সংস্কৃতি আইনের চেয়ে শক্তিশালী by শাহ্ আব্দুল হান্নান

যারা সংস্কৃতির শক্তিশালী ভিত গড়তে চান তাদের কাছে অনুরোধ- সংস্কৃতি থেকে অশ্লীলতা, নারীর অপব্যবহার ও নারীর অমর্যাদাকর বিষয়গুলোকে দূর করতে হবে। সংস্কৃতিকে মানবতার সেবায় নিয়োগ করতে হবে সংস্কৃতি কী? এ সম্পর্কে বিতর্ক রয়েছে। সংস্কৃতি শুধু নাচ, গান বা কবিতাই নয়, সংস্কৃতি হলো- মানুষের গোটা জীবনাচার। মোটামুটিভ াবে আমরা সংস্কৃতি সম্পর্কে বলতে পারি, এ জীবনাচার হলো- মানুষ যা করে, তার পরিবার যা করে, অর্থাৎ রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিকতা প্রভৃতিতে যে আচার বা জীবনপদ্ধতি মেনে চলা হয় তাই সংস্কৃতি।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের মুসলিম জনগণ অবশ্যই ইসলামি সংস্কৃতি মেনে চলবে। তারা মুসলমান। তারা এ দেশে স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করেছে। এখানে কারোর উপর ইসলাম চাপিয়ে দেয়া হয়নি। ইসলাম প্রচারের জন্য জোরজবরদস্তি করা হয়নি। যেহেতু এ দেশের জনগণ স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করেছে তাই ইসলাম ও ঈমানের দাবি এটি যে, তাদের উপর অনৈসলামিক কিছু চাপিয়ে দেয়া যাবে না। ইসলামি সংস্কৃতি এখানে প্রতিফলিত হতে হবে। ইসলামবিরোধী কোনো কিছু গ্রহণ করার দাবি করাও অন্যায়। কেউ এরকম দাবিও করতে পারে না। তা হবে অযৌক্তিক।
তৃতীয়ত, বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে বিভিন্ন গোষ্ঠী থাকতে পারে। আমাদের মধ্যে মুসলিম ও অমুসলিম জনগোষ্ঠী একত্রে বসবাস করে। অমুসলিম জনগণ তাদের সংস্কৃতি অনুসরণ করবে, আর মুসলিম জনগণ তাদের মুসলিম সংস্কৃতি অনুসরণ করবে। মুসলমানরা সেটুকু শুধু তাদের আচার হিসেবে, জীবন পদ্ধতি হিসেবে গ্রহণ করবে যেটুকু ইসলামের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
চতুর্থত, বাংলাদেশের মুসলিম সংস্কৃতিতে আমরা মুসলিম জনগণ যারা মুসলিম নন তাদের সংস্কৃতিকে গ্রহণ করতে পারি না। সংস্কৃতি আইনের চেয়ে গভীর। আইনের মাধ্যমে মানুষের ভেতর সহজে প্রবেশ করা যায় না। কিন্তু সংস্কৃতির মাধ্যমে মানুষের ভেতর অনেক গভীরভাবে প্রবেশ করা যায়। আইনকে সহজে পরিবর্তন করা যায়। কিন্তু সংস্কৃতিকে সহজে পরিবর্তন করা যায় না। আমরা চাই, ইসলামি মূল্যবোধ সংস্কৃতির অংশে পরিণত হবে। ইসলামের মূল্যবোধ এবং ধারণাকে আমাদের সংস্কৃতির অংশ করে রাখতে হবে। তাহলে আমাদের সংস্কৃতিতে ইসলামের ব্যানারে এখানে কখনো অপব্যাখ্যা করা সহজ হবে না। বরং অপসংস্কৃতিকে প্রতিরোধ করা সহজ হবে। যারা সংস্কৃতির শক্তিশালী ভিত গড়তে চান তাদের কাছে অনুরোধ- সংস্কৃতি থেকে অশ্লীলতা, নারীর অপব্যবহার ও নারীর অমর্যাদাকর বিষয়গুলোকে দূর করতে হবে। সংস্কৃতিকে মানবতার সেবায় নিয়োগ করতে হবে। আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে, মানবকল্যাণী সংস্কৃতির প্রতি। দেখতে হবে তা মানুষের চরিত্রকে উন্নত করে, না ধ্বংস করে। কাজেই আমরা বলব, গান হোক, কবিতা হোক, সাহিত্য হোক- সবকিছুকেই আমাদের পজেটিভ করতে হবে, নেগেটিভ কোনো কিছু নয়।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার

No comments

Powered by Blogger.