে শক্তির ভারসাম্য রক্ষায় এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইরান সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে। এমনকি ইরাক ও সিরিয়াকে ভেঙে টুকরা টুকরা করার যে ষড়যন্ত্র আমেরিকা করেছিল ইরান তাও ব্যর্থ করে দিয়েছে।" ইরাকের ভাইস প্রেসিডেন্ট উসামা আল নুজাইফাও এ ব্যাপারে জানিয়েছেন, বাগদাদে নিযুক্ত ইরানি রাষ্ট্রদূত ইরাজ মাসজেদির সঙ্গে সাক্ষাতে তিনি বলেছেন, ইরানের মতো বন্ধুপ্রতীম দেশের সঙ্গে সহযোগিতা ইরাকে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি দায়েশ সন্ত্রাসীদের মোকাবেলায় ইরানের সহযোগিতার প্রশংসা করেন। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আচরণে প্রমাণিত হয়েছে, তিনি মধ্যপ্রাচ্যের বাস্তবতা মেনে নিতে রাজি নন এবং এ অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক ক্রমেই জোরদার হওয়ায় তিনি খুবই ক্ষুব্ধ ও হতাশ। এ কারণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিষেধাজ্ঞা আরোপ করাসহ যে কোনো উপায়ে এ অঞ্চলে ইরানের প্রভাব খর্ব করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

No comments

Powered by Blogger.