রাণীনগরে কৃষকদের পাট চাষে আগ্রহ বাড়ছে

নওগাঁর রাণীনগরে বিলুপ্ত প্রায় এক সময়ের এদেশের প্রধান অর্থকারী ফসল সোঁনালী আঁশ হিসাবে খ্যাত পরিবেশ বান্ধব পাট চাষে আগ্রহ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। উৎপাদন খরচ কম বিক্রয় মূল্য ভাল পাওয়ায় ধান ও অন্যান্য কৃষিপণ্যের পাশাপাশি স্বল্প পরিমান হলেও স্থানীয় কৃষকরা পাট চাষ করছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় চলতি মওসুমে ইরি ধানের পাশাপাশি পাট চাষ করায় কয়েকটি ইউনিয়নে মাঠে মাঠে এখন পাট গাছের সবুজের দানা মেলেছে। কৃষকরা আশা করছেন, ভাল বাজার দর পেলে আগামী পাট চাষের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পাবে। এই এলাকায় বোরো ধান নির্ভর হওয়ায় কৃষকরা খুব স্বস্তিতে নেই। তাই সহজলব্য চাষ হওয়ায় রাণীনগরে কৃষকরা পাট চাষে আগ্রহ বাড়ছে। জেলার অন্যান্য উপজেলার চেয়ে রাণীনগর উপজেলায় এবার ভাল পাট চাষ হয়েছে। রাণীনগর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অফিস সুত্রে জানা গেছে, চলতি খড়িপ মওসুমে উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে মেস্তা পাট, দেশী পাট ও তোষা জাতের পাট প্রায় ৫৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। বিগত বছরে পাটের ভাল ফলন ও দাম আশানুরুপ পাওয়ায় এলাকার চাষিরা অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি পাট চাষের আগ্রহী হয়ে উঠেছে। গত কয়েক বছরগুলোতে চাষিদের উৎপাদিত অন্যান্য কৃষিজাত ফসলের লোকসান হওয়ার কারনে এলাকার চাষিরা পাটের আবাদ মনোযোগ দিয়ে করছে। ফলন ও দাম ভাল পেলে চাষিদের আগ্রহ আরো বৃদ্ধি পাবে এমনটাই আশা করছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ। ভরা মওসুমে প্রাকৃতিক কোন দূর্যোগ দেখা দিলে অন্যান্য ফসলের যেমন ক্ষতি হয় পাটের তেমন ক্ষতি হয় না। প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ১৫ মণ পর্যন্ত পাট উৎপাদন হয়। গত বছর রাণীনগরে কৃষকরা প্রতি মণ কাচা পাট ১৭শ’ থেকে ২হাজার টাকা পর্যন্ত বেচা-কেনা করেছে।
তবে খুলনা জেলার দৌলতপুর উপজেলায় উপস্থিত ক্রিসেন্ট জুট মিলের একটি ক্রয় কেন্দ্র রাণীনগর ছিল। কিন্তু রহস্যজনক কারনে মিল কর্তৃপক্ষ ২০১১ সালের শেষ দিকে ক্রয় সেন্টার বন্ধসহ সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রয় করে দেওয়ায় এখানকার উৎপাদিত পাটগুলো চাষিদের হাটে-বাজারের ফরিয়াদের কাছে বিক্রিয় করতে বাধ্য হয়। স্থানীয় সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম এমপি সরকারি পর্যায়ে যোগাযোগ করে পাট চাষিদের স্বার্থে পুনরায় একটি পাট ক্রয় কেন্দ্র স্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে এলাকাবাসির দাবি। উপজেলা খট্রেশ্বর গ্রামের পাট চাষি মো: শামছুর রহমান জানান,আমি নিজের জমিতে বোরো ধানের চাষ করতাম। কিন্তু ধানের জমি কিছুটা কমিয়ে পাট চাষের দিকে ধীরে ধীরে মনোযোগ দিচ্ছি। এ বছর আমি দেড় বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। এখন পর্যন্ত রোগ বালাই মুক্ত থাকায় আশা করছি ভাল ফলন হবে। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ এসএম গোলাম সারওয়ার জানান, বিগত বছরগুলোতে পাটের বাজার মন্দ থাকায় এই ফসলের প্রতি চাষিদের আগ্রহ কমে গিয়েছিল। বর্তমান সরকার খাদ্যদ্রব্যসহ বিভিন্ন পণ্যে পরিবেশ বান্ধব পাটের মোড়ক বহুবিদ ব্যবহার করায় বর্তমান পাটের উৎপাদন ও বাজার দর ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করায় প্রান্তিক পর্যায়ে চাষিদেরও পাট চাষের আগ্রহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে চলতি খড়িপ মওসুমে চাষিদের রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে কৃষকদের গঠনমূলক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এই ফসলে এমনিতেই তেমন কোন রোগ-বালাই আক্রান্ত হয় না। দাম ভাল পাওয়ায় কৃষকরা দিন দিন পাট চাষের দিকে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

No comments

Powered by Blogger.