যে কোনো সময় মারা যেতে পারি, স্বৈরাচার হব না

সংবিধান পরিবর্তন করে ব্যাপক ক্ষমতা পেলেও স্বৈরাচারী হয়ে যাবেন না বলে মন্তব্য করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান। মঙ্গলবার আঙ্কারার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। গণভোটে বিজয়ের পর এটাই ছিল তার প্রথম কোনো সাক্ষাৎকার। এরদোগান জানান, গণভোটে পাস হওয়া সংবিধান সংশোধনের বিষয়টি তার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে জড়িত নয়। এ বিজয় ব্যক্তির ক্ষমতা বাড়াবে না; বরং তুরস্কের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করবে। তিনি বলেন, ‘আমি অবশ্যই একটি মরণশীল সত্তা। যেকোনো সময় মারা যেতে পারি।’
রোববার তুর্কি সংবিধানে ১৮টি সংশোধন আনার লক্ষ্যে এক গণভোটে অংশ নেয় দেশটির জনগণ। এতে সংশোধনের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট বিজয়ী হয়। এ বিজয়ের ফলে সংসদীয় ব্যবস্থা থেকে তুরস্ক একটি পূর্ণ রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থায় পরিণত হবে। এরদোগানের ভাষায়, ‘এটি একটি ব্যবস্থার পরিবর্তন। তুরস্কের গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটি রূপান্তর।’ নতুন ক্ষমতা পেয়ে এরদোগান স্বৈরাচারী হয়ে যাবেন- বিরোধীদের এম.ন অভিযোগ নাকচ করে এরদোগান বলেন, ‘কোথাও স্বৈরতন্ত্রের কিছু নেই। এখানে ব্যালট বাক্স ছিল। জনগণের কাছ থেকে গণতন্ত্র নতুন শক্তি পেয়েছে। এটাকে আমরা বলি জাতীয় ইচ্ছা। যেখানে স্বৈরতন্ত্র থাকে সেখানে প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতি থাকে না।’ গণভোটে খুব সামান্য ভোটের ব্যবধানে জয়ী হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি ফুটবল ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে ওঠে এসেছি। খেলায় জয় জয়ই। ১-০ গোলে জিতলেও জয়, আবার ৫-০ গোলে জিতলেও জয় হিসেবেই বিবেচিত হবে।’ ইউরোপীয় ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, ইইউ তুরস্ককে ৫৪ বছর ধরে ঝুলিয়ে রেখেছে। এটা তাদের ওয়াদা ছিল যে, তুরস্ককে অন্তর্ভুক্ত করে নেবে। তাদের শর্ত পূরণ করতে আমরা সবকিছুই করেছি। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে কথা রাখতে। তারা কথা রাখেনি। এখন দেখতে চাই তারা কী পদক্ষেপ নেয়। নির্বাচনে জয়ের জন্য তুরস্কের প্রেসিডেন্টকে অভিনন্দন জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের ইঙ্গিত দিয়ে এরদোগান বলেন, ‘আমাদের মধ্যে সুন্দর কথোপকথন হয়েছে।
এখন আমরা একটি মুখোমুখি বৈঠকের অপেক্ষায় আছি। গণভোটের পর ট্রাম্পের ফোনকল আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমাদের দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই আমরা।’ তুরস্কের বর্তমান সংবিধানটি আশির দশকে সামরিক সরকারের শাসনামলে পাস হয়েছিল। এরপর থেকে বেশ কয়েকবার সংশোধন করা হলেও এখনও সামরিক সরকারের ছায়া কাটেনি। ফলে সংবিধান সংশোধনে গণভোটের আয়োজন করে দেশটি। এতে ৫১ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ সংবিধান সংশোধনের পক্ষে রায় দেয়। বিরোধীদের অবশ্য অভিযোগ, এতে একচ্ছত্র ক্ষমতার মালিক হয়ে উঠবেন এরদোগান। নতুন সংবিধান তাকে স্বৈরাচারের দিকে নিয়ে যাবে বলেও আশঙ্কা তাদের। তবে এরদোগান সমর্থকরা মনে করেন, তুরস্ককে আরও নিরাপদ ও স্থিতিশীল করতে সংবিধানে সংশোধন দরকার। এরদোগানের নেতৃত্বে গত ১৪ বছরে দেশটিতে ‘উল্কার বেগে’ অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে। ২০০৩ সালে যেখানে তুর্কিদের মাথাপিছু আয় ছিল ৩ হাজার মার্কিন ডলার, ২০১৭ সালে তা এসে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার মার্কিন ডলারে।
এরদোগানকে পুতিনের অভিনন্দন : গণভোটে বিজয়ী হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মঙ্গলবার পুতিন টেলিফোন করে এরদোগানকে শুভেচ্ছা জানান। ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, গণভোটে সফলভাবে উতরে যাওয়ার জন্য এরদোগানকে অভিনন্দন জানান প্রেসিডেন্ট পুতিন। তুরস্কের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আনাদোলু জানায়, টেলিফোনে দুই নেতা রুশ-তুর্কি সম্পর্ক দৃঢ় করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বিশ্লেষকদের মতে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না হলে আঙ্কার মস্কোর দিকে ঝুঁকে পড়বে।

No comments

Powered by Blogger.