রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে আরও চুক্তি হচ্ছে

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে আরও একটি চুক্তি সই হচ্ছে। এই চুক্তিতে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর পদ্ধতিগত খুঁটিনাটি নানা দিক উল্লেখ থাকবে। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ নির্ধারণে এই চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করতে আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দুটি পৃথক বৈঠক হবে। উভয় বৈঠকেই সভাপতিত্ব করবেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক। চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করার পর তা মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির অধীনে আগামী ২৩ জানুয়ারির মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। উভয় দেশ আশা করছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নির্ধারিত সময়েই শুরু হবে। দমন-পীড়নের শিকার হয়ে বিগত চার মাসে সাড়ে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। তার আগে থেকেই চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। নিষ্ঠুর নিপীড়নের ভয়াবহ চিত্র আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর গোটা বিশ্বের বিবেকবান মানুষ স্তম্ভিত হয়ে পড়েন। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয় মিয়ানমার। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে ২৩ নভেম্বর মিয়ানমারের প্রশাসনিক রাজধানী নেপিদোতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি অ্যারেঞ্জমেন্ট সই হয়। তার আলোকে দু’দেশের পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে ১৫ জন করে ৩০ সদস্যবিশিষ্ট জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়। এই গ্রুপ বিভিন্ন সময় বৈঠকে বসে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া তদারকি করবে। সম্প্রতি ঢাকায় দু’দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের কার্যপরিধি সই হয়। সেই ধারাবাহিকতায় দু’দেশের মধ্যে ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্টের লক্ষ্যে আরও একটি চুক্তি সই হবে। তারই খসড়া বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আজ চূড়ান্ত করা হবে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় এ দুটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সকালে রোহিঙ্গা সংক্রান্ত জাতীয় টাস্কফোর্সের (এনটিএফ) প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এ বৈঠকে বর্তমান রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে। পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দফতরগুলোর প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। এই বৈঠক শেষ হলে আরও একটি বৈঠক হবে যেখানে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বাংলাদেশ অংশের কর্মকর্তারা যোগ দেবেন। তারা নতুন চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বুধবার যুগান্তরকে বলেছেন, নতুন চুক্তিতে কীভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কাজ চলবে তার বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে। অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিয়ে যেতে কয়টি গাড়ি লাগবে। তাদের প্রত্যাবাসনে কয়টি ক্যাম্প কোথায় বসানো হবে। রোহিঙ্গাদের যাচাই প্রক্রিয়াসহ খুঁটিনাটি সবই উল্লেখ থাকবে। তিনি আরও জানান, ১৯৯২ সালে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর সময়েও এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছিল। অনেকটা সেই আদলেই এবারও নতুন চুক্তি হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.