শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ

আজ ১৭ মে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার দীর্ঘ প্রবাস জীবন শেষে দেশে ফেরার দিন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার ছয় বছর পর ১৯৮১ সালের এই দিনে দেশে ফিরতে সক্ষম হন তার বড় মেয়ে শেখ হাসিনা। দলীয় সভাপতির ৩৫তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসকে সাড়ম্বরে পালন করার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ঢাকায় বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সপরিবারে অন্য সদস্যদের হত্যার সময় স্বামীর চাকরি সূত্রে জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন শেখ হাসিনা। স্বামী-সন্তানের পাশাপাশি ছোট বোন শেখ রেহানাও সে সময় জার্মানিতে তার সঙ্গে অবস্থান করায় বেঁচে যান তারা। এরপর ছয় বছর এদেশে-ওদেশে কাটিয়ে দেন শেখ হাসিনা-ড. ওয়াজেদ দম্পতি। আর শেখ রেহানা চলে যান লন্ডনে। আওয়ামী লীগের ১৯৮১ সালের সম্মেলনে দলের সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর দুই শিশু সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ছোট বোন শেখ রেহানার কাছে রেখে এ দেশে গণতন্ত্র আর প্রগতিশীলতার রাজনীতি ফেরাতে জীবনে ঝুঁকি নিয়ে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা। কিন্তু সেদিনের দিনটি এমন নিষ্কলুষ ছিল না। রাজনীতির মতোই প্রকৃতিও সেদিন ছিল ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ। দিনটি ছিল রোববার। ছিল কালবৈশাখীর হাওয়া, বেগ ছিল ঘণ্টায় ৬৫ মাইল। প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টি আর দুর্যোগও সেদিন গতিরোধ করতে পারেনি গণতন্ত্রকামী লাখ লাখ মানুষের মিছিল। গ্রাম-গঞ্জ-শহর-নগর-বন্দর থেকে অধিকারবঞ্চিত মুক্তিপাগল জনতা ছুটে এসেছিল রাজধানী ঢাকায়, তাদের একমাত্র আশার প্রদীপ বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকারী শেখ হাসিনাকে বরণ করতে। মুষলধারার বৃষ্টি-বাদল উপেক্ষা করে তারা বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিল ‘নেত্রী’ কখন আসবেন। অবশেষে বিকাল ৪টায় কুর্মিটোলা বিমানবন্দর দিয়ে জনসমুদ্রের জোয়ারে এসে পৌঁছান শেখ হাসিনা। দীর্ঘ সাড়ে  ছয় বছর পর দেশের মাটিতে পা রাখেন তিনি। তাকে এক নজর দেখার জন্য কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শেরেবাংলা নগর পর্যন্ত রাস্তাগুলো রূপ নিয়েছিল জনসমুদ্রে। দেশের মাটিতে পা দিয়ে লাখ লাখ জনতার সংবর্ধনার জবাবে শেখ হাসিনা সেদিন বলেছিলেন,
‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি; বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে আমার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির জনকের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই।’ তার আগমন উপলক্ষে স্বাধীনতার অমর স্লোগান ‘জয় বাংলা’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত ছিল ঢাকার আকাশ-বাতাস। জনতার কণ্ঠে বজ নিনাদে ঘোষিত হয়েছিল ‘হাসিনা তোমায় কথা দিলাম- পিতৃ হত্যার বদলা নেব’। সেদিন অবিরাম মুষলধারে বারি-বর্ষণে যেন ধুয়ে-মুছে যাচ্ছিল বাংলার মাটিতে পিতৃ হত্যার জমাট বাঁধা পাপ আর কলঙ্কের চিহ্ন। শেখ হাসিনা দেশে প্রত্যাবর্তনের পর নেতারা তার হাতে তুলে দেন দেশের সর্ববৃহৎ ও ঐতিহ্যের সাফল্যগাথা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের পতাকা। এর পর থেকে শেখ হাসিনা দলীয় কাউন্সিলে টানা আট বার নির্বাচিত হয়ে দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এবারসহ তিনবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। যথাযথ প্রক্রিয়ায় বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি তার দুই সন্তানকেও সুশিক্ষিত করে তুলেছেন। ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় আজ তথ্য-প্রযুক্তিবিদ। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষা নিয়েছেন। মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অটিজম বিশেষজ্ঞ হিসেবে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করে ইতিমধ্যেই সুনাম কুড়িয়েছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যথাযোগ্য মর্যাদায় দলীয় সভাপতির স্বদেশে ফেরার দিনটি উদযাপনের জন্য দলের সব স্তরের নেতাকর্মী ও জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
কর্মসূচি : দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে আওয়ামী লীগ। সকাল ১০টায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা গণভবনে গিয়ে শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানাবেন। দুপুর আড়াইটায় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের সভাপতিত্বে রাজধানীর খামারবাড়ীতে কৃষিবিদ ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা। এছাড়া ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে র‌্যালির আয়োজন করবে। আর সহযোগী সংগঠন যুবলীগ এ উপলক্ষে মঙ্গলবার থেকেই ৩ দিনব্যাপী চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে।

No comments

Powered by Blogger.