বস্তিতে লিভ টুগেদার : পূজাই জালালের খুনি

বিয়ে না করেই পাঁচ বছরের কম বয়সী তরুণ শাহজালাল ওরফে জালালকে নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে একসঙ্গে বাস করছিলেন ২৫ বছরের তরুণী তানিয়া ওরফে পূজা। রাজধানীর ওয়ারীর কাপ্তানবাজার বস্তিতে বেশ ভালোই চলছি তাদের ব্যতিক্রমী সংসার জীবন। গত ৩০ জুন দুপুরে হঠাৎ সব কিছু এলোমেলো হয়ে যায়। পূজার সঙ্গ না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে জালাল। দুজনের মধ্যে ঝগড়ার এক পর্যায়ে পূজা আম কাটার ছুরি এবং জালাল কাঁচি নিয়ে একে অপরকে ভয় দেখায়। আর এটি কাল হয় জালালের। বাদানুবাদ একসময় ধস্তাধস্তিতে রূপ নেয়। এরই মধ্যে জালালের বুকে বিদ্ধ হয় পূজার হাতে থাকা ধারালো ছুরি। ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হওয়া দেখে ঘাবড়ে যান পূজা। ছুটে আসে বস্তির লোকজন এবং চাঁদা তুলে রিকশা ডেকে জালালকে হাসপাতালে পাঠানো হয়, সঙ্গে পাঠানো হয় পূজাকে। জালালকে মৃত ঘোষণা করার পর শুরু হয় বিভ্রান্তির পালা। নিজে বাঁচতে পূজা পুলিশকে একেক সময় একেক রকম তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত পূজা সবকিছু পুলিশকে খুলে বলতে বাধ্য হন এবং মঙ্গলবার আদালতে স্বীকরোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন। পরে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদবীর ইয়াসীন এহসান চৌধুরী পূজাকে কারাগারে পাঠান। কথা হয় ওয়ারী থানার ওসি জেহাদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, হাসপাতালে পূজা যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে সন্দেহের সুযোগ ছিল না। দৃশ্যত হত্যাকাণ্ডটি ছিল ক্লু-লেস। কিন্তু ওয়ারী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ সেলিম মিয়া, পরিদর্শক (অপারেশন) মাহাবুব আলম এবং তদন্ত কর্মকর্তা হারুন-অর-রশিদের চেষ্টায় দ্রুতই রহস্য উদঘাটিত হয়। সূত্র মতে, পূজা হাসপাতালে যে ঠিকানা দেন সেটাই ছিল ভুল। পূজা প্রথমবার পুলিশকে জানান, ধোলাইখাল পানির ট্যাংকির গলিতে (ওই এলাকায় পানির ট্যাংকির গলি বলতে কিছু নেই) জালালকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে তিনি তাকে হাসপাতালে আনার ব্যবস্থা করেন। কে বা কারা তাকে ছুরি মেরেছে সে সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার জন্য গেলে পূজা পুলিশকে নিয়ে যান গেন্ডারিয়ার কাঠেরপুল এলাকায়। সেখানে একটি স্থান দেখিয়ে বলেন, এখানেই পড়েছিলেন জালাল। পরে পূজা ঘটনাস্থল হিসেবে একবার সূত্রাপুর এবং আরেকবার ওয়ারীর টিপু সুলতান রোডের কথা উল্লেখ করেন। ফলে কোথায় মামলা হবে তা নিয়েও শুরু হয় বিভ্রান্তি। মামলা করার জন্য জালালের কোনো স্বজনকে না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে মামলা হয় ওয়ারী থানায়। বাদী হন থানার এসআই হাবিবুর রহমান। কীভাবে এই দম্পতির পরিচয় পেলেন?
জানতে চাইলে ওয়ারী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ সেলিম মিয়া জানান, রহস্য উদ্ঘাটনে জালাল এবং পূজার ছবি ওয়ারীর সব টোকাইকে দেখানো হয়। রাকিব নামের একজন টোকাই তাদের চিনতে পারে এবং জালালের বাবা-মা মহানগর নাট্যমঞ্চে থাকেন বলে জানায়। পরে তাকে নিয়ে নাট্যমঞ্চে যাই। জানতে পারি তারা আসলে জালালের পালিত মা-বাবা। জালালের আসল মা-বাবা থাকেন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে। খবর পেয়ে মঙ্গলবার আড়াইহাজারে জালালের আসল মা-বাবা, ভাই, বোন এবং দুলাভাই ঢাকায় ছুটে আসেন। তাদের দেয়া তথ্যে কাপ্তানবাজার ডাস্টবিনের পাশে পলিথিনের ঘরের খোঁজ পাই। পরে আশপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদে পূজা ও জালালের অস্থায়ী থাকার জায়গা খুঁজে পাই। পুলিশের নজরদারিতে থাকা পূজাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে সে পুলিশের কাছে সব খুলে বলে। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে পূজা বলেন, ‘জালালকে খুন করার পরিকল্পনা ছিল না। আমাকে যেন কাঁচি দিয়ে আঘাত না করে সে জন্য আম কাটার ছুরি দিয়ে তাকে ভয় দেখাই। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে ছুরিটি জালালের বুকে বিদ্ধ হয়। জালাল যে মারা যাবে তা বুঝতে পারিনি। তাকে বাঁচানোর অনেক চেষ্টা করেছি। জালাল মারা যাওয়ার পর ভয় পেয়ে যাই। তাই পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছি।’ তিনি বলেন, ‘জালাল আমাকে বিয়ে না করলেও অতিরিক্ত ব্যবহার করত। শুক্রবার দুপুরে আমার সঙ্গে থাকতে চেয়েছিল। আমি নিষেধ করায় সে ক্ষুব্ধ হয়ে যায়।’ পুলিশ জানায়, পূজার আসল নাম হামিদা। সে নিজেকে পুুলিশের কাছে হিন্দু দাবি করলেও আসলে মুসলমান। গ্রামের বাড়ি বরগুনার বেতাগীতে।

No comments

Powered by Blogger.