নির্বাচন সামনে রেখে কৌশলী বিএনপি

আগামীতে সবদলের অংশগ্রহণ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আদায়ে কৌশলে এগোচ্ছে বিএনপি। নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন হিসাব কষতে শুরু করেছে দলটি। ইতোমধ্যে দলের সর্বশেষ সাংগঠনিক অবস্থা জানতে ৫১টি টিমের মাধ্যমে কার্যক্রম প্রায় সম্পন্ন। নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে বিএনপি এক দিকে দ্রুত দল গোছানোর কাজ শেষ করছে, অন্য দিকে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবি আদায় ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা আইনিভাবে লড়ার পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করছেন দলটি একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এই প্রত্যাশায় নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন থেকেই দলীয় মনোনয়ন পেতে সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছেন নেতারা। সিনিয়র নেতাদের পাশাপাশি ছাত্রদলের অনেক সাবেক নেতা এমপি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তারা নিজ নিজ আসনে গিয়ে বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। অতীতে ছাত্রদলের অনেক সাবেক নেতা মনোনয়ন পাওয়ায় তারা আশাবাদী হয়ে উঠছেন। এ দিকে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে তৈরি হচ্ছে একাধিক বলয়। সম্প্রতি নামসর্বস্ব ৫৯টি দল নিয়ে জোট গঠন করেছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপিও বসে নেই। দলটি নির্বাচনের জন্য সবসময় প্রস্তুত। তবে তা অবশ্যই হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। নির্বাচনের সমান সুযোগ ছাড়া বিএনপি কখনোই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে একাধিক নেতা জানিয়েছেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সোমবার নয়া দিগন্তকে বলেন, বিএনপি সরকার পরিচালনাকারী দল। নির্বাচনের জন্য আমাদের আলাদা প্রস্তুতির প্রয়োজন হয় না। আমরা নির্বাচনের জন্য সবসময় প্রস্তুত। ইতোমধ্যে বিএনপি ৫১টি সাংগঠনিক টিমের মাধ্যমে দলের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছে।
এতে দলের অবস্থান ভালো। তবে নির্বাচনের জন্য সমান সুযোগ থাকতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। বিএনপির একাধিক নেতার সাথে আলাপকালে জানা যায়, বিগত দিনে দলের অনেকেই এমপি-মন্ত্রী হয়ে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করলেও দলের দুর্দিনে তাদের রাজপথে দেখা যায়নি। আগামী নির্বাচনে এসব সুবিধাবাদী মনোনয়ন দৌড়ে ছিটকে পড়তে পারেন। গত আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়ায় অনেক তরুণ নেতা বিএনপির হাইকমান্ডের নজর কাড়তে সম হন। ভবিষ্যতে দল ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়া যায়Ñ এমন মেধাবী, তরুণ ও মাঠপর্যায়ের জনপ্রিয় সাবেক ছাত্রনেতাদের একটি তালিকা তৈরি করছে হাইকমান্ড। সংশ্লিষ্টরা জানান, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ছাত্রদলের সাবেক অনেক নেতাই মনোনয়ন পেতে কাজ শুরু করেন। কিন্তু বিএনপি ওই নির্বাচনে অংশ না নিলেও থেমে নেই প্রস্তুতি। তারা নিয়মিত এলাকায় যাচ্ছেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠান ছাড়াও ধর্মীয় উৎসবে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকাবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টার-ব্যানারে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন। দলটির কয়েকজন সিনিয়র নেতা জানান, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির বিভিন্ন কার্যক্রম চলছে। নির্বাচনের আগে ২০ দলীয় জোটকে আরো সক্রিয় করা হবে। