‘তীব্র গরমে প্রাণ জুড়ায় লেবুর শরবত’

তীব্র দাবদাহে হাসফাঁস জনজীবন। কোথাও যেন শান্তি নেই। মাথার ওপর গণগণে সূর্য, কর্ম ব্যস্ত দিন আর কাজের চাপ। স্বস্তির নিঃশ্বাস পেতেও যেন বেশ বেগ পেতে হচ্ছে মানুষকে। তাই গরমে একটু স্বস্তির খোঁজে সাধারণ মানুষের আস্থা লেবুর শরবতে। তাই এই শরবতকে ঘিরে চলছে জমজমাট বেচাকেনা। বেলা ১২টা। চট্টগ্রাম শহরের নিউ মার্কেট এলাকার বেশকিছু শরবতের দোকানে তখন দেখা গেলো বেশ ভিড়। এ সময় ক্লান্ত শরীরে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে লেবুর শরবত পান করছিলেন রিক্সাচালক মিরাজ। বললেন, ‘এই গরমে রিক্সা চালাতে গিয়ে একেবারে ক্লান্ত হয়ে গেছি। এই শরবতটা পান করলে স্বস্তি আসে, ক্লান্তি চলে যায়।’ একই অবস্থা দেখা গেছে, নগরীর আন্দরকিল্লা, চেরাগী পাহাড়, টাইগারপাস, দেওয়ানহাট, কোতয়ালী মোড়ে। সাধারণ মানুষ ক্লান্তি দুর করতে রাস্তার পাশের লেবুর শরবত পান করছেন। শুধু প্রাপ্ত বয়স্করাই নয়, স্কুল পড়ুয়া শিশু-কিশোররাও ভক্ত এ সব শরবতের। আর ক্রেতা আকর্ষণে নানা পদের উপকরণ ব্যবহার করছেন শরবত বিক্রেতারা। কথা হয় চেরাগী পাহাড় মোড়ে শরবত ব্যবসায়ী মোঃ সেলিমের সাথে। তার বাড়ি সিলেটের হবিগঞ্জে। ১৯ বছর ধরে চট্টগ্রাম শহরে বসবাস করছে। গরমকালে লেবুর শরবত বিক্রি করে থাকেন তিনি। ৫ সন্তান সহ ৭ সদস্যের সংসার তার। প্রতিদিন প্রায় ২০০-২৫০ গ্লাস শরবত বিক্রি কওে থাকেন তিনি। যা বিক্রি হয় তা দিয়ে ভালোই সংসার চলে যাচ্ছে। গরমকাল ছাড়া অন্যসময় বিভিন্ন ধরনের ভ্রাম্যমান ব্যবসা করেন তিনি। আন্দরকিল্লা মোড়ে কথা হয় আরেক শরবত ব্যবসায়ী রাইহানের সাথে। তার বাড়ি বাঁশখালী উপজেলার গুনাগরী এলাকায়। সে সাত বছর ধরে গরমকালে বিভিন্ন আইটেমের শরবত বিক্রি করেন। তার মধ্যে রয়েছ লেবুর শরবত, বেলের শরবত, তোকমার শরবত। প্রতি গ্লাস ১০ টাকা করে ভালোই বিক্রি করছেন তিনি।
বছরের অন্য সময় ফুচকা-চটপটি বিক্রি করেন রাইহান। এ ধরণের পানীয় দেহের জন্য কতটা উপকারী তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা লাল সংকেতই দিয়েছেন। এই পানীয় আদৌ কী পানের উপযোগী? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই কথা হলো মাতৃকা হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রফেসর ডা. জামশেদ আলমের সাথে। তিনি বললেন, ‘রাস্তার ধারে কিংবা ফুটপাতে যেসব শরবত বা জুস বিক্রি হচ্ছে সেগুলো বেশিরভাগই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। ক্লান্তি দুর করতে যারা এসব পান করেন তাদের হেপাটাইটিস ‘এ’ এবং ‘ই’তে আক্রন্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’ এদিকে শরবতের পরিবর্তে অনেকেই আবার বেছে নিচ্ছেন ডাবের পানি, শশা, তরমুজ অথবা আনারসের মত রসালো ফল। ফল খাচ্ছেন কেনো, এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যাংক কর্মকর্তা জসীম আহম্মদ বলেন, ‘আমার জানা মতে ডাবের পানি পান করা নিরাপদ। এটা শরীরের জন্য নিরাপদ। আর এটা পান করলে শরীরে এনার্জি বৃদ্ধি পায়।’ শরবতের পরিবর্তে ফল- এ ব্যাপারে ডা. জামশেদ বলেন, ‘ডাবের পানি পান করা খারাপ না। এতে অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে। তবে এখানেও সাবধান থাকতে হবে। অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় ডাবের পানিতে ‘লোরা জিপাম’ মিশিয়ে অনেকেই ক্রেতাদের অজ্ঞান করে সুযোগের সদ্ব্যবহার করেন। এ জন্য সাবধান থাকতে হবে।’ ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাদের পানি বিশুদ্ধ। আর লেবু, খেজুর, মালটা বা চেরি ফলের শরবত পান করা শরীরের জন্য ভালো। শরবত ব্যবসায়ী বেলায়েত বলেন, ‘যা গরম পড়েছে এতে করে শরবতের বিক্রয় বেশ ভালো হচ্ছে। যত দিন গরম আছে ব্যবসা ভালো হবে, আশা করা যায়।’

No comments

Powered by Blogger.