নির্দিষ্ট সময়সীমার ইইউর প্রস্তাবে ঢাকার আপত্তি

ইউরোপে অনিয়মিত বসবাসরত বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠাতে প্রক্রিয়াগত চুক্তি ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরস’ (এসওপি) প্রস্তাব করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। গত বছরের অক্টোবরে প্রস্তাবিত এ খসড়া চুক্তিতে এসব বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া দ্রুত করতে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিতে বলা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ এই প্রস্তাবে রাজি নয়। ইইউর খসড়া প্রস্তাব সংশোধন করে বিকল্প প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সংশোধিত প্রস্তাবে বাংলাদেশ পুরো প্রক্রিয়া সম্পাদনে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা দেয়ার বিরোধী। বাংলাদেশ মনে করে, প্রক্রিয়া সম্পাদনে যতটা সময় প্রয়োজন তা দিতে হবে। ইউরোপীয় কমিশনের পরিসংখ্যান অধিদফতর ইউরোস্ট্যাট সম্প্রতি এক পরিসংখ্যানে উল্লেখ করেছে, ইইউভুক্ত দেশগুলোয় ২০০৮ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মোট ৯৩ হাজার ৪৩৫ জন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ করেছেন। তার মধ্যে ২০১৫ সালে সবচেয়ে বেশি- ২১ হাজার ৪৬০ জন। ২০১২ সালে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমান ১৫ হাজার ৩৬০ জন। ২০১৪ সালে গেছেন ১০ হাজার ১৩৫ জন। ২০০৮ সালে সাত হাজার ৮৫ জন, ২০০৯ সালে আট হাজার ৮৭০ জন, ২০১০ সালে নয় হাজার ৭৭৫ জন, ২০১১ সালে ১১ হাজার ২৬০ জন এবং ২০১৩ সালে নয় হাজার ৪৯০ জন বাংলাদেশি ইউরোপে প্রবেশ করেন। তারা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অনিয়মিতভাবে অবস্থান করছেন বলে রিপোর্টে বলা হয়। অনিয়মিত বিদেশিদের ফেরত নিতে কোনো দেশ অনীহা প্রকাশ করলে ওই দেশের ওপর ভিসা কড়াকড়ি আরোপের সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছে ইইউ। এদিক বিবেচনায় কথিত অনিয়মিতদের নিয়ে চাপের মধ্যে আছে বাংলাদেশ। ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ইউরোস্ট্যাটের এই পরিসংখ্যানকে ‘অতিরঞ্জিত’ বলে অভিহিত করেছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা রোববার যুগান্তরকে বলেন, ‘ইউরোপে থাকা অনিয়মিত বাংলাদেশিদের সরকারি কোনো পরিসংখ্যান নেই।’ তিনি বলেন, ‘অনিয়মিত অভিবাসনকে বাংলাদেশ নিরুৎসাহিত করে। এ কারণে কোনো দেশে অনিয়মিত বাংলাদেশি থাকলে তাকে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশের আপত্তি নেই।
তবে তাদের ফিরিয়ে আনার প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতি হল- তাদের নাগরিকত্ব যাচাই করা। অনিয়মিত বাংলাদেশির সঙ্গে বাংলাদেশ দূতাবাসের কনস্যুলার কর্মকর্তারা কথা বলার পর তার দেয়া তথ্য এবং পাসপোর্টসহ বিভিন্ন ডকুমেন্ট পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেশে পাঠানো হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তার তথ্য সঠিক কিনা তা তাদের নিজ নিজ বাড়িতে গিয়ে যাচাই করা হবে। তারপর তিনি স্বেচ্ছায় আসতে রাজি হলে তাকে ফিরিয়ে আনা হবে। ফলে এ নিয়ে তাড়াহুড়ার সুযোগ নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক হয়ে অনেক সময় নিজেদের বাংলাদেশি বলে ভুয়া পাসপোর্ট তৈরি করে। তাদের বাংলাদেশ গ্রহণ করবে না।’ঢাকায় ইইউ রাষ্ট্রদূত পিয়ারে মায়াদোন রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইউরোপ অনুবিভাগের মহাপরিচালক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খাস্তগীরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে আগামী ১২ জুলাই ব্রাসেলসে ইইউ সদর দফতরে অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশ-ইইউ যৌথ কমিশনের বৈঠকের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আসন্ন যৌথ কমিশন বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনিয়মিতদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সংশোধিত এসওপি প্রস্তাব দেয়া হতে পারে। ইইউ সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অনিয়মিত বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর খসড়া এসওপি দিলে প্রস্তাবটি সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ের অভিমত চাওয়া হয়। এ দুটি মন্ত্রণালয় এই মর্মে অভিমত দেয় যে, বাংলাদেশের আইনে পূর্ণাঙ্গ যাচাই-বাছাই সম্পন্ন না করে কাউকে দেশে ফিরিয়ে আনার সুযোগ নেই। ফলে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দেয়ার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ তাই প্রস্তাবিত খসড়া এসওসি সংশোধন করে নতুন খসড়া প্রস্তুত করেছে। অপরদিকে ইইউ রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদোনকে সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকেছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। মন্ত্রী ইইউ রাষ্ট্রদূতের কাছে বাংলাদেশের কার্গো নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত খবরের ব্যাখ্যা চান। জবাবে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেছেন, নতুন করে কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি। তবে আগের নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের বিষয়ে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ-ইইউ আসন্ন যৌথ কমিশন বৈঠকে উন্নয়ন সহযোগিতা, জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি), বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং এশিয়া-ইউরোপ মিটিং (আসেম) নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।

No comments

Powered by Blogger.