চট্টগ্রামে আলোচনায় ‘কিশোর আড্ডা’ by ইব্রাহিম খলিল

চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র আদনান ইসফার খুনের পর কিশোর আড্ডা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। টনক নড়েছে পুলিশ প্রশাসনেরও। নগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ নিয়ে থানা পুলিশকে সজাগ থাকতে বলেছেন। নগর পুলিশের দক্ষিণ জোনের কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জসিম উদ্দিন কিশোর আড্ডা নিয়ে সজাগ থাকার নির্দেশনার কথা স্বীকার করে বলেন, ইতিমধ্যে আমরা কোতোয়ালি থানা এলাকায় ৩২টি কিশোর আড্ডাস্থল চিহ্নিত করেছি। পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বেআইনি কিছু দেখলেই পুলিশ ত্বরিত গতিতে অ্যাকশনে যাবে।
একই কথা জানান দক্ষিণ জোনের বাকলিয়া, চকবাজার ও সদর ঘাট থানা পুলিশ।
সদরঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মর্জিনা আক্তার বলেন, সদরঘাট থানা এলাকায় ২২টি কিশোর আড্ডাস্থল চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব আড্ডাস্থলের দিকে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। অপরাধে জড়িত এমন কোনো কিশোরের তথ্য পেলেই তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। নগর পুলিশের দক্ষিণ জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) এসএম মোস্তাইন হোসাইন বলেন, নগরীর চারটি থানায় প্রাথমিকভাবে কিশোরদের ৭৩টি আড্ডাস্থল চিহ্নিত করেছে পুলিশ। বাকি ১২ থানা এলাকায়ও কিশোরদের আড্ডাস্থল চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে কোতোয়ালি থানা এলাকায় কিশোরদের যে ৩২টি আড্ডার স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলো হলো- সিআরবি শিরিষতলা, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, এমএ আজিজ স্টেডিয়াম, আউটার স্টেডিয়াম, রেলওয়ে হাসপাতাল ও তাসফিয়া হোটেল, গোয়ালপাড়া শহীদ মিনারের সামনে, রেলওয়ে অফিসার্স ক্লাবের সামনে, পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন হোটেল হাবিবের সামনে, নিউমার্কেট মোড়, ইসপাহানী মোড়, এনায়েত বাজার মহিলা কলেজের সামনে, ডিসি হিল, মুসলিম ইনস্টিটিউটের সামনে, এনায়েতবাজার মোড় বৈশাখী হোটেলের সামনে, আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতাল মেইন গেটের ভেতরে ও পাহাড়ের ওপরে হাসপাতালের সামনে খোলা জায়গায়, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে, লালদিঘি, আন্দরকিল্লা ল-কলেজ মাঠ, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে, হাজারীগলি, পরীর পাহাড়, স্বাস্থ্য বিভাগের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের সামনে, সিনেমা প্যালেস বিপুল বাস কাউন্টারের সামনে, আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের সামনে সিঁড়িতে, রহমতগঞ্জ জেএমসেন হল, চেরাগীর মোড়, জামালখান লিচুবাগান, কুয়ার পাড়, জামালখান মোড়, কলাবাগিছা শুটকী পট্টি, ব্রিকফিল্ড রোড, আশারাফ আলি রোডে খালের পাশে নতুন মোড়, নজু মিয়া লেন মসজিদের সামনে, মা বিল্ডিং, বশিরউজ্জামান বিল্ডিং ও মেরিনার্স রোড। বাকলিয়া থানা এলাকায় কিশোর আড্ডাস্থলগুলো হচ্ছে, সিটি করপোরেশন স্টেডিয়ামের সামনে বাস্তুহারা, নুতন ফিশারীঘাটের মুখে, রাহাত্তারপুল ফুলকলি বিস্কুট ফ্যাক্টরির সামনে, বাকলিয়া সরকারি স্কুলের সামনে ও সূর্যের হাসি ক্লিনিকের পেছনে ও স্টার হোটেলের খালি জায়গায়।
