রাডার ক্রয় দুর্নীতি মামলায় খালাস পেলেন এরশাদ

আসামি ইউনাইটেড ট্রেডার্স লিমিটেডের পরিচালক একেএম মুসা মামলার চার্জ (অভিযোগ) গঠনের পর পলাতক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। রায়ে আদালত বলেন, তৎকালীন প্রতিরক্ষা সচিব আনিসুজ্জামানকে আদালতে সাক্ষ্য দিতে উপস্থিত করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। অপরদিকে মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়া শাহদাদ আলীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণকারী ম্যাজিস্ট্রেটকেও আদালতে উপস্থিত করতে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। এছাড়া কে (কোন আসামি) কত টাকা আত্মসাৎ করেছেন, কিভাবে আত্মসাৎ করেছেন, কারা এ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত এবং কিভাবে যোগসাজশ করেছেন- এসব বিষয়ও রাষ্ট্রপক্ষ যথাযথভাবে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। আদালত আরও বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ সন্দেহাতীতভাবে এরশাদসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে। তাই মামলার দায় থেকে সব আসামিকে বেকসুর খালাস দেয়া হল। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে বিচারক এ রায় ঘোষণা করেন। রায় উপলক্ষে দুপুর থেকেই দলের নেতাকর্মীরা পুরান ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণে ভিড় করেন। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আদালতে হাজির হন। এ সময় খালাস পাওয়া অন্য আসামিরাও আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে তিনি আদালত প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।
এ সময় তিনি রায়ের ব্যাপারে সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আইনজীবী শেখ মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, সাক্ষ্য, প্রদর্শনী, আলামত, রেকর্ড- এসব পর্যালোচনা করে আদালত একটি সুন্দর রায় প্রস্তুত করেছেন। আদালত থেকে আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যে নির্দোষ তা আবারও প্রমাণ হল। তবে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মীর আহমেদ আলী সালাম যুগান্তরকে বলেন, রায় পর্যালোচনা করার পর কমিশন এ ব্যাপারে (রায়ের বিরুদ্ধে আপিল) সিদ্ধান্ত নেবে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে আদালতে আসেন তার ভাই জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, পার্টির সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু প্রমুখ। আদালত সূত্র জানায়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে রাডার মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশ উপেক্ষা করে ফ্রান্সের থমসন সিএসএফ কোম্পানির উন্নতমানের রাডার না কিনে অসৎ উদ্দেশ্যে বেশি দামে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্টিং কোম্পানির রাডার ক্রয় করেন। এতে সরকারের ৬৪ কোটি ৪ লাখ ৪২ হাজার ৯১৮ টাকা আর্থিক ক্ষতি করে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নিজে ও অন্যদের লাভবান করেছেন। এ অভিযোগে ১৯৯২ সালের ৪ মে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো। তদন্ত শেষে ১৯৯৪ সালের ২৭ অক্টোবর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ চারজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করা হয়। ১৯৯৫ সালের ১২ আগস্ট এ মামলায় চার্জ গঠন করেন আদালত। মামলায় ৩৮ সাক্ষীর মধ্যে ১২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.