ওদের দেখে আঁতকে উঠতে হয়

ওঁদের শরীর ঝলসে গেছে। যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। দেখলে আঁতকে উঠতে হয়। বিষণ্ন স্বজনেরা পাশে বসে আছেন। চলছে চিকিৎসকদের ছুটোছুটি আর ব্যস্ততা। দিনাজপুর শহরের যমুনা অটো রাইস মিলে গতকাল বুধবার সকালে বয়লার বিস্ফোরণে গুরুতর আহত শ্রমিকেরা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। সেখানে গিয়েই এমন চিত্র দেখা গেল। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরিফুল (৩০) মারা যান। গতকাল মারা যান রঞ্জিনা (৪০) ও মোখলেস (৪৮)। এ নিয়ে মৃত শ্রমিকের সংখ্যা দাঁড়াল তিনে। বয়লার বিস্ফোরণে চিকিৎসাধীন দগ্ধ শ্রমিকেরা হলেন রঞ্জিত (৫০), মুকুল (৪৫), মুন্না (৩২), রোস্তম (৪৫), শরিফুল (১৯), উদয় চন্দ্র (২২), দুলাল (৩৫), সাইদুল (৪০), বীরেন্দ্র (৫০), মাজেদুল (৩৫), শফিকুল (৪৫), এনামুল (৪৫), দেলোয়ার (৫০), বাদল (৩৬), আনিসুল (৪৫), মনোরঞ্জন (৩৬)। তাঁদের মধ্যে ১৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। হতাহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই বয়লারের শ্রমিক। বার্ন ইউনিটের দায়িত্বে নিয়োজিত চিকিৎসক মারুফুল ইসলাম বলেন, ১৩ জনের শরীরের ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ ঝলসে গেছে। আর অন্যদের ২০ থেকে ৪০ শতাংশ ঝলসে গেছে। বার্ন ইউনিটে দগ্ধ দুলালকে কোলে নিয়ে আগলে বসে আছেন তাঁর মামা উজ্জ্বল রায়।
দুলালের শরীরের এমনই অবস্থা যে বিছানায় শুইয়ে রাখা সম্ভব নয়। মামার কোলে বসে দুলাল যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। মুখে কোনো কথা নেই। মামা বললেন, সারা রাত ধরে এভাবেই বসে ছিলেন। তিনিও ঘুমাতে পারেননি। এমনি করে পালাক্রমে কাউকে না কাউকে ধরে থাকতে হচ্ছে। মুন্নাকে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে। জ্ঞান নেই। স্ত্রী লিলি বেগম স্বামীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। স্বামীই একমাত্র উপার্জনক্ষম। তিন সন্তান নিয়ে ভবিষ্যতে কী হবে, তা ভাবতে গেলে বুকটা ধড়ফড় করে ওঠে। অল্প দগ্ধ শফিকুলের শয্যায় ঘুমিয়েছে তাঁরই তিন বছরের একমাত্র সন্তান। পাশে থাকা স্ত্রী পারভীন আক্তার বলেন, ‘স্বামীর এমন অবস্থায় সংসার কীভাবে চলবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি।’ দগ্ধ সাইদুল ইসলামের হাত ধরে বসে আছেন স্ত্রী পারভীন খাতুন। তিনি বলেন, ‘আমি এখন বড় অসহায়। স্বামীর এমন অবস্থায় চোখ-মুখ ঝাপসা হয়ে আসছে।’ বার্ন ইউনিটের দায়িত্বে নিয়োজিত সহকারী অধ্যাপক মারুফুল ইসলাম বলেন, দগ্ধ শ্রমিকদের চিকিৎসার যাবতীয় ওষুধ হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে। হাসপাতালে পরিচালক মউদুদ আহমেদ বলেন, জরুরি চিকিৎসক দলের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.