যেসব ভুলে তেরেসার স্বপ্নভঙ্গ

সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে ব্রিটেনের রাজনীতির ইতিহাসে নাটকীয় বিপর্যয়ের মুখোমুখি হলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। দেশটির আগাম সাধারণ নির্বাচনে পার্লামেন্টে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে তার কনজারভেটিভ পার্টি। অথচ খুব সহজেই জয় পাওয়ার পূর্বাভাস পেয়েছিলেন তেরেসা। আর এ কারণেই ১৮ এপ্রিল হঠাৎ করেই আগাম ভোটের ডাক দিয়েছিলেন তিনি। এরপর প্রথম জনমত জরিপে কনজারভেটিভ পার্টি লেবার পার্টির চেয়ে ২০ পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন, যেটি সংখ্যাগরিষ্ঠতার ম্যাজিক ফিগার পাওয়ার জন্য যথেষ্ঠ ছিল। তাহলে তেরেসা ব্যর্থ হলেন কেন? শুক্রবার সেই কারণগুলো তুলে ধরেছে এএফপি।
আগাম নির্বাচন : বহু ব্রিটিশ এ নির্বাচনকে অজনপ্রিয় বিরোধী নেতা জেরেমি করবিনের বিরুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য একটি প্রতারণাপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখেছিলেন। দেশটি পাঁচ বছরের সংসদ মেয়াদের মাত্র ২ বছর অতিবাহিত করেছে এবং তেরেসা গত বছর দেশটির প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। অন্যদিকে ব্রিটিশদের আরেক অংশের নাগরিকরা এ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের দুটি গণভোটের কথা স্মরণ করেন। একটি ২০১৪ সালে স্কটল্যান্ড স্বাধীনতার প্রশ্নে এবং অন্যটি ২০১৬ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বের হয়ে যাওয়ার (ব্রেক্সিট) প্রশ্নে। ফলে আগাম নির্বাচন ব্রিটিশ নাগরিকদের মনে ওই পুরাতন ক্ষতকে জিইয়ে তোলে।
ডিমেনশিয়া ট্যাক্স : তেরেসার কনজারভেটিভ পার্টির ‘ডিমেনশিয়া ট্যাক্স’ তাকে ডুবিয়েছে। বৃদ্ধদের তাদের বাড়িতে সেবা পেতে হলে বিপুল পরিমাণে অর্থ প্রদান করতে হবে মর্মে একটি প্রস্তাব পাস করেন তেরেসা। এ প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে অনেকে তাদের পারিবারিক বাড়ি বিক্রি করতে বাধ্য হবে। এ নিয়ে অনেকের মনে ক্ষোভ রয়েছে। তেরেসা সমর্থিত কনজারভেটিভ সংবাদমাধ্যমগুলোও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উত্তরাধিকারকে মুছে ফেলার এ ‘ডিমেনশিয়া ট্যাক্স’কে ব্র্যান্ডিং করে। এ সুযোগটি গ্রহণ করে লেবার পার্টি। দলের নেতা জেরেমি করবিন সেবা খাতে অর্থের পরিমাণ কমানোর ঘোষণা দেন।
সন্ত্রাসী হামলা : নিরাপত্তা ইস্যুতে ঐতিহ্যগতভাবে লেবার পার্টির চেয়ে কনজারভেটিভ পার্টির জনপ্রিয়তা বেশি। তবে খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে ম্যানচেস্টার ও লন্ডনে হামলায় ৩০ জন নিহত হওয়ার পর তেরেসার আসন নড়বড়ে হয়ে পড়ে। এজন্য ব্রিটেনের নিরাপত্তা আইন আরও কঠোর করার ঘোষণা দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী। অন্যদিকে ছয় বছর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন তেরেসার কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তোলেন করবিন। পুলিশের ভূমিকায় প্রভাব ফেলতে তেরেসা বাজেট কমিয়ে দেন বলে তোপ দাগেন তিনি। বাজেট কমানোর ফলে প্রায় ২০ হাজার পুলিশ সদস্য কমে গেছে।
টিভি বিতর্ক প্রত্যাখ্যান : করবিনের সঙ্গে টিভি বিতর্কে অংশগ্রহণের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তেরেসা বলেছিলেন, তিনি রাজপথে বের হবেন। ভোটারদের সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং তাদের মুখে সরাসরি ভালোমন্দ শুনবেন। জবাবে করবিনও বলেন, তেরেসা টিভি বিতর্কে অংশ না নিলে তিনিও সেখানে যাবেন না। তবে পরে তেরেসা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন এবং ৩১ মে বিতর্কের মঞ্চে উপস্থিত হন। সেখানে কনজারভেটিভ পার্টির প্রতিনিধি হিসেবে ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাম্বার রুড উপস্থিত ছিলেন। এভাবেই তেরেসা তার নিজের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কাপুরুষতার অভিযোগ তোলার সুযোগ করে দেন।
‘মেবট’ স্টাইল : তেরেসা নিজেকে বুদ্ধিমান ও সময়নিষ্ট একজন ইংলিশ নারী হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন। তবে নির্বাচনী প্রচারণায় ওই ভাবমূর্তির নীতিবাচক দিকটাই সামনে এসে উজ্জ্বলতায় ধরা দিয়েছে। তেরেসার ‘শক্তিশালী ও স্থায়ী নেতৃত্বের’ মন্ত্র অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। এজন্য তিনি ‘মেবট’ ডাক নাম উপাধি পেয়েছেন। একজন বিজ্ঞ তৃণমূল নির্বাচনী প্রচারণাকারী বলেন, তেরেসার ওই উদ্ভট স্টাইল নির্বাচনী প্রোগ্রামে জনপ্রিয়তা পেয়েছে, তবে তুলনামূলকভাবে তা করবিনের চেয়ে খারাপ হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.