নিজের ঘরই যখন টাঁকশাল!

ঘরে বসে টাকা কীভাবে তৈরি করতে হয়, সেই কৌশল খুব ভালোই রপ্ত করেছেন তিনি। এক দিন-দুদিন নয়, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে টাকা তৈরি করে আসছিলেন। তবে যে নোট তৈরি করতেন, সেগুলো আসল নয়, জাল নোট। নাম তাঁর লিয়াকত আলী। জাল নোট তৈরি করতে গিয়ে একাধিকবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারও হন তিনি। তবু জাল নোট তৈরির নেশা কাটাতে পারেননি তিনি। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে লিয়াকত ও তাঁর এক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। গোপন সংবাদ পেয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা উত্তরপাড়া এলাকার একটি বাড়ি থেকে প্রথমে লিয়াকতকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-৩-এর একটি দল। এ সময় তাঁর কাছ থেকে ভারতীয় ১০ লাখ জাল রুপি, রুপি তৈরির বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম ও রং জব্দ করা হয়। পরে লিয়াকতের কাছ থেকে খবর পেয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আরেকটি বাড়ি থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এ কথা জানান র‍্যাব-৩-এর অধিনায়ক লে কর্নেল ইমরানুল হাসান। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ৩৫ বছর বয়সী লিয়াকত আলী জাল নোট তৈরির কৌশল শেখেন ছগির মাস্টার নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে। তাঁর গুরু ছগির মাস্টার ১৯৯৬ সালে শেয়ারবাজার ধসের পর আর্থিকভাবে ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হন। এরপর থেকে ছগির মাস্টারের সহযোগী ছিলেন লিয়াকত।
গুরুর কাছ থেকে দীক্ষা নিয়ে ১০ বছর ধরে তিনি নিজেই জাল নোট তৈরি করে আসছিলেন। লিয়াকত যে বাসায় ভাড়া থাকতেন, সেখানেই এই নোট তৈরি করতেন। প্রথম দিকে বাংলাদেশের জাল টাকা তৈরি করতেন তিনি। তবে জাল টাকার নোট তৈরি হওয়ায় ধরা পড়ার শঙ্কা থাকে বেশি। তাই ভারতীয় জাল রুপির নোট তৈরিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন লিয়াকত। তিনি ঘরের ভেতর ভারতের নতুন ২০০০ ও ৫০০ রুপি নোট তৈরি করতেন খুব নিখুঁতভাবে। জাল নোট তৈরির জন্য লিয়াকতকে বিদেশি উন্নত মানের রঙিন কালি সরবরাহ করতেন জাহাঙ্গীর। লিয়াকত জাল রুপি তৈরি করে প্রতি মাসে প্রায় তিন লাখ টাকা আয় করতেন জানিয়ে লে. কর্নেল ইমরানুল হাসান বলেন, লিয়াকত প্রতি মাসে ৫০ লাখ থেকে ৬০ লাখ রুপির জাল নোট তৈরি করতেন। এক লাখ রুপির জাল নোট লিয়াকত বাংলাদেশের মুদ্রায় ১২ হাজার টাকায় তাঁর সরবরাহকারীদের কাছ বিক্রি করতেন। তাঁর এই সরবরাহকারীরা এসব নোট আবার বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জের কাছে বিক্রি করতেন। অনেকে আবার সীমান্তবর্তী এলাকায় সরবরাহ করতেন। জাল নোট তৈরির অপরাধে লিয়াকতের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা রয়েছে। লিয়াকতের আরও কয়েকজন সহযোগীর নাম পাওয়া গেছে। তা ছাড়া কোন কোন মানি এক্সচেঞ্জে রুপির জাল নোট সরবরাহ করতেন লিয়াকত, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে বলে জানান র‍্যাব-৩-এর অধিনায়ক।

No comments

Powered by Blogger.