ইতালি পাঠানোর নামে বিয়ানীবাজারের অর্ধশত পরিবারকে পথে নামিয়েছে দালাল চক্র

ইতালিতে পাঠানোর নাম করে সংঘবদ্ধ দালাল চক্র সিলেটের বিয়ানীবাজারের প্রায় অর্ধশত পরিবারকে পথে নামিয়েছেন। অনেকে সন্তান হারিয়ে শোকে কাতর হয়ে পড়েছেন। ঢাকা থেকে লিবিয়া এরপর ইতালি পৌছানোর প্রলোভন দেখিয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলা কয়েক’জন আদম পাচারকারী দীর্ঘ দিন থেকে এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। গত কয়েক মাসে লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে সাগরে ট্রলার ডুবিতে বিয়ানীবাজারের বেশ কয়েকজন তরুণের প্রাণ হানির ঘটনা ঘটেছে। উঠতি বয়সি যুবক ও কলেজ পড়ুয়া তরুণদের টার্গেট করেই তারা তাদেরকে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রলোভন দেখানোর পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের দেখানো হয় নানা লোভ লালসা। মোটা অংকের টাকার চুক্তির মাধ্যমে প্রথমে লিবিয়া নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর শুরু হয় এসব যুবক ও তরুনদের উপর অমানুষিক নির্যাতন। তাদেরকে কৌশলে অপহরণ করিয়ে তাদের কাছ থেকে আদায় করা হয় মোটা অংকের টাকা। ভূক্তভোগি অনেক পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানিয়েছেন, দালাল চক্র প্রথমে তাদেরকে অল্প দিনের মধ্যে লিবিয়া হয়ে ইতালি পাঠিয়ে দেয়ার জন্য নানা ভাবে প্রলোভন দেখায়। স্বপ্নের দেশে পৌছতে পারলেই সন্তানের জীবনে সুখ শান্তি আসবে এমন আশায় পরিবারের সদস্যরা দালালদের সাথে চুক্তি করেন। দালালরা তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করার পর প্রথমে লিবিয়া নিয়ে যায়। তারা অভিযোগ করেছেন, লিবিয়া নেয়ার পর যাত্রীদের উপর চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন।
সু কৌশলে মাফিয়া দিয়ে অপহরণ করিয়ে এ খবর দেশে পৌছায় দালাল চক্র। পরবর্তীতে নির্যাতনের নানা কাহিনী সাজিয়ে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে আদায় করা হয় মোটা অংকের টাকা। বেশ কয়েকটি পরিবারের সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, বিয়ানীবাজারের চিহ্নিত আদম ব্যবসায়ী আলম, সুমন তরুনদের লিবিয়া হয়ে ইতালী পাঠানোর মূল দায়িত্বে থাকেন। আর অপহরণের পর মুক্তিপণের টাকা আদায়ের কাজে ব্যবহার করা হয় আলমের নিকট আত্মীয় সাইফুরকে। আলম ও সুমন এর বাড়ী মুড়িয়া ইউনিয়নের ছোটদেশ এলাকায় হলেও সে বর্তমানে সিলেট শহরে বসাবাস করছে। আর সাইফুরের বাড়ী একই ইউনিয়নের ঘুঙ্গাদিয়ায়। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক মাসে সাইফুর বিয়ানীবাজারের বিভিন্ন পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণের প্রায় কোটি টাকা আদায় করে একটি কুরিয়ার সার্ভিস ও বিকাশের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়েছে। সাইফুর এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে জানিয়েছেন, আলম ও সুমনের টাকা তিনি উত্তোলন করে কুরিয়ার সার্ভিস ও বিকাশের মাধ্যমে তাদের দেয়া ঠিকানা মতো পাঠিয়ে থাকেন। তিনি জানান, মুক্তিপণের টাকাগুলো সংশ্লিষ্টদের হাতে না পৌছলে আটককৃতরা ছাড়া পান না। লিবিয়া থেকে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আলম ও সুমনের সহযোগিরা বর্তমানে অর্ধ শাতাধিকেরও বেশি যুবককে লিবিয়া থেকে ইতালির উদ্দেশ্যে প্রেরণের জন্য সেখানকার একটি স্থানে জড়ো করেছে। তাদেরকে দু’এক দিনের মধ্যেই ইতালি পৌছে দেয়ার কথা বলে চুক্তির চেয়ে বেশি টাকাও প্রতিটি পরিবারের কাছ থেকে আদায় করছে। অসহায় মানুষজন সন্তানের জীবনের চেয়ে টাকার মূল্য বেশি নয় ; তা ভেবে ধার দেনা করে দালাল চক্রের হাতে টাকা তুলে দিচ্ছেন। এদিকে সম্প্রতি লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে সাগরে ট্রলার ডুবিতে বিয়ানীবাজারের বেশ কয়েকজন তরুণের প্রাণ হানির ঘটনা ঘটেছে। সূত্রটি জানায়, এসব তরুণ ও যুবক আলম ও সুমন চক্রের সাথে চুক্তির মাধ্যমে ইতালি যাওয়ার জন্য রওয়ানা দেন।

No comments

Powered by Blogger.