কচুপাতার মতো আত্মায় মাগফিরাত জুটবে না

‘আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে ধর্মদরদি মানুষের সংখ্যাই বেশি। এটা সম্ভব হয়েছে উম্মতের শ্রেষ্ঠ সন্তান নায়েবে নবীখ্যাত আলেমদের মেহনতের কারণে। আলেমরা ওয়াজ-নসিহতের মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহমুখী করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ চেষ্টারই বড় একটা মাধ্যম জুমার বয়ান। আজ আমরা মাহে রমজানের দ্বিতীয় জুমা আদায়ের জন্য এখানে জমায়েত হয়েছি।’ এভাবেই গুলশান সেন্ট্রাল মসজিদে জুমার নামাজের আগে বয়ান শুরু করেন আল্লামা মাহমুদুল হাসান। প্রথমেই তিনি নিজের সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করে বলেন, নবী এবং সাহাবিরা যখন বক্তব্য দিতেন তখন মাইক বা সাউন্ড সিস্টেম ছিল না। তারপরও তাদের কথা মানুষের কান হয়ে অন্তর স্পর্শ করত খুব সহজেই। আমরা মাইকে কথা বলছি। আমাদের কথা অনেকের কানও স্পর্শ করছে না। আমাদের আমলের কমতির কারণেই এমনটি হচ্ছে। পাশাপাশি আরেকটি কারণও আছে। বৃষ্টি যখন হয়, সব কিছুই ভিজিয়ে যায়। কিন্তু কচুপাতা ভেজে না। আমার দরদি শ্রোতা বন্ধুরা! একটু ভেবে দেখুন! কোরআনের কথা যে আপনার আত্মায় স্পর্শ করছে না, আপনার অন্তর কচুপাতার মতো স্থায়ী শুষ্ক হয়ে যায়নি তো? যা বাইরে থেকে দেখতে সবুজ কিন্তু রহমতের বর্ষণে সিক্ত হয় না। যদি এমনটি হয়েই থাকে তবে মাহে রমজানে খোদার রহমতের বর্ষণ থেকে আপনি বঞ্চিত থেকেই যাবেন- এতে কোনো সন্দেহ নেই।’ আল্লামা মাহমুদুল হাসান মুসল্লিদের উদ্দেশে বলেন, ‘মুসলমানদের মাঝে এখন এক ধরনের ফেতনা শুরু হয়েছে। ধর্ম নিয়ে ফেতনা। মদ-জুয়া-ঘুষ, অন্যায়-অনাচার, জেনা-ব্যভিচার এসব নিয়ে কোনো ফেতনা নেই। ফেতনা হল নামাজ নিয়ে। রোজা নিয়ে। মিলাদ-কিয়াম-মাজহাব নিয়ে। হাদিসের ভিন্ন ভিন্ন মতের কারণেই এ ধরনের মতবিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। আপনার যেটি ভালো লাগে সেটিই করুন। কিন্তু আরেকজনকে কেন ভুল বলছেন বা কেন আপনারটা আরেকজনকে গেলাতে চাচ্ছেন। এটা দ্বীনের জন্য বড় ভয়াবহ কথা। কোনো ইমামই কোরআন হাদিসের বাইরে কথা বলেননি। আর বললেও তা গ্রহণযোগ্য নয়। তাই আপনাদের কাছে অনুরোধ! ধর্ম নিয়ে ফেতনায় জড়াবেন না।’ এরপর তিনি বলেন, ‘আমল করলে তো আপনি সওয়াব পাবেন, কিন্তু ধর্ম নিয়ে ফেতনায় জড়িয়ে গেলে আপনার আত্মা কচুপাতার মতো হয়ে যাবে। বাইরে থেকে মনে হবে কত সবুজ! কিন্তু আল্লাহর রহমত-মাগফিরাত কপালে জুটবে না। আপনি হবেন চির বঞ্চিতদের একজন।’
‘হে আমার প্রিয় মুসল্লি ভাইয়েরা! রমজানের বৃষ্টি রহমত হয়ে মাগফিরাত হয়ে নাজাত হয়ে ঝরছে। অনেক দিল এমনও আছে বৃষ্টিতে সিক্ত হয় না। এর যথার্থ কারণ রয়েছে। বড় কারণ তো বললাম, ধর্ম নিয়ে ফেতনায় জড়িয়ে পড়া। আরেকটা কারণ হচ্ছে আল্লাহর কাছে দোয়া না করা। আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে কোরআনের শেখানো নিয়মে। ওয়াদউ রব্বাকুম তাদাররুআ ওয়া খুফইয়াতান। আল্লাহকে ডাক, বিনয়-নম্রতা ও ভয়ের সঙ্গে চুপিচুপি।’ প্রিয় মুসল্লিরা! নামাজ শেষে আপনারা আমার সঙ্গে হাত তুলবেন। আমি দোয়া করব। আপনারা আমিন আমিন বলে চোখের জলে বুক ভাসাবেন। আমার ভাষায়, এটা আসল দোয়া নয়। আসল দোয়া হল আপনার হৃদয়ের আবেগ-ভয় যখন আপনাকে আল্লাহর কাছে টেনে নিয়ে যাবে, গোনাহের কথা স্মরণ হওয়া মাত্রই হাউমাউ করে অথবা ঠোঁট কামড়ে কেঁদে ফেলবেন, মনের গভীর থেকে দীর্ঘশ্বাসের সঙ্গে একটি ক্ষীণ আওয়াজ বের হবে ‘হে আল্লাহ! আমি ভুল করে ফেলেছি, আমাকে ক্ষমা করে দিন।’ আমি বলি- এটিই আসল দোয়া। এটিই কোরআনে শেখানো দোয়া।’ মাহে রমজানের করণীয় সম্পর্কে খতিব বলেন, ‘রমজানের প্রধান করণীয় দুটি। এক. দোয়া করা। কোরআনে আল্লাহপাক রোজার বিধি-বিধান বর্ণনার পর পরই বলেছেন, ‘ওয়া ইজা সাআলাকা ইবাদি আন্নি ফাইন্নি কারিব। আদরের বান্দা! তুমি আমাকে ডাকা মাত্রই আমি সাড়া দেব। আমি তো তোমার কাছেই আছি।’ তাই রমজানে বেশি বেশি দোয়া করতে হবে। দোয়ার মাধ্যমে নিজের গোনাহ মাফ করিয়ে নিতে হবে। দ্বিতীয় করণীয় হল- কারও সঙ্গে যদি আপনার বিরোধ থাকে, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান, ভাই, বোন, প্রতিবেশী, সহকর্মী এক কথায় কোনো মানুষের সঙ্গে আপনার মতবিরোধ থাকলে তা মিটিয়ে নিতে হবে। তা না হলে আপনি যতই আল্লাহর দরবারে দোয়ার হাত তোলেন না কেন আল্লাহর কাছে তা কবুল হবে না।’

No comments

Powered by Blogger.