অস্ত্রসহ বিমানবন্দরে আটক, তারপর কী হলো?

ঘোষণাবিহীন পিস্তল ও ম্যাগাজিন-ভর্তি গুলিসহ হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে যাত্রী আটকের ঘটনায় কোনো আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ না করে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, আটক যাত্রী প্রভাবশালী হওয়ার কারণে পুলিশকে ম্যানেজ করে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়া হয়। সূত্র জানায়, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে হংকংগামী যাত্রী আজমত রহমান (পাসপোর্ট নং-বিএম-০০৩৬৩৯১) তিন নম্বর গেটের স্ক্যানিং মেশিন অতিক্রম করে বোর্ডিং ব্রিজ ৬ দিয়ে পার হওয়ার সময় নিরাপত্তা তল্লাশির মুখে পড়েন। এ সময় তার সাথে থাকা ল্যাপটপ ব্যাগ স্ক্যানিং করে একটি ওয়ালথার পিস্তল ও ৮ রাউন্ড গুলি দেখতে পান নিরাপত্তাকর্মীরা। সাথে সাথে বিষয়টি বিমানবন্দরের নিরাপত্তা শাখাকে জানানো হলে তোলপাড় শুরু হয়। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যসহ সংশ্লিষ্টরা ঘটনাস্থলে হাজির হন। এরপর বিমানবন্দরের উপ-নিরাপত্তা কর্মকর্তা (ডিএসও) ওই যাত্রীকে আটক করেন। এ ঘটনায় ওই রাতেই বিমানবন্দর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। থানা পুলিশ সেটিকে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হিসেবে গ্রহণ করে (নং-৭৫৪, তাং ১৬-০২-১৭ইং)। পুলিশ ওই যাত্রীকে আটক দেখায়। এরপর তাকে ছাড়ানোসহ ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য রাতজুড়ে বিভিন্ন মহলে দেনদরবার শুরু হয়। পরদিন ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রচার হলেও পুলিশ তদবিরের মুখে যাত্রীকে ছেড়ে দেয়। বিমানবন্দরে নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাধারণত উড়োজাহাজে ঘোষণা ছাড়া কোনো আগ্নেয়াস্ত্র বহন করা নিষিদ্ধ এবং আইনত অপরাধ। এ ক্ষেত্রে কোনো যাত্রী তার লাইসেন্সকৃত অস্ত্র বহন করতে হলে তাকে আগেই কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেয়ার নিয়ম রয়েছে; কিন্তু এ ক্ষেত্রে ওই যাত্রী কোনো নিয়ম ফলো করেননি, যা তিনি অপরাধ করেছেন। সূত্র জানায়, অস্ত্রসহ আটক ওই যাত্রীর পিতা ফারমার্স ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান। আর যাত্রী আজমত রহমান ওই ব্যাংকের পরিচালক। পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলে জোর তদবির করে থানা পুলিশের সাথে সমঝোতা করে আটক যাত্রীকে অস্ত্র-গুলিসহ ছাড়িয়ে আনা হয়। যাত্রীকে জিম্মায় ছেড়ে দেয়ার সময় থানায় দায়িত্বে ছিলেন এসআই সুকান্ত সাহা। তিনি ছেড়ে দেয়ার সময় থানার জিডি বইয়ে (নং ৭৬৯) উল্লেখ করেন, যাত্রী আজমত রহমানকে তার পিতার জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হলো। তিনি জিডিতে আরো উল্লেখ করেন, পুলিশের উত্তরা জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিধান ত্রিপুরার মৌখিক আদেশে আটক যাত্রীকে ছেড়ে দেয়া হয়। এ বিষয়ে এসআই সুকান্ত সাহা জানান, আটক যাত্রীর অস্ত্র ও গুলির লাইসেন্স ছিল। এই অস্ত্রগুলো সাথে রাখা তার মৌলিক অধিকার। ভুলবশত সাথে করে তিনি এগুলো নিয়ে বিদেশ যাচ্ছিলেন। অনৈতিক কিছুই ছিল না। এ কারণে আটক যাত্রীকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, বিমানবন্দরে এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে।

No comments

Powered by Blogger.