নওয়াজ অযোগ্য হলে শাহবাজ শরীফ হবেন প্রধানমন্ত্রী!

পাকিস্তানের রাজনীতির ঘূর্ণি হাওয়ায় এখন সবার চোখ প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের ভাই, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের দিকে। পানামাগেট কেলেঙ্কারিতে দৃশ্যত সুপ্রিম কোর্ট গঠিত জয়েন্ট ইনভেস্টিতেশন টিম (জেআইটি) নওয়াজ শরীফ ও তার সন্তানদের দোষী সাব্যস্ত করেছে। ফলে তিনি প্রধানমন্ত্রিত্ব ধরে রাখতে পারবেন কিনা তা এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি তাকে সুপ্রিম কোর্ট অযোগ্য ঘোষণা করে তাহলে তিনি পদ হারাবেন। তখন কে ধরবেন রাজনীতির হাল, কে হবেন পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী? এমন প্রশ্নে এখন চায়ের কাপে ঝড়। তবে দল সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলেছেন, এক্ষেত্রে কা-ারি হতে পারেন শাহবাজ শরীফ। নওয়াজ শরীফকে অযোগ্য ঘোষণা করা হলে তিনিই প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে আসতে পারেন। সেক্ষেত্রে তার পাঞ্জাব প্রদেশে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব কে পালন করবেন সেটাও আরেকটা বড় প্রশ্ন। পাকিস্তানের অনলাইন ডন লিখেছে, জেআইটি তাদের রিপোর্ট জমা দেয়ার পর মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছে দলের নীতিনির্ধারণী মহলের। তাতে উপস্থিত ছিলেন শাহবাজ শরীফ। দৃশ্যত এখন পর্যন্ত জেআইটির রিপোর্টে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হয় নি। ফলে বিরোধী দল ও মিডিয়ার আক্রমণ থেকে তিনি রক্ষা পেয়েছেন। ফলে পানামাগেট কেলেঙ্কারিতে যদি আদালত বিরূপ রায় দেন তাহলে শরীফ পরিবার ও তার সন্তানদের জন্য তিনি হবেন ‘অল ইমপর্টেন্ট প্লেয়ার’। এমনটাই তাকে এখন নতুন করে বলা হচ্ছে। নওয়াজ শরীফের দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ এর (পিএমএলএন) একজন নেতা বলেছেন, এ কারণে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিচ্ছেন শাহবাজ শরীফ। এই সঙ্কটের সময়ে তিনি তার ভাইয়ের পাশে রয়েছেন। পাশাপাশি যাদেরকে খুব বেশি প্রয়োজন তাদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রাখছেন। ওই সূত্রটি আরো বলেছেন, দলের ভিতরে এখন অনেক কথা বলাবলি হচ্ছে। বলা হচ্ছে, যদি নওয়াজ শরীফকে অযোগ্য ঘোষণা করে আদালত তাহলে তার পদে আসতে পারেন শাহবাজ শরীফ। তবে এমন প্রশ্নও আলোচনা হচ্ছে, তিনি যদি কেন্দ্রীয় সরকারে চলে আসেন তাহলে পিএমএলএনের ঘাঁটি পাঞ্জাবের দায়িত্ব কে নেবেন। প্রকৃতপক্ষে শাহবাজ শরীফ কখনো পাঞ্জাবকে হাতছাড়া হতে দেবেন না, যদিও তাকে কেন্দ্রে বড় পদ দেয়া হয়। অবশ্যই তিনি পাঞ্জাবকে নিরাপদ ও আয়ত্তে রাখার জন্য অনেক কিছু করতে পারেন। এক্ষেত্রে ছেলে হামজা শাহবাজকে ব্যবহার করতে পারেন। ওই সূত্রটি আরো বলেন, এখন বড় প্রশ্ন হলো, শাহবাজ শরীফকে কি অন্ধের মতো বিশ্বাস করেন পিএমএলএনের নেতারা। নওয়াজ শরীফের অনুপস্থিতিতে তারা কি তাকে কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনে অনুমতি দেবে। নাকি দল থেকে অন্য কাউকে বেছে নেয়া হবে। নাকি অন্য কোনো অপশন বেছে নেয়া হবে। পানামা পেপারসে অফসোর কোম্পানিতে বিনিয়োগের তথ্য ফাঁস হওয়ার পর থেকেই নওয়াজ শরীফ ও তার সন্তানদের পক্ষ নেয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন শাহবাজ শরীফ। জেআইটি যখন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে রাজধানী ইসলামাবাদে জিজ্ঞাসাবাদ করে সেই ভবনে তখন তার সঙ্গে ছিলেন শাহবাজ ও হামজা শরীফ। কিন্তু নওয়াজ শরীফের মেয়ে মরিয়ম, ছেলে হাসান ও হোসেন শরীফকে যখন একই ভবনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় সেখানে শাহবাজ বা হামজা কেউই উপস্থিত ছিলেন না। পিএমএলএনের ওই নেতা বলেছেন, কয়েক দিনের মধ্যে জেআইটির রিপোর্টে প্রধানমন্ত্রী ও তার সন্তানদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে এখন এই সময়ে তার সামনে এসে দাঁড়াবেন না শাহবাজ ও হামজা শরীফ। তবে সুপ্রিম কোর্টে জেআইটি তাদের রিপোর্ট জমা দেয়ার পর শাহবাজ শরীফ নীরব রয়েছেন বলে যে কথা বলা হচ্ছে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন পাঞ্জাব সরকারের মুখপাত্র মালিক আহমাদ খান। তিনি বলেছেন, প্রকাশ্যে ভাইয়ের পক্ষ নিচ্ছেন না মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ এমন খবর সত্য নয়। শরীফ পরিবার এ মামলায় লড়াই করছে এবং বিজয়ী হবে।

No comments

Powered by Blogger.