সুইডেনে বসে কিলার গ্রুপ চালায় ছাত্রদল নেতা

বিদেশে বসে কিলার গ্রুপ দিয়ে একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে চলেছে প্রভাবশালী এক ছাত্রদল নেতা। রাজনৈতিক প্রতিকূল অবস্থার কারণে দুই বছর আগে সুইডেনে পালিয়ে গেলেও তার নিয়ন্ত্রণেই পরিচালিত হচ্ছে রাজধানীর একাধিক কিলার গ্রুপ। ওই গ্রুপগুলোই ঢাকায় ভাড়ায় হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে। বাড্ডার ফোর মার্ডার, বনানীর ব্যবসায়ী হত্যা, একই দিনে কিলিং মিশন থেকে বের হয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আরেক সন্ত্রাসী বাপ্পীকে গুলি করাসহ একাধিক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তারা। দেশ থেকেই ছাত্রদল নেতার কাছে হত্যার সিদ্ধান্ত যায়। আর বিদেশে বসে কিলার গ্রুপ দিয়ে সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করায় সে। সম্প্রতি বনানীতে এস মুন্সি ওভারসিজ রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক সিদ্দিক হোসাইনকে গুলি করে হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী মো. হেলাল উদ্দিনকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে ওই ছাত্রদল নেতা সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ২০১৩-১৪ সালে কর্মসূচির নামে বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও পোড়া কর্মকাণ্ডের সময় রাজধানীতে সক্রিয় ছিল সুইডেনে পলাতক ওই ছাত্রনেতা। একাধিক মামলায় গ্রেফতারও হয়েছিল সে। জামিনে বেরিয়ে দুই বছর আগে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় সে। পালানোর আগে ঢাকার মোহাম্মদপুর ও মিরপুর এলাকা নিয়ন্ত্রণ করত সে। আর এখন বিদেশে বসেই মোটা অঙ্কের আর্থিক চুক্তিতে একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে চলেছে।
তার নিয়ন্ত্রিত একাধিক কিলার গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে রয়েছে- হেলাল, ডানু বাবু, শান্ত, খালেদ, রিভলবার নুরি, জামাই রফিক, আবদুল মালেক, সাদ্দাম ও পিচ্চি আলামিন। শুক্রবার ভোররাতে বাড্ডার আফতাবনগর এলাকায় ডিবির সঙ্গে ‘বন্ধুকযুদ্ধে’ নিহত হয় সাদ্দাম ও আলামিন। এ প্রসঙ্গে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন যুগান্তরকে বলেন, ‘কিলার গ্রুপগুলো শনাক্ত হয়েছে। গ্রেফতার হেলালকে জিজ্ঞাসাবাদে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’ মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ‘সুইডেনে পলাতক ছাত্রনেতার বন্ধু হল কিলার হেলাল উদ্দিন। বিদেশে বসে হত্যার নির্দেশ দেয় ওই ছাত্রদল নেতা। আর হেলাল দেশে বসে তা বাস্তবায়ন করে। বিদেশে বসে বন্ধু হেলালকে দিয়ে কিলার গ্রুপ চালায় সে। কিলার গ্রুপগুলো হত্যা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অস্ত্র বিক্রি ও ভাড়াসহ নানা অপকর্মে জড়িত। আর এসব অপকর্মের টাকায় বিদেশে বসে বিলাসী জীবনযাপন করছে ওই ছাত্রদল নেতা। আর সুইডেনে বসেই বনানীর ব্যবসায়ী হত্যার নির্দেশনা দেয় সে।
কিলার গ্রুপের যত অপকর্ম : বনানীতে ব্যবসায়ী সিদ্দিক হত্যার আগে ২০১৬ সালের বাড্ডা এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মাহবুবুর রহমান গামাসহ (ফোর মার্ডার) চারজনকে গুলি করে হত্যা করে সুইডেন প্রবাসী ছাত্রদল নেতার নিয়ন্ত্রিত কিলার গ্রুপ। ২০০৪ সালে মহাখালীর পানসি হোটেলের সামনে ডাবল মার্ডার করে হেলাল উদ্দিন। রাজধানীতে আবদুল মালেক নামের আরেক ব্যক্তিকে হত্যার সঙ্গে জড়িত হেলাল ও জামাই রফিক। সম্প্রতি হত্যার হুমকি দিয়ে একটি এনজিও থেকে এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে এরা। বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের কাছে অস্ত্র বিক্রি ও ভাড়া দেয় এই কিলাররা। সম্প্রতি আরেকজন সন্ত্রাসীর কাছে ২০ হাজার টাকায় একটি অস্ত্র বিক্রি করেছে তারা। ডিবি জানায়, হেলালকে গ্রেফতারের পর বেশ কয়েকটি হত্যার চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। সুইডেনে পলাতক ছাত্রদল নেতার নাম পরিচয়ও পাওয়া গেছে। তাকে গ্রেফতার করা গেলে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে।
ঢাকার উপকণ্ঠে বসবাস ভাড়াটে কিলারদের : রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, কেরানীগঞ্জসহ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বসবাস করে কিলার গ্রুপের সদস্যরা। চুক্তির পর হত্যার নির্দেশনা পেয়ে এরা অন্তত এক সপ্তাহ ধরে রেকি করে। এরপর তারা ওই ছাত্রদল নেতাকে জানায় কাজটি করা যাবে কি, যাবে না। যদি করা সম্ভব হয় তাহলে ঠিক হয় কিলিং মিশনের সময়ক্ষণ। এরপর ঢাকার প্রবেশ করে তারা মিশন শেষ করে আবার ফিরে যায় ঢাকার আশপাশ এলাকায়।

No comments

Powered by Blogger.