সদরঘাট থানা এলাকায় কিশোরদের আড্ডাস্থলগুলো হচ্ছে-ইসলামীয়া কলেজ মোড় আজিম কমিউনিটি সেন্টারের নিচে, ইসলামীয়া কলেজ মোড়ে হোটেল সাতকানিয়ার সামনে, হোটেল শাহজাহানের সামনে, কালিবাড়ি মোড় মেমন হাসপাতালের নিচে, আইস ফ্যাক্টরি রোড মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পশ্চিম পাশে ট্রাক স্ট্যান্ডের সামনে, মরিচ্যাপাড়া মোড়, নিয়াজ হোটেলের পাশে সেবক কলোনির গলির মুখে, শুভপুর বালুর মাঠে, রাহাত সেন্টারের সামনে, কদমতলি মোড়, কমার্স কলেজের সামনে, কমার্স কলেজ রোড ইয়াছিন গলির মোড়, বাংলাবাজার জুটরেলী ঘাট, গ্যাস রেলী ঘাট, মাঝিরঘাট ট্রাকস্ট্যান্ড মাঝিরঘাট স্কুলের সামনে, সদরঘাট রোড বরিশাল ঘাট, সাহেবপাড়া কলাবাগান মাঠ, নেভাল-২ অভয়মিত্র ঘাট, দারোগারহাট বাই লেন ও দারোগার হাট ইস্টার্ন গার্মেন্টসের সামনে। চকবাজার থানা এলাকায় কিশোর আড্ডাস্থলগুলো হচ্ছে- চক মালঞ্চ হোটেলের সামনে, কেয়ারির দক্ষিণ পাশে প্যারেড মাঠের ফুটপাত, দেবপাহাড় মুখ, গণি বেকারির মোড়, জামালখান মোড়, শিল্পকলার সামনে এমএমআলি রোড, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রধান হোস্টেলের সামনে, কাপাসগোলা স্কুল এবং আশেপাশের এলাকা, সিরাজউদৌল্লাহ রোড এমপিসি কলেজের সামনে, মেজ্জান হাইলে আইয়্যু রেস্তোরাঁ, শান্তিনগর বগারবিল ও প্যারেড কর্নার।
আড্ডাকে কেন্দ্র করে সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটছে নগরীর চকবাজার থানা এলাকায়। সেখানে ১৪টি স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব স্থানগুলোর কোনোটিতে নুরুল মোস্তফা টিনু গ্রুপ আবার কোনোটিতে চন্দনপুরার আবদুর রউফের অনুসারীরা আড্ডা দিচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, চিহ্নিত ৭৩ আড্ডার স্থানের কয়েকটি ছাড়া বাকিগুলোতে মাদক ব্যবসা, মাদক সেবন, কিশোর ও উঠতি বয়সী যুবকদের নিয়ে বড় ভাইদের আড্ডা, স্কুল কলেজগামী ছাত্রীদের ইভটিজিং, রাজনৈতিক গ্রুপিং ও এলাকাভিত্তিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মারামারি আর খুনের ঘটনার সৃষ্টি হচ্ছে। স্কুলছাত্র আদনান খুনের ঘটনায় সরাসরি জড়িত সদ্য কৈশোর পার হওয়া মঈন আদালতে দেয়া জবানবন্দিতেও জানিয়েছে, গণি বেকারির মোড় ও পাশের একটি রেস্তোরাঁয় তারা নিয়মিত আড্ডা দিতো। আর আড্ডা থেকে উঠে গিয়ে আদনানকে খুন করা হয়েছে। নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মো. শহীদুল্লাহ জানান, অসময়ে স্কুল কলেজের ছাত্ররা আড্ডা দিচ্ছে। যারা আড্ডা দিচ্ছে তাদের পরিচয় কী কিংবা কোন ধরনের আড্ডা হচ্ছে তার খোঁজখবর নেয়া হবে। প্রয়োজনে সন্দেহজনক আড্ডাস্থলে অভিযান চালানো হবে। নগর দক্ষিণ জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহ মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, যেখানে উঠতি বয়সী ছেলেদের আড্ডা সেখানে নজরদারিতে রাখা হবে। প্রয়োজনে অভিযান চালানো হবে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু আড্ডাস্থলে অভিযান চালানো হয়েছে।
তিনি বলেন, শুধু আড্ডার জায়গাগুলো পর্যবক্ষণে রাখা হবে তা নয়। উঠতি বয়সী যুবকেরা বিকট শব্দে রাস্তায় মোটরসাইকেল চালায়। এসব বিষয়গুলোও নজরদারিতে আনা হবে। স্কুল ড্রেস পরা কাউকে আড্ডায় পাওয়া গেলে থানায় নিয়ে আসা হবে।

No comments

Powered by Blogger.