পিয়ংইয়ংকে নিয়ন্ত্রণে চীনেই ভরসা যুক্তরাষ্ট্রের

টানা কয়েক দিনের সামরিক হুমকি-ধমকির পর উত্তর কোরিয়া বিষয়ে পূর্বসূরিদের নীতিতেই ফিরে গেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর তা হচ্ছে- পিয়ংইয়ংকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চীনের ওপর ভরসা করা। মঙ্গলবার মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস জানিয়েছেন, ‘কোরীয় উপদ্বীপকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করতে আমরা চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি। এখানে আমাদের সবার একই ধরনের স্বার্থ রয়েছে।’ ট্রাম্পের কর্মকর্তারা বলছেন, উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা থেকে নিবৃত্ত করতে বেইজিং প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করবে বলে তারা আশা করছেন। খবর এএফপির। কোরীয় উপদ্বীপ অভিমুখী যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী রণতরী এবং পিয়ংইয়ংয়ের ষষ্ঠ পরমাণু বোমা পরীক্ষার প্রস্তুতিকে ঘিরে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়েছিল। দু’পক্ষের পাল্টাপাল্টি হুমকিতে সৃষ্ট উত্তেজনার জেরে ধারণা করা হয়েছিল যে কোনো সময় যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে। এরই মধ্যে শনিবার উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা কিম ইল-সাংয়ের ১০৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দেশটিতে ‘সূর্যের দিন’ (দ্য ডে অব সান) উদ্যাপন করা হয়। এ সময় বিশাল প্যারেড অনুষ্ঠান করে এবং সামরিক অস্ত্র প্রদর্শনী করে দেশটির সক্ষমতা জানান দেয় কর্তৃপক্ষ। পিয়ংইয়ংয়ের ঘোষণায় বলা হয়, তার দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে পরমাণু হামলার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। এমন পরিস্থিতিতে দু’পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করে চীন।
বুধবার বিবিসি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস কার্ল ভিনসন ও বহরের অন্যান্য যুদ্ধজাহাজ উত্তর কোরিয়ার দিকে যাচ্ছে না, বরং উল্টোদিকে যাচ্ছে। ৮ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী জানিয়েছিল, শক্তি প্রদর্শন করে নতুন অস্ত্র পরীক্ষা থেকে উত্তর কোরিয়াকে বিরত রাখতে তাদের নৌ-স্ট্রাইক গ্রুপ কার্ল ভিনসন সিঙ্গাপুর থেকে পূর্বসূচি অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়ার দিকে না গিয়ে উল্টোদিকে কোরীয় উপদ্বীপের দিকে রওনা হয়েছে। গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও বলেছিলেন, ‘উত্তর কোরিয়ার উদ্দেশে একটি আর্মাডা (নৌবহর) পাঠানো হয়েছে।’ কিন্তু বাস্তব হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ওই নৌ-স্ট্রাইক গ্রুপটি গত কয়েকদিনে প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে না গিয়ে ভারত মহাসাগরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই পথে বর্তমানে সুন্দা প্রণালী পার হচ্ছে নৌবহরটি। উত্তর কোরিয়ার দিকে না যাওয়ার বিষয়টি ‘ইচ্ছাকৃত ছলচাতুরী’ কিনা তা পরিষ্কার নয় বলে মন্তব্য করেছে বিবিসি। বিবিসির কোরিয়া সংবাদদাতা স্টিফেন ইভান্স জানিয়েছেন, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনকে ভয় দেখানোর পরিকল্পনা করার পর সম্ভবত পরিকল্পনা পরিবর্তন করা হয়েছে অথবা কোনো যোগাযোগ ব্যর্থতার কারণে এমন হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, মৌখিক হুমকি-ধমকি যতই দেয়া হোক, বাস্তবে যুদ্ধে যেতে আগ্রহী নয় যুক্তরাষ্ট্র। চলতি মাসের শুরুতে ফ্লোরিডায় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে চীন আমাদের পূর্ণ সহায়তা দেবে। তিনি বলেন, বেইজিংয়ের কাছ থেকে এত ইতিবাচক সাড়া আমি ছাড়া আর কোনো প্রেসিডেন্ট পাননি।’ তবে গত সপ্তাহে ট্রাম্প বলেন, চীন যদি উত্তর কোরিয়ার ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র একাই ব্যবস্থা নেবে।’ জাপান সফররত মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স সোমবার বলেন, ‘কিম জং উনের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর। আমরা আশা করি, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপে পিয়ংইয়ং তার পরমাণু কর্মসূচি ত্যাগে বাধ্য হবে।
তা না হলে আমরা বসে থাকব না।’ আগের দিন দক্ষিণ কোরিয়া সফর করে পেন্স বলেন, ‘উত্তর কোরিয়ার সামরিক হুমকির বিপরীতে মার্কিন প্রশাসন দীর্ঘদিন থেকেই কৌশলগত ধৈর্য দেখিয়ে এসেছে। কিন্তু এ বিষয়ে ধৈর্য ধরার দিন শেষ হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আলোচনার মাধ্যমে এ অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আগ্রহী। তবে প্রয়োজন হলে যে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হবে। বিকল্প সব পন্থাই বিবেচনা করা হচ্ছে।’ কয়েক মাস আগে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের এক নিষেধাজ্ঞায় স্বাক্ষর করে চীন। ফেব্রুয়ারিতে পিয়ংইয়ং থেকে কয়লা আমদানিও বন্ধ করে। কিন্তু বণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক এখনও চালু আছে। ফাউন্ডেশন অব ডিফেন্স ও ডেমোক্রেসির গবেষক অ্যান্থনি রোজিরো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যদিও চীনের ওপর ভরসা করছে, তবে আমি এখনও মনে করি না, বেইজিং উত্তর কোরিয়ার ওপর প্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি করবে।’ এদিকে চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা উত্তর কোরিয়ার তৎপরতা নিয়ে গভীর উদ্বিগ্ন। বুধবার চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লু কাং বলেন, পিয়ংইয়ংয়ের পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্প নিয়ে বেইজিং গভীর উদ্বেগ জানাচ্ছে। দিনকয়েক আগে বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে উত্তর কোরিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়ে যাব। প্রয়োজনে প্রতি সপ্তাহে পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা করব।’ ওই সাক্ষাৎকারের প্রতি ইঙ্গিত করে চীনা মুখপাত্র বলেন, চীন যে কোনো ধরনের উস্কানিমূলক কথা ও তৎপরতার বিরুদ্ধে। উত্তেজনা বাড়ায় এমন কোনো পদক্ষেপ বেইজিং সমর্থন করে না।

No comments

Powered by Blogger.