উড়োজাহাজে ৬ ঘণ্টা আটকে ছিলেন যাত্রীরা

নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেড় ঘণ্টা বেশি অতিবাহিত হওয়ার কারণ দেখিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কুয়ালালামপুরগামী একটি ফ্লাইট চালাতে অনীহা প্রকাশ করেছেন তানিয়া নামে একজন পাইলট। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর ওই পাইলটকে অনুরোধ করা হয় ফ্লাইটটি নিয়ে যেতে। কিন্তু তিনি ‘ফ্লাইং আওয়ার’ অতিরিক্ত হয়ে গেছে জানিয়ে ফ্লাইট চালাবেন না বলে জানান। এর জেরেই ‘অনবোর্ড’ হওয়া প্রায় পৌনে দুই শ’ যাত্রীকে উড়োজাহাজে সাড়ে ৬ ঘণ্টা বসে থাকতে হয়েছে। একপর্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন যাত্রীরা। কোনো কোনো যাত্রী উড়োজাহাজ থেকে নেমেও পড়েন। অগত্যা অন্য পাইলট এসে ফ্লাইট নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্য হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের (বিজি-০৮৬) ঢাকা-কুয়ালালামপুর-ঢাকাগামী বোয়িং-৭৩৭ ফ্লাইটে এ ঘটনা ঘটে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা ৩৭ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাইলট তানিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে শুধু বলেন, ‘ডিউটি আওয়ার এক্সিট হয়ে যাওয়ায় আমি ফ্লাইট চালাতে অপারগতা করেছি’। এর আগে শুক্রবার বিকেলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা এ বিষয়টি অবহিত রয়েছেন জানিয়ে নয়া দিগন্তকে বলেন, আসলে কী কারণে পাইলট ফ্লাইট চালাতে অনীহা প্রকাশ করেন, তার বিস্তারিত না জেনে আমি মন্তব্য করতে পারছি না। আগামী রোববার অফিস খোলার পর বিষয়টি জেনে তার পর জানাতে পারব। ওই ফ্লাইটের আলতাফ নামে একজন যাত্রী গতকাল এ প্রতিবেদককে বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কুয়ালালামপুরগামী বোয়িং-৭৩৭ ফ্লাইটটি বৃহস্পতিবার (বাংলাদেশ সময়) সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের দেড় ঘণ্টা পর অর্থাৎ রাত পৌনে ৯টার দিকে ১৫৯ জন যাত্রীকে উড়োজাহাজে তোলা (অনবোর্ড) হয়। দেড় ঘণ্টা বিলম্ব হওয়ার কারণ দেখিয়ে পাইলট ওই ফ্লাইট নিয়ে যেতে অনীহা প্রকাশ করেন। পরে বিমানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি জানানো হয়। এ দিকে ফ্লাইট বিলম্বের কারণে উড়োজাহাজে বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে পড়েন যাত্রীরা। কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ক্ষুব্ধ যাত্রীদের শান্ত রাখতে কেবিন ক্রুরা রাতের খাবার বিমানের ভেতরে পরিবেশন করেন। এভাবে প্রায় ৭ ঘণ্টা বিলম্বের পর রাত দেড়টার দিকে আমিন নামের অন্য একজন পাইলট এসে ওই ফ্লাইট নিয়ে কুয়ালালামপুরের উদ্দেশ ঢাকা ত্যাগ করেন।
নিয়মানুযায়ী একজন পাইলটের ফ্লাইং আওয়ার সর্বোচ্চ সাড়ে ১১ ঘণ্টা। কিন্তু সন্ধ্যা সোয়া ৭টা থেকে বিলম্ব সময় ধরে কুয়ালালামপুর যাওয়া এবং একই ফ্লাইট নিয়ে আবার ঢাকায় ফিরে আসা পর্যন্ত ‘ফ্লাইং আওয়ার’ সময় অতিরিক্ত হয়ে যায়। এ কারণেই ওই নারী পাইলট ফ্লাইট চালাতে অনীহা প্রকাশ করেন বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। গতকাল শুক্রবার রাতে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইউসুফের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে এয়ারপোর্টে কোন এয়ারলাইন্সের কোন পাইলট ফ্লাইট চালাতে অস্বীকার করেছেন, এমন তথ্য তার কাছে নেই। তিনি বলেন, যদি ৫ ঘণ্টার বেশি কোনো কারণ ছাড়াই ফ্লাইট ডিলে হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে যাত্রীদের ব্যাখ্যা দেয়ার নিয়ম আছে। আর এর জন্য যাত্রীকে খাওয়া দেয়া ছাড়াও পলিসি অনুযায়ী অতিরিক্ত অনারিয়ামও দেয়ার নিয়ম। আবার যাত্রী যদি মনে করেন একই সময়ে তিনি অল্টারনেটিভ অন্য কোনো এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে যাবেন, তাহলে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ যাত্রীর চাহিদা অনুযায়ী সেটি দিতে বাধ্য থাকবে।

No comments

Powered by Blogger.