ব্রেক্সিট নিয়ে বিরল বাকযুদ্ধ

যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের (ব্রেক্সিট) সিদ্ধান্তকে ভালোভাবে নেয়নি সংস্থাটির শীর্ষ কর্মকর্তা ও জোটের বেশির ভাগ দেশের নেতারা। ব্রিটেন আনুষ্ঠানিকভাবে ইইউ ত্যাগের আবেদন জানানোর পর সংস্থাটির নেতারা ব্রিটেনকে কঠিন শিক্ষা দেয়ার ব্রত নিয়েছেন বলেই মনে হচ্ছে। আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরুর আগেই দুপক্ষের মধ্যে রীতিমতো বাকযুদ্ধ শুরু হয়েছে। গত সপ্তাহে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে ও ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ-ক্লদ জাঙ্কারের মধ্যে নৈশভোজ-পূর্ব বৈঠকে তাদের মধ্যে বিপর্যয়কর আলোচনা হয় বলে গণমাধ্যমগুলো তথ্য ফাঁস করে দিয়েছে। এতে দেখা যায়, বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ দুই ইস্যুতে তেরেসা ও জাঙ্কার দুই মেরুতে অবস্থান নেন। এর একটি হল ব্রেক্সিট ত্যাগের জন্য ইইউকে ব্রিটেনের দেয়া ক্ষতিপূরণ- যার পরিমাণ ১০ হাজার কোটি ইউরো বা তারও বেশি হতে পারে এবং অন্যটি হল ব্রিটেনে কর্মরত ইউরোপের অন্যান্য দেশের নাগরিকদের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা। বৈঠকে জাঙ্কার তেরেসাকে বলেন, ব্রেক্সিট ব্রিটেনের জন্য কোনো সফলতা হবে না। বৈঠক শেষে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মারকেলকে ফোন করে জাঙ্কার বলেন, তেরেসার সঙ্গে আলোচনা করে তার মনে হয়েছে ব্রেক্সিট আলোচনা ‘দশ গুণ সংশয়ের’ মধ্যে পড়েছে আর তেরেসা ভিন্ন জগতে বাস করছেন। এরপর দু’পক্ষ আরও বেশি আক্রমণাত্মক অবস্থান নিয়েছে। সিএনএন বলছে, ব্রেক্সিট নিয়ে ইইউ কর্মকর্তারা ‘নোংরা লড়াই’ চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন।
আর ডাউনিং স্ট্রিট যে ভাষায় জবাব দিয়ে চলেছে তাতে ব্রেক্সিট আলোচনার ভবিষ্যৎ নিয়েই শংকা তৈরি হয়েছে। ২৭ দেশের পক্ষে ব্রেক্সিট আলোচনায় নেতৃত্ব দেবে ইউরোপিয়ান কমিশন। তেরেসা মে জাঙ্কারের সমালোচনা করে বলেছেন, তিনি ‘আমাকে একজন নিষ্ঠুর কঠিন নারী’ হিসেবে দেখতে পাবেন। বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘কনজারভেটিভ পার্টির নেতা নির্বাচনের প্রচারে একজন সহকর্মী আমাকে নিষ্ঠুর কঠিন নারী’ আখ্যা দিয়েছিলেন। সে সময় আমি বলেছিলাম, ‘আমাকে এরূপে পরবর্তীকালে যিনি দেখতে পাবেন তিনি হলেন জঁ ক্লদ জাঙ্কার।’ তেরেসা বলেন, আসন্ন আলোচনা কঠিন হবে। তিনি সেই আলোচনায় নেতৃত্ব দেয়ার আশা প্রকাশ করেন। তবে গার্ডিয়ান বলছে, ব্রেক্সিট আলোচনা হবে ১৫ মাস ধরে। প্রতি মাসে এক সপ্তাহব্যাপী এ আলোচনায় কোনো প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিত থাকা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। ইইউ ছাড়তে গুনতে হবে ১০০ বিলিয়ন ইউরো : ইইউ ত্যাগের জন্য যুক্তরাজ্যকে ১০০ বিলিয়ন ইউরো (প্রায় ৯ লাখ কোটি টাকা- বাংলাদেশের প্রায় তিনটি জাতীয় বাজেটের সমান অর্থ) গুনতে হতে পারে। দি ইন্ডিপেনডেন্ট জানায়, ফ্রান্স ও জার্মানি সর্বশেষ ব্রিটেনের কাছে যে অর্থ দাবি করেছে সেটা হিসাব করে এই সংখ্যা নির্ধারণ করেছে বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে রয়েছে কৃষি খাতে ভর্তুকি এবং ইইউর প্রশাসনিক ফি। এর মানে হচ্ছে ইইউ ত্যাগ করার পরও ব্রিটেনকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দিয়ে যেতে হবে। ইইউ সূত্র বিবিসিকে বলেছে, ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া সবচেয়ে বড় লড়াইটা হবে ক্ষতিপূরণ নিয়ে। তবে এখনই সেই অঙ্কটা প্রকাশ করছে না সংস্থাটি। তবে যুক্তরাজ্যের ব্রেক্সিট মন্ত্রী ডেভিড ডেভিস বলেছেন, তারা এই ক্ষতিপূরণ দেবেন না।
ইউনিয়ন ত্যাগের জন্য যুক্তরাজ্যের কাছে এই পরিমাণ অর্থ দাবি করার প্রস্তুতি নিয়েছে ইইউ এমন খবর প্রকাশের পর বুধবার এ কথা জানান ডেভিস। ব্রিটিশ টেলিভিশন চ্যানেল আইটিভিকে ডেভিস বলেন, ‘আমরা ১০০ বিলিয়ন দিচ্ছি না। ইইউ যা চায় আমরা সেটাই দিয়ে দিচ্ছি না। আমরা সেটাই দেব যা আইনগতভাবে আমাদের দেয়া উচিত।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের যা করার আছে তা হল অধিকার ও বাধ্যবাধকতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা।’ এ সময় তিনি জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের জন্য ইইউর করা কোনো বিল ব্রিটিশ সরকার দেখেনি। ডেভিস বলেন, এটা আলোচনার বিষয়। তারা যেটা মনে করছে সেটাই চাচ্ছে আর আমরা যেটা চাচ্ছি সেটাই বলব। তবে আমরা এটা সঠিকভাবে করব। অধিকার ও কর্তব্য নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব।’ অনেক কনজারভেটিভ এমপি যুক্তি দেখাচ্ছে যে, অতীতে ইইউর জন্য ব্রিটেন যে অবদান রেখেছে সেটা বিবেচনায় নিলে সংস্থাটি ব্রিটেনের কাছে কোনো অর্থ দাবি করতে পারে না। হাউস অব লর্ডসের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইনগতভাবে একটি পয়সাও ইইউকে দিতে ব্রিটেন বাধ্য নয়।

No comments

Powered by Blogger.