একদিনে ২৯ জনের ফাঁসির রায়

একদিনে ফাঁসির রায় ঘোষণা করা হলো ২৯ জনের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে পাঁচ মামলায় ২৪ জনের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা হয়েছে নিম্ন আদালতে। আর একটি ডেথরেফারেন্স মামলায় পাঁচ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। সিলেটে শিশু আবু সাঈদ হত্যা মামলায় পুলিশ সদস্য, ওলামা লীগ নেতাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। কাপাসিয়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জালাল উদ্দিন সরকার হত্যা মামলায় ১১ জন আসামির মধ্যে সবার বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় ঘোষণা করেছেন আদালত। নারায়ণগঞ্জে দুই স্কুল শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলায় আদালত ৫ জনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে। চট্টগ্রামের একটি আদালত বোয়ালখালীতে  সিএনজি অটোরিকশা চালক ইউছুফকে খুনের দায়ে ৪ জনের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় দেয়। দৌলতপুরে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।
সিলেট অফিস জানায়, শিশু আবু সাঈদ হত্যা মামলায় রায় ঘোষণা করেন সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আব্দুর রশিদ। তিন আসামির বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন তিনি। রায়ের পর আদালত প্রাঙ্গণেই কান্নায় ভেঙে পড়েন আসামিরা। তবে তাদের কান্না ছাপিয়ে পরিবারসহ জনতা উল্লাস প্রকাশ করেছে। এ রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে দাবি করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবীরা। সন্তোষ প্রকাশ করেছে পরিবারও। তবে, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।
রায়ে দণ্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছে বিমানবন্দর থানার বরখাস্ত হওয়া কনস্টেবল এবাদুর রহমান পুতুল, র‌্যাবের কথিত সোর্স আতাউর রহমান গেদা ও সিলেট জেলা ওলামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম রাকিব। এছাড়া জেলা ওলামা লীগের প্রচার সম্পাদক মুহিবুর রহমান মাছুমকে বেকসুর খালাস প্রদান করেছেন আদালত। মাছুম দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর ৯ই নভেম্বর আদালতে এসে আত্মসমর্পণ করেন। আসামিদের প্রথমে অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির জন্য এ মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়। একই সঙ্গে এক লাখ টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে। অন্যদিকে সাঈদকে অপহরণ করে হত্যার জন্য দণ্ডবিধিতে তাদের মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। চলতি বছরের ১১ মার্চ সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সিলেট নগরীর রায়নগর থেকে স্কুলছাত্র আবু সাঈদকে (৯) অপহরণ করা হয়। এরপর ১৪ মার্চ রাত সাড়ে ১০টায় নগরীর বিমানবন্দর থানার পুলিশ কনস্টেবল এবাদুর রহমান পুতুলের কুমারপাড়াস্থ ঝর্ণারপাড় সবুজ-৩৭নং বাসার ছাদের চিলেকোঠা থেকে সাঈদের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। স্কুল থেকে ফেরার পথে সিলেট নগরীর দর্জিবন্ধ বসুন্ধরা এলাকার ৭৪নং বাসার বাসিন্দা আবদুল মতিনের ছেলে রায়নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র সাঈদকে অপহরণ করা হয়। অপহরণের পর সাঈদের বাবা ও মামার কাছে ফোন করে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। অন্যথায় সাঈদকে হত্যা করা হবে বলেও হুমকি দেয় তারা। এরপর সাঈদের বাবা ও মামা কোতোয়ালি থানায় গিয়ে জিডি দায়ের করেন। অপহরণের ৪ দিন পর ১৪ই মার্চ দিবাগত রাতে পুলিশ কনস্টেবল এবাদুরের ভাড়া বাসা থেকে সাঈদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এদিকে, মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে কনস্টেবল এবাদুরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার মোবাইল ফোনে মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছিল। তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতেই র‌্যাবের কথিত সোর্স আতাউর রহমান গেদা, সিলেট জেলা ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম রাকিবকেও আটক করে পুলিশ। তবে পলাতক থাকে জেলা ওলামা লীগের প্রচার সম্পাদক মাহিব হোসেন মাসুম। বরখাস্ত হওয়া কনস্টেবল এবাদুর রহমান একসময় সাঈদদের পাশের বাসায় ভাড়া থাকতেন। এ কারণে অপহরণের পর এবাদুর রহমানকে সাঈদ চিনে ফেলায় তারা খুন করে শিশুটিকে। সাঈদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার বাবা মতিন মিয়া বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় আটক তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। হত্যাকাণ্ডের প্রায় ৬ মাস পর গত ২৩শে সেপ্টেম্বর সিলেট মহানগর হাকিম প্রথম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) আবদুল আহাদ চৌধুরী। মামলাটি তদন্ত করেন কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসাইন। এর আগে প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন কোতোয়ালি থানার এসআই মাসুদ। গত ৭ই অক্টোবর অভিযোগপত্রের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। গত ২৯শে অক্টোবর সাঈদ অপহরণ ও হত্যা মামলা সিলেট মহানগর হাকিম প্রথম আদালত থেকে সিলেট নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। ওইদিন আলোচিত এই হত্যা মামলায় ৮ই নভেম্বর চার্জ গঠনের তারিখ নির্ধারণ করে আদালত। কিন্তু ৮ই নভেম্বর চার্জ গঠিত হয়নি। পরে ১৭ই নভেম্বর নগরীর বিমানবন্দর থানার কনস্টেবল (বরখাস্তকৃত) এবাদুর রহমান পুতুল, র‌্যাবের কথিত সোর্স আতাউর রহমান গেদা, সিলেট জেলা ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম রাকিব ও প্রচার সম্পাদক মুহিবুর রহমান মাছুমের বিরুদ্ধে চার্জ গঠিত হয়। গত ১৯শে নভেম্বর থেকে আলোচিত সাঈদ হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। টানা ৬ কার্যদিবসে সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে গত ২৬শে নভেম্বর শেষ হয় মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ কাজ। গতকাল রোববার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের তারিখ ধার্য করেন আদালত। রায় ঘোষণার পর আদালত থেকে বেরিয়ে এসে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট আবদুল মালেক মানবজমিনকে জানিয়েছেন, রায়ে ন্যায় বিচার প্রতিফলন হয়েছে। তিনজনের দোষ আদালতে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের দুইবার করে ফাঁসির রায় ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেন, আদালতে ৩৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। সুতরাং আদালত পর্যাপ্ত সময় নিয়ে বিচার কাজ চালিয়েছেন। এদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবী শাহ আশরাফ মানবজমিনকে জানিয়েছেন, তারা আদালতে ন্যায় বিচার পাননি। তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। তবে, রায় ঘোষণার পর আদালত প্রাঙ্গণে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে সাঈদের পরিবার। নিহত সাঈদের পিতা মতিন মিয়া জানিয়েছেন, আদালতের রায়ে তিনি খুশি। এ রায় দ্রুত বাস্তবায়ন চান তিনি। আর মামা জয়নাল আবেদীন জানিয়েছেন, আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি। এখন দ্রুত রায় কার্যকর করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, এই তিন আসামি ঘাতক নয়, নরপশু। ফুলের মতো নিষ্পাপ শিশুটিকে খুন করতে তাদের হাত কাঁপলো না। এ সময় আদালত এলাকায় শিশু আবু সাঈদের সহপাঠি ও শিক্ষকরা আনন্দ প্রকাশ করেন। এদিকে, রায় ঘোষণার পর কড়া নিরাপত্তায় আসামিদের আদালত প্রাঙ্গণ থেকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এ সময় আদালত এলাকায় কাঁদে আসামিরাও। তবে তাদের কান্না মিলিয়ে গিয়েছিল জনতার উল্লাসে।
কাপাসিয়ার ১১ জনের ফাঁসি
কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, কাপাসিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জালাল উদ্দিন সরকার (৩৭) হত্যা মামলায় ১১ আসামির বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে আদালত। গতকাল বেলা আড়াইটায় গাজীপুর জেলার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-১ ফজলে এলাহী ভূইয়া এ রায় প্রদান করেন। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলো, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের নেতা ফারুক খান (৩০), জর্জ মিয়া (২৮), আল-আমিন (৩০), আতাউর রহমান (৩৫), ফরহাদ সরকার (৩০), উপজেলা যুবদল সভাপতি আবদুল আলিম (৩৪), জয়নাল আবেদীন (৩৮), বেলায়েত হোসেন বেল্টু (২৬), উপজেলা ছাত্রদল সভাপতি আবদুল হালিম ফকির (৩০), রিপন (৩৪), কপাসিয়া কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক জুয়েল (২৬)। ২০০৩ সালের ১৭ই আগস্ট বিকালে কাপাসিয়া উপজেলার পাবুর বলখেলার বাজার সংলগ্ন একটি টেকে আসামিরা জালাল উদ্দিন সরকারকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও হাতে-পায়ের রগ কেটে হত্যা করে। আসামিরা সবাই ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মী।
নারায়ণগঞ্জে  ৫ জনের ফাঁসি
স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ও বন্দর প্রতিনিধি জানান, নারায়ণগঞ্জে দুই স্কুল শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলায় আদালত ৫ জনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে। গতকাল দুপুরে নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মিয়াজী মোহাম্মদ শহীদুল ইসলামের আদালতে জেলার বন্দর উপজেলার স্কুলছাত্র রাকিবুল ইসলাম ইমন (১৩) হত্যা মামলায় ৪ জন এবং একই সময়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক রাশেদুজ্জামান রাজার আদালতে নারায়ণগঞ্জ শহরের একটি আবাসিক হোটেলে স্কুলছাত্রী সোনিয়া আক্তার সাজেদা (১৪) হত্যা মামলায় ১ জনকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়। ইমন হত্যা মামলায় দণ্ডিতরা হলো বন্দরের কামতাল মালিভিটা গ্রামের সাইফুর রহমান ওরফে সাইফুল (২৩), তোফাজ্জল হোসেন (২২), জামাল হোসেন (২২) ও শাহজাহান ওরফে জীবন (২১)। আদালত মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ৪ জনকে ৭ বছর করে কারাদণ্ড, সঙ্গে আরো ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করেছেন। রায় ঘোষণার সময়ে সাইদুর ও তোফাজ্জল পলাতক ছিলেন। সাজেদা হত্যার মামলার দণ্ডিত আসামি হলো দেলোয়ার হোসেন। রায় ঘোষণার সময় সে আদালতে উপস্থিত ছিল। দেলোয়ার হোসেন ডেমরার সারুলিয়া শুকরসি এলাকার সুরুজ মিয়ার ছেলে।
অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এপিপি এমএ রহিম জানান, নিহত স্কুলছাত্র ইমন বন্দরের কামতাল মালিভিটা এলাকার প্রবাসী নূরু মিয়ার ছেলে। সে সোনারগাঁয়ের এইচজিজি উচ্চবিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে পড়তো। শত্রুতার জের ধরে ২০১৪ সালের ২৯শে জানুয়ারি ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ পেতে ইমনকে অপহরণ করা হয়। টাকা না পেয়ে ওই দিন রাতেই ইমনকে হত্যার পর বন্দরের মদনপুরের মালিবাগে একটি মুরগির খামারে লাশ পুঁতে রাখা হয়।  এ ঘটনায় ইমনের মা ফেরদৌসি বেগম বাদী হয়ে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন। ৫ই ফেব্রুয়ারি আসামিদের দেয়া স্বীকারোক্তিতে ইমনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে এ মামলার অপর আসামি আল আমিনকে (১৮) গত ১৪ই মে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করে আদালত। হত্যাকাণ্ডের পর গ্রেপ্তারের সময়ে আল আমিন নাবালক থাকায় জুবিনাইল আইনে এ বিচার কাজ সম্পন্ন করা হয়। তবে এখন সাবালক হওয়ায় তাকে নারায়ণগঞ্জ কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি রকিবুল ইসলাম জানান, ২০০৮ সালের ২৯শে আগস্ট দুপুরে ডেমরার সারুলিয়া শুকুরসি এলাকার সলিমুল্লাহর মেয়ে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী সোনিয়া আক্তার সাজেদাকে নিয়ে বেড়ানোর কথা বলে নারায়ণগঞ্জ শহরের ১নং রেলগেট ফলপট্টি এলাকায় দাদা আবাসিক হোটেলে উঠে দেলোয়ার হোসেন। হোটেলের রেজিস্টারে দেলোয়ার হোসেন নিজের নাম আলাউদ্দিন উল্লেখ করে স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দেয়। তারা চিকিৎসা করাতে এসেছে বলে জানায়। পরে সাজেদাকে ধর্ষণের পর হত্যা করে দেলোয়ার হোসেন পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় সাজেদার মা সাবিনা ইয়াসমিন ময়