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে অন্যান্য রাজনৈতিক জোট ও দলগুলোর সাথেও বিএনপি আলোচনা করবে। তা ছাড়া সদ্যঘোষিত বিএনপির ভিশন-২০৩০ নিয়ে দেশে-বিদেশে সভা-সেমিনারের আয়োজন করা হবে। ভিশন-২০৩০ শিরোনামে বই ছাপিয়ে তা দেশের প্রত্যেকটি ইউনিয়নে পাঠানো হবে। নেতারা বলছেন, বিএনপি মনে করছে আন্দোলন করেই নিরপে সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় করতে হবে। এর বিকল্প কোনো পথ নেই। খালেদা জিয়া ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। জানা গেছে, সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্যে আবদুল লতিফ জনি ফেনী-৩, অ্যাডভোকেট রফিক সিকদার ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল নেত্রকোনা-১ (দুর্গাপুর-কলমাকান্দা), শেখ রবিউল আলম রবি ঢাকা-১০, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক আবদুল মতিন নওগাঁ-৪, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ মুন্সীগঞ্জ-২, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রদল নেতা ড. মিজানুর রহমান মাসুম গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্লাপুর-পলাশবাড়ী), কামাল আনোয়ার আহম্মেদ ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আবদুল লতিফ জনি বলেন, আমি ৩৫ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয়। সবসময় দলের পাশে থেকেছি। দাগনভুঁইয়া-সোনাগাজী এলাকার সর্বস্তরের মানুষ যোগ্য, সৎ এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তিকে এমপি হিসেবে দেখতে চায়।
কোনো ভাড়াটে লোককে নয়। বিএনপি তাকে মনোনয়ন দেবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন। কায়সার কামাল বলেন, বিগত স্থানীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জুলুম নিপীড়ন সত্ত্বে আমার এলাকায় বিএনপির প্রার্থী পাস করেছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনেও ইনশাআল্লাহ বিএনপির পক্ষেই মানুষ ভোট দেবে। তারা প্রস্তুত, শুধু পরিবেশ চায়। ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি নূরুল ইসলাম নয়ন ভোলা-৪, ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি শহিদুল ইসলাম বাবুল ফরিদপুর-২, শেখ মো: শামীম ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২, থেকে মনোনয়ন পেতে কাজ করে যাচ্ছেন। শেখ রবিউল আলম রবি বলেন, আমি ২৫ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। ঢাকা-১০ নির্বাচনী এলাকার লোকজনের সাথে আমার নাড়ির সম্পর্ক আছে। দলের দুঃসময়ে পাশে ছিলাম এখনো আছি। এখন দলই সিদ্ধান্ত নেবে কে সেখানে নির্বাচনের যোগ্য? আবদুল মতিন বলেন, চেয়ারপারসন নতুন ধারার রাজনীতি ও নতুন ধারার সরকার গঠনের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা তরুণ নেতাদের আরো উদ্দীপ্ত করেছে। এলাকার জনগণ আমাকে চায়। আগামী নির্বাচনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মনোনয়নের েেত্র তরুণদের অগ্রাধিকার দেবেন বলে আশা করি। আমিরুজ্জামান খান শিমুল ঝিনাইদহ-৩, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ ঝিনাইদহ-৪, ছাত্রদলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান নরসিংদী-৩ থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আমিরুজ্জামান শিমুল জানান, তিনি ১০ বছর ধরে এলাকায় গণসংযোগ করছেন। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নয়া দিগন্তকে বলেন, তিনবার সরকার পরিচালনাকারী দল বিএনপি নির্বাচন ও আন্দোলনের জন্য সবসময় প্রস্তুত। নির্বাচনের প্রস্তুতি আমাদের আছে। তবে নির্বাচনের মাঠ সমতল হতে হবে। একটি গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ থাকতে হবে। সরকার যদি সমান সুযোগের নির্বাচনী মাঠ তৈরি না করে তাহলে বুঝতে হবে তাদের অশুভ উদ্দেশ্য আছে। আবদুস সালাম আজাদ বলেন, বিগত আন্দোলনে যাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি তাদের মনোনয়ন দেয়া হলে জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে। তবে ত্যাগী ও তরুণদের অগ্রাধিকার থাকবে বলে মনে হয়।

No comments

Powered by Blogger.