খোঁড়াখুঁড়ি, জলাবদ্ধতা আর যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী

রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, জলাবদ্ধতা আর যানজটে নাকাল হতে হচ্ছে রাজধানীবাসীদের। বর্ষা মৌসুমে এই তিন যন্ত্রণা যেন ঢাকাবাসীর প্রতিবছরের প্রাপ্তি হয়ে উঠেছে। তবে এবারের যন্ত্রণা যেন একটু বেশিই। কারণ রাজধানীতে ভরা বর্ষা মৌসুমে এক-দুই কিলোমিটার নয়, প্রায় ৪০০ কিলোমিটার সড়কজুড়ে চলছে খোঁড়াখুঁড়ির মহাযজ্ঞ। উন্নয়ন কাজের নামে মিডিয়ান নির্মাণ, ড্রেনেজ, ফুটপাত ও মূল সড়ক খোঁড়ার কারণে রাজধানী ঢাকা রীতিমতো ক্ষতবিক্ষত। এর ফলে একটু বৃষ্টি হলেই নগরবাসীর নিত্যদুর্ভোগ মহাদুর্ভোগে রূপ নিচ্ছে। মঙ্গলবার দিন-রাত অনবরত বৃষ্টির কারণে বুধবার সকাল থেকেই পুরো নগরজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ঢকায় গত দিনের বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অন্য সব বিভাগীয় শহরের চেয়ে বেশি। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ঢাকায় ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আর মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে হিসেব করলে ঢাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১০৩ মিলিমিটার। সাম্প্রতিক সময়ের ভারী বৃষ্টিতে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকার সড়কে হাঁটুপানি জমে যাচ্ছে। বিশেষ করে মিরপুরের দক্ষিণ পাইকপাড়া, মাজার রোড, ১০ নম্বর থেকে ১২ নম্বর পর্যন্ত সড়ক, সাংবাদিক কলোনি ও কালশী এলাকার সড়কের করুণ অবস্থা। এর বাইরে কুড়িল প্রগতি সরণি, কারওয়ান বাজার, ধানমণ্ডির মধুবাগ, রায়ের বাজার, শান্তিনগর, রাজারবাগ, যাত্রাবাড়ী, জুরাইন, মতিঝিল, পুরান ঢাকার আলাউদ্দিন রোড ও নাজিম উদ্দিন রোডেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। জলাবদ্ধ সড়কে কর্মব্যস্ত নগরবাসীকে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করতে দেখা গেছে। রিকশা উল্টে যাওয়া, মোটরবাইক গর্তে পড়ে আহত হওয়ার দৃশ্যও চোখে পড়ে। তবে মৌসুমী বায়ুর কারণে বৃষ্টি হওয়াকে কেউ দুর্ভোগ বলে মানছেন না।
তাদের অভিযোগ পরিকল্পনা ছাড়া রাজধানীজুড়ে বর্ষা মৌসুমে খোঁড়াখুঁড়ির মহাযজ্ঞই জনদুভোর্গ সৃষ্টির মূল কারণ। এছাড়া অপরিকল্পিত নগরায়ন, জলাধার ভরাট ও দখল, পানি নিষ্কাসনের সঠিক পরিকল্পনা না থাকাই নগরবাসীর দুভোর্গ বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। সড়ক খনন নীতিমালা অনুযায়ী ৩০ এপ্রিল থেকে ৩০ অক্টোবর ঢাকা শহরের সড়ক খনন বন্ধ রাখার কথা। তবে সঠিক তদারকি ও সদিচ্ছার অভাবে পুরো রাজধানীর প্রায় ৪০০ কিমি. সড়কজুড়ে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ১০০ কিলোমিটার সড়কে উন্নয়ন কাজ চলছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ২৫০ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়ন কাজ চলছে। এর বাইরে ঢাকা শহরে মেট্রোরেল, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্পসহ অন্যান্য সংস্থার উন্নয়ন কাজ চলছে ৫০ কিলোমিটার সড়কজুড়ে। এ ব্যাপারে নগরবাসীর পক্ষ থেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানানো হলেও তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই সংস্থা দুটির। এ প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, ঢাকা দক্ষিণের সড়ক উন্নয়ন কাজ দ্রুত শেষ করতে আমরা জোর চেষ্টা চালাচ্ছি। তবে এর বাইরেও অন্যান্য সংস্থা জরুরি উন্নয়ন কাজের কারণে কিছু সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি করছে। তিনি বলেন, আগামী বর্ষা মৌসুমে নগরবাসীর ভোগান্তির বিষয় মাথায় রেখে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর) মো. শরীফ উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, জরুরি প্রয়োজনে বর্ষা মৌসুমেও বিভিন্ন সড়কে উন্নয়ন কাজ করা হচ্ছে। নগরবাসীর ভোগান্তির বিষয় মাথায় রেখে এসব কাজ দ্রুত শেষ করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ঢাকা উত্তর এলাকার ১ হাজার ৩৫০ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ২৫০ কিলোমিটারে উন্নয়ন কাজ চলছে। তবে মেট্রোরেলসহ অন্যান্য সংস্থার উন্নয়ন কাজের কারণেও কিছু সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি হচ্ছে। সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকে এসব সড়ক খননের অনুমোদন দেয়া হয়ে থাকে।

No comments

Powered by Blogger.