এএসপিসহ ৫ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নির্যাতনের মামলা

কুলাউড়া সার্কেলের সাবেক এএসপি (বর্তমানে ডিএমপিতে কর্মরত) আলমগীর হোসেনসহ আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে হেফাজতে নির্যাতন, ছিনতাই ও হয়রানির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গত ৯ জুলাই মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলা করেন ফার্নিচার ব্যবসায়ী মো. সাইফুল ইসলাম সজীব। আদালত তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মৌলভীবাজার সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে দায়িত্ব দিয়েছেন। মামলার অপর আসামিরা হলেন : মৌলভীবাজার মডেল থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ মো. আবদুছ ছালেক, এসআই মো. নাজিমউদ্দিন, এসআই মঞ্জুরুল হাসান মাসুদ, এসআই মো. আবদুল হাশিম এবং এসএম উমেদ আলী, আজিজুল হক বাবুল ও আবদুল মালেক মনি।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, পুলিশ কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সার্কেলের দায়িত্বে থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বাদীর বিরুদ্ধে ৪৫ মিনিটে হয়রানিমূলক ৩টি মামলা করেন। ওই মামলায় বাদী সাইফুল ইসলাম জেলও খাটেন। সম্প্রতি ওই তিন মামলার রায়ে সাইফুল নির্দোষ প্রমাণিত হন। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, আলমগীর হোসেন উদ্দেশ্যমূলকভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সিভিল ড্রেসে কুলাউড়া থেকে ঢাকা এসে ব্যবসায়ী সজীবকে তার বনশ্রীর বাসা থেকে তুলে মৌলভীবাজার থানায় নিয়ে যান। সেখানে তার ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয় এবং করা হয় তিনটি মামলা। মামলার তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মৌলভীবাজার সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ মামলা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এরই মধ্যে মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে। বাদীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ হয়েছে। বাদীকে নিয়ে শিগগির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। তিনি বলেন, মামলায় ৩ জন সাংবাদিকসহ ৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। ৮ জনের মধ্যে ৫ জনই পুলিশের লোক। জানতে চাইলে মামলার বাদী সজীব যুগান্তরকে বলেন, ‘আদালতে মামলা দায়েরের এক সপ্তাহ আগেও এএসপি আলমগীর আমাকে ফোনে হত্যার হুমকি দেন। ২০১৪ সালের ১৪ আগস্ট আমার ওপর যে বর্বর-অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে তার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে দীর্ঘদিন পর হলেও আমি মামলা করেছি।’ বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘মামলার তদন্তভার পুলিশের ওপর দিলে আমি ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হব। কারণ মামলার প্রধান আসামি পুলিশের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।’ এজাহার সূত্রে জানা যায়, অন্য একটি মামলায় সাক্ষী রুহুল আমীনকে নিয়ে হাজিরা দিতে ২০১৪ সালের ১৪ আগস্ট সিলেটে এলে পুলিশ কর্মকর্তা আলমগীর তাদের মৌলভীবাজার সদর থানায় নিয়ে নির্মম নির্যাতন করেন। এ সময় তাকে মেরে ফেলারও হুমকি দেন। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১ লাখ ৬ হাজার টাকা, ২টি মোবাইল ফোন, দুটি স্বর্ণের আংটি, একটি মানিব্যাগ ও ১ বেল্ট ছিনিয়ে নেয়া হয়। শুধু তাই নয় মৌলভীবাজার মডেল থানার তৎকালীন অফিসার মো. নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে ব্যবসায়ী সজীবের বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে একটি মামলা করেন (মামলা নং-১৬/২০১৪)। ওই মামলা পরে নিষ্পত্তি হয় এবং রায়ে সজীব নির্দোষ প্রমাণিত হন। পুলিশ কর্মকর্তা আলমগীরের বিরুদ্ধে নির্যাতনের আরও অভিযোগ রয়েছে। ২০১৩ সালে সিলেটে সস্ত্রীক ঝিনাইদহ থেকে বেড়াতে আসেন ইমন নামে এক তরুণ। ঘোরাঘুরির একপর্যায়ে ইমন তৎকালীন এএসপি আলমগীর হোসেনের সহায়তা চান। পরে তাদেরকে থানায় আশ্রয় দেয়ার কথা বলে কৌশলে ইমনের স্ত্রীকে ধর্ষণ করেন আলমগীর। পরে বিষয়টি জানতে পেরে ইমন জেলার জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ নিয়ে যান। বিষয়টি টের পেয়ে ইমনকে তুলে নিয়ে কলম দিয়ে খুঁচিয়ে তার চোখ নষ্ট করে দেয়া হয়। ইমন এখন অন্ধ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্যাতনে দুই চোখ হারানো অন্ধ ইমন বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান হিসেবে এএসপি আলমগীরের বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের কাছে ধরনা দিলেও আমি সুষ্ঠু বিচার পাইনি।’ ক্ষোভ ও হতাশা নিয়ে ইমন যুগান্তরকে বলেন, ‘মনে হয় না আর কোনোদিন এই পুলিশ কর্মকর্তার অন্যায়ের সুষ্ঠু বিচার পাব।’ তিনি বলেন, ‘দুই চোখ হারানোর পরও আলমগীরের লোকজন প্রতিনিয়ত আমাকে হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।’
ক্রসফায়ারের হুমকি দেয়া হচ্ছে -ব্যবসায়ী সজীব : এদিকে মঙ্গলবার রাজধানীর ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে (ক্রাব) সংবাদ সম্মেলনে সজীব অভিযোগ করেছেন, রাজধানীর মিরপুর জোনের এএসপি আলমগীর হোসেন তাকে ক্রসফায়ারের হুমকি দিচ্ছেন। তিনি বলেন, এই পুলিশ কর্মকর্তা ও তার বান্ধবী ডা. রাজিয়া সুলতানা ২০১২ সালে মৌলভীবাজার জেলায় কর্মরত থাকা অবস্থায় আমার কাছ থেকে ২৮ লাখ টাকা ধার নেন। আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে আট লাখ টাকার ফার্নিচারও কেনেন। টাকা চাইতে গেলে ঢাকার বনশ্রী বাসা থেকে আটক করে আমাকে মৌলভীবাজার মডেল থানায় নিয়ে যান। নির্যাতনের পর আমার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন, চাঁদাবাজিসহ তিনটি মামলা করে পুলিশ। আমি জেলও খাটি। ২০১২ সালের ১১ অক্টোবর আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী. স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজিপি, অতিরিক্ত আইজিপি বরাবর অভিযোগ করি। তদন্তের পর আলমগীর হোসেনকে বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু তিনি এখনও সপদে বহাল রয়েছেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আমাকে যে কোনো সময় মেরে ফেলতে পারেন। রামপুরা থানায় দুটি জিডিও করেছি। অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে মিরপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার আলমগীর হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ‘তার কাছ থেকে টাকা নিয়েছি এর কোনো প্রমাণ নেই। অভিযোগ ভিত্তিহীন। ব্যক্তি চরিত্র ক্ষুণ্ন করতে এ সংবাদ সম্মেলন।’

No comments

Powered by Blogger.