গোলযোগ হলে দায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর

কুমিল্লা সিটিতে কেন্দ্র দখলের ঘটনায় ক্ষুব্ধ ইসি * ১ প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও ২ কেন্দ্রের পুলিশ ইনচার্জের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে দুই কেন্দ্র দখল, গোলাযোগ ও ভোটগ্রহণ বন্ধ হওয়ার ঘটনায় একজন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও পুলিশ ইনচার্জের দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পেয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ওই ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর ক্ষুব্ধ কমিশন। ওই নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনের নির্বাচনগুলোতে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও আনসার বাহিনীর সদস্যদের দায়িত্ব পালনে আরও তৎপর এবং কঠোর হতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার পুলিশের আইজি এবং বিজিবি, র‌্যাব ও আনসার-ভিডিপির মহাপরিচালককে চিঠি দিয়ে এ নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন। চিঠিতে ভোট কেন্দ্রে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দমনে ব্যর্থ হলে দায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিতে হবে বলে হুশিয়ার করে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি অপর দুই চিঠিতে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে বন্ধ ঘোষিত দুটি কেন্দ্রের পুলিশ ইনচার্জ এবং একটি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। জানতে চাইলে ইসি সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দুটি কেন্দ্রে গোলাযোগের ঘটনায় শিক্ষা নিয়ে সামনের নির্বাচনগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও তৎপর হতে বলা হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে নির্বাচন কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশংসা করা হবে। অপরদিকে নির্বাচনে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ ইসি সূত্রে জানা গেছে, ৩০ মার্চ অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দুটি কেন্দ্র দখল ও এ ঘটনায় ভোটগ্রহণ বন্ধের বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেসুর রহমানের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়। সম্প্রতি ওই কমিটি ইসিতে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। কমিটি কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও গাফলতির প্রমাণ পেয়েছে। এ কারণে সামনের নির্বাচনগুলোতে এসব ঘটনা এড়াতে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও আনসার সদস্যদের আরও তৎপর এবং কঠোর হতে নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দিয়েছে ইসি। ইসির নির্বাচন পরিচালনা-২ শাখার উপসচিব মো. নুরুজ্জামান তালুকদার স্বাক্ষরিত চিঠিতে তদন্ত কমিটির বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ‘দুটি ভোট কেন্দ্রের বিশৃঙ্খল অবস্থা নিরসনে সংশ্লিষ্ট এলাকায় মোতায়েনকৃত বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশের মোবাইল এবং স্ট্রাইকিং ফোর্সের টিম প্রধানরা ব্যর্থতার দায়ভার এড়াতে পারেন না। তাই আগামীতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের দায়িত্ব পালন করতে হবে।
নির্বাচনের দুই-তিন দিন আগে থেকে নির্বাচনের পরের দিন পর্যন্ত অবৈধ অস্ত্র, বিস্ফোরক দ্রব্যাদি বহন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরও কঠোর এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কোনো ভোট কেন্দ্রে গোলাযোগ দেখা দিলে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ডাকার সঙ্গে সঙ্গে ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিতে হবে।’ কুমিল্লা নির্বাচনে গোলাযোগের ঘটনায় শাস্তি : কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের দুই কেন্দ্রের পুলিশ ইনচার্জ ও এক কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চিঠি দিয়েছে কমিশন। মঙ্গলবার সংশ্লিষ্টদের কাছে ওই চিঠি পাঠানো হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, কুমিল্লা সরকারি সিটি কলেজ ও চৌয়ারা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা ভোট কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার ঘটনায় দায়িত্বরত পুলিশের ভোট কেন্দ্র ইনচার্জের দায়িত্ব পালনে অবহেলার বিষয়টি স্পষ্ট প্রমাণ পেয়েছে এ সংক্রান্ত তদন্ত কমিটি। এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে বিশেষ বিধান আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে ইসিকে জানাতে হবে। তবে ওই চিঠিতে দায়িত্ব পালনকারী দুই পুলিশ কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করা হয়নি। এদিকে চৌয়ারা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা ভোট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. জিলানীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ কর্মকর্তা কুমিল্লা কৃষি ব্যাংকের মনোহরপুর প্রধান শাখার সিনিয়র অফিসার। তার বিরুদ্ধেও দায়িত্ব পালনে অবহেলার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি।

No comments

Powered by Blogger.