আধিপত্য বিস্তার নিয়েই দুই জনকে গলা কেটে হত্যা

কুমিল্লার মুরাদনগরে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে দু’জনকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। বালু ও মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ এবং আধিপত্য বিস্তার নিয়ে রহিমপুর (নয়াকান্দি) গ্রামে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ সংঘর্ষ হয়। জোড়া খুনের ঘটনায় এলাকায় এখনও উত্তেজনা ও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মোতায়েন করা আছে অতিরিক্ত পুলিশ। এ ঘটনায় বুধবার ইউপি সদস্য আশরাফ বাদী হয়ে ২৯ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে থানায় মামলা করেছেন। বিকাল পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সংঘর্ষে নিহতরা হলেন : ফারুক (২৫) ও সাইদুল ইসলাম (২৭)। ফারুক মুরাদনগর উপজেলার রহিমপুর গ্রামের খোরশেদ আলমের ছেলে। আর সাইদুল একই গ্রামের হানিফ মিয়ার ছেলে। তারা আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। এ ঘটনায় ইউপি সদস্যসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, মাদক ও বালু ব্যবসা নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এই বিরোধ মঙ্গলবার রাতে সংঘর্ষে রূপ নেয়। এতে প্রতিপক্ষের লোকজন ফারুক ও সাইদুলকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে। বিবদমান দুই গ্রুপ হচ্ছে নবীপুর পশ্চিম ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড মেম্বার ও আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম এবং কবির-আলাউদ্দিন-আনিস গ্রুপ। মাস খানেক আগে আশরাফ মেম্বার ১০ কেজি গাঁজাসহ কবির-আলাউদ্দিন-আনিস গ্রুপের অনুসারী একই গ্রামের হারুন মিয়ার ছেলে গাঁজা সাইদুরকে পুলিশে ধরিয়ে দেন। সাইদুর বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। এ ঘটনায় কবির-আলাউদ্দিন-আনিস গ্রুপ আশরাফ মেম্বার গ্রুপের ওপর ক্ষুব্ধ হয়। এ ছাড়া আশরাফ মেম্বার গত ৪ দিন আগে গোমতী নদীতে বালু উত্তোলনের ড্রেজার বসান। এ নিয়ে দু’গ্রুপের মধ্যে বিরোধ আরও তীব্র আকার ধারণ করে। মঙ্গলবার রাতে কবির-আলাউদ্দিন-আনিস গ্রুপের লোকজন রহিমপুর এলাকায় আশরাফ মেম্বারের ড্রেজারের কেয়ারটেকার রুবেলকে মারধর করে। খবর পেয়ে আশরাফ মেম্বারের ভাতিজা সাইদুল ইসলাম সেখানে গেলে কবির, আনিস, আলাউদ্দিন, আবু মুছা, শাহ আলম, কনু মিয়াসহ কয়েকজন তাকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে। খবর পেয়ে আশরাফ মেম্বার ও তার চাচাতো ভাই ফারুক তাদের লোকজন নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলে তাদের ওপরও হামলা চালায় প্রতিপক্ষ। দু’পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বেধে যায়। একপর্যায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয় ফারুককে। ধারালো অস্ত্রের কোপে আশরাফ মেম্বারের একটি আঙুল হাত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আহত হন দু’গ্রুপের আরও অন্তত ১০ জন। তাদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বুধবার বিকালে আশরাফ মেম্বার বাদী হয়ে কবির হোসেন, আলাউদ্দিন, আনিস, আবু মুছা, শাহ আলম, কনু মিয়া, ফারুক মিয়া, জাকির হোসেন, জাহের মিয়াসহ ২৯ জনকে এজাহারনামীয় এবং আরও ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে থানায় মামলা করেন।
পুলিশ মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার বিকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ৯ জনকে গ্রেফতার করে। তারা হলেন : আনিস মিয়া, কনু মিয়া, ফারুক মিয়া, দুর্বাজ ওরফে খোকন, মোমেন মিয়া, কামরুল হাসান, আমজাদ মোল্লা, খোকন মিয়া ও সুজন। বাকিরা ঘটনার পর থেকে পলাতক। মামলার বাদী আহত আশরাফ মেম্বারের অভিযোগ, একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি কবির-আলাউদ্দিন ও তাদের লোকজনের অপকর্মের প্রতিবাদ করায় তাকে একাধিকবার হত্যার চেষ্টা করা হয়। ড্রেজার স্থাপন নিয়ে বিরোধের জেরে তাকে ফের হত্যার পরিকল্পনা করে প্রতিপক্ষ। এতে সফল হতে না পেরে তার পক্ষের দু’জনকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। নিহত সাইদুলের বাবা হানিফ মিয়া বলেন, প্রতিপক্ষের হত্যার টার্গেট ছিল আশরাফ মেম্বার। কেয়ারটেকারের মারধরের খবর পেয়ে সাঈদুল সেখানে গেলে তাকে হত্যা করা হয়। তিনি ছেলের ঘাতকদের গ্রেফতার ও ফাঁসি দাবি করেন। ময়নাতদন্তের পর দু’জনের লাশ বিকালে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এদিকে জোড়া খুনের ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। মুরাদনগর থানার ওসি এসএম বদিউজ্জামান জানান, এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মঙ্গলবার রাত থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মো. আবদুল মোমেন জানান, ঘটনার ভয়াবহতা দেখে দু’জনকে হত্যার বিষয়টি পরিকল্পিত মনে হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এদিকে বুধবার বিকালে কুমিল্লা (উত্তর) জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেন, সংঘর্ষ ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ব্যক্তিগত বিরোধ থেকেই এ ঘটনা ঘটেছে।

No comments

Powered by Blogger.