হোলে আর্টিজানে নিহতদের পরিবারকে দেয়া হবে ১৫ হাজার ইউরো

গুলশানের হোলে আর্টিজান বেকারিতে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১৫ হাজার ইউরো (বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ১৪ লাখ টাকা) করে দেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন করা হয়েছে। গত সোমবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এটি অনুমোদন করেন বলে জানা গেছে। উগ্রবাদী হামলায় গত বছর ১ জুলাই দেশী-বিদেশী মিলিয়ে ২০ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এর মধ্যে ৯ জন ইতালীয়, সাতজন জাপানি, তিন বাংলাদেশী ও এক ভারতীয় নাগরিক রয়েছেন। এ ঘটনায় দু’জন পুলিশ কর্মকর্তাও নিহত হন। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গুলশানের হোলে আর্টিজানে হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। এ প্রস্তাবে শুধু নিহত ইতালীয় ৯ নাগরিককে এক লাখ ৩৫ হাজার ইউরোর সমপরিমাণ এক কোটি ২৩ লাখ টাকা দেয়ার সুপারিশ করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনও নিয়েছিল। পরে বিষয়টি অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হলে তিনি এ সিদ্ধান্তকে বৈষম্যমূলক উল্লেখ করে এতে আপত্তি জানান। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী তার মন্তব্যে লেখেন, ‘আমার প্রস্তাব হবে এই ক্ষতিপূরণ সব ক্ষতিগ্রস্ত নিরীহ পরিবারকে দেয়া হবে এবং এই ব্যয়টি সরকারি কোষাগার থেকে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার যেকোনো দেশেরই হোক না কেন (বাঙালিসহ) তারা সবাই এই সহায়তা পাবেন।’ অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিতে আনলে তিনি অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবের সাথে একমত পোষণ করেন এবং জঙ্গি হামলায় নিহত সবার পরিবারকে আর্থিক সুবিধা দেয়ার নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে একনোটে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, ‘মাননীয় অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবের সাথে একমত পোষণ করি। যারা আক্রমণের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন তারা যে দেশেরই হোক সবাইকে আমরা সহায়তা করব।’ প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশের ভিত্তিতে নিহতের প্রত্যেককে ১৫ হাজার ইউরো দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গুলশানের হোলে আর্টিজান বেকারিতে গত বছর ১ জুলাই রাতে উগ্রবাদীরা ২০ জনকে হত্যা করে। তাদের মধ্যে ৯ জন ইতালীয়, সাতজন জাপানি, তিনজন বাংলাদেশী এবং একজন ভারতীয় নাগরিক। এ ছাড়া সন্ত্রাসীদের হামলায় দু’জন পুলিশও প্রাণ হারান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র জানায়, ইতালির পক্ষ থেকে প্রথমে তাদের নিহত নাগরিকদের ক্ষতিপূরণের জন্য অনুরোধ করা হয়। পরে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করে।  সূত্র জানায়, অপ্রত্যাশিত খাতে এ পরিমাণ অর্থ না থাকায় অর্থ বিভাগ জননিরাপত্তা বিভাগকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে তা জোগান দেয়ার পরামর্শ দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত বিষয়টিতে আপত্তি জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি এক নোটে লিখেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিলেন যে হোলে আর্টিজানের সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ইতালীয় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে। তাদের মনেই হলো না যে এই সুবিধা সব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে দেয়া উচিত। এই বিষয়ে জাপান সফরকালে কানাঘুষায় শুনতে পাই যে এ রকম একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং এটি তখনই একটি বৈষম্যমূলক পদক্ষেপের নিন্দার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। গত ১৪ মে অর্থমন্ত্রীর দেয়া নোটের সাথে একমত পোষণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একই দিন প্রস্তাবে অনুমোদন দেন। ওই দিন তিনি অপর নোটে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে নিহত সব পরিবারকে আর্থিক সুবিধা দেয়ার নির্দেশ দেন। জানা গেছে, শিগগিরই ক্ষতিপূরণের অর্থ নিহতের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.