ঈদযাত্রায় দুর্ঘটনায় নিহত ৩১১ জন, সড়কে নিহত ২৭৪ আহত ৮৪৮

এবারের ঈদুল ফিতরের আগে-পরে ১৩ দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক, নৌ ও রেলপথে ২৪০টি দুর্ঘটনায় ৩১১ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৮৬২ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে সড়কপথে। সড়কে ২০৫টি দুর্ঘটনায় ২৭৪ জন নিহত ও ৮৪৮ জন আহত হয়েছেন। গত ১৯ জুুন থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী। এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সড়কপথের অনেক উন্নয়ন হলেও গাড়ির গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। এ কারণে সড়কে দুর্ঘটনার সংখ্যা বেশি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সড়কমন্ত্রী এবার ঈদে ৪০ জন নিহতের তথ্য দিয়েছেন যা উনার নিজস্ব তথ্য-উপাত্ত। কিন্তু আমরা ঈদযাত্রার শুরুর দিন ১৯ জুন থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত মোট ১৩ দিন দেশের ২২টি জাতীয় দৈনিক, ৬টি আঞ্চলিক পত্রিকা ও ১০টি অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ওপর মনিটরিং করে হতাহতের এ প্রতিবেদন তৈরি করেছি।
প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, পথচারী ৩৬ শতাংশ, মুখোমুখি সংঘর্ষে ৩৮ শতাংশ, ওভারটেকিংয়ে ১৩ শতাংশ ও অন্যান্য কারণে ১৩ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনায় মোট যানবাহনের ৩৮ শতাংশ বাস, ৩৪ শতাংশ ট্রাক ও পিকআপ, ২৪ শতাংশ নছিমন-করিমন, ভটভটি-ইজিবাইক, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল এবং ৪ শতাংশ অন্যান্য যানবাহন জড়িত ছিল। প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার দশ কারণ চিহ্নিত করা হয়। এগুলো হল : বেশি গতিতে যানবাহন চালানো, অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, পণ্যবাহী যানবাহনের যাত্রী বহন, মহাসড়কে অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, নসিমন-করিমন চলাচল, রাস্তার ওপর হাটবাজার ও ফুটপাত দখল, ফুটপাত না থাকা, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, বিরতিহীন যানবাহন চালানো ও ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট। প্রতিবেদনে বলা হয়, ঈদকেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। গত চার বছর ধরে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে আসছেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এবারের ঈদে রেশনিং পদ্ধতিতে ছুটি থাকায় ঈদযাত্রা খানিকটা স্বস্তিদায়ক হলেও সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে। বেড়েছে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও। ঈদযাত্রায় দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক, রেল ও নৌপথে ২৪০টি দুর্ঘটনায় ৩১১ জন যাত্রী নিহত হন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে সড়ক-মহাসড়কে। এতে ২০৫টি দুর্ঘটনায় ২৭৪ জন যাত্রী নিহত ও ৮৪৮ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া নৌপথে একটি দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত ও ১৪ জন আহত হয়। এই পুরো সময়ে রেলপথে কাটা পড়ে পূর্বাঞ্চলে ২৫ জন ও পশ্চিমাঞ্চলে ৯ জনসহ মোট ৩৪ জন নিহত হয়। রোধে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বেশকিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইউনিট গঠন, যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে যথাযথ উদ্যোগ নেয়া, যানবাহনের ফিটনেস পদ্ধতি ডিজিটাল করা, রোড সেফটি অডিট করা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধ করা, প্রশিক্ষিত চালক গড়ে তোলা। ওভারলোড নিয়ন্ত্রণে মানসম্মত গণপরিবহনের ব্যবস্থা করা, মহাসড়কে ধীরগতির যান ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু পদ্ধতি আধুনিকায়ন করা, মহাসড়কে নছিমন-করিমন, ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিকশা বন্ধে সরকারের সিদ্ধান্ত শতভাগ বাস্তবায়ন করা। এ ছাড়া ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট মেরামত ও মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন চলাচল বন্ধে উদ্যোগ নেয়া। সংবাদ সম্মেলনে মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-রংপুর রুটে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে, প্রাণহানিও বেশি হয়েছে। রংপুরের তারাগঞ্জে দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারপ্রতি ২০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু যাত্রীকল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এই ক্ষতিপূরণ তারা পায়নি। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)-এর যুগ্ম মহাসচিব গনি মিয়া বাবুল, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সহসম্পাদক ব্যারিস্টার শফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হানিফ খোকন প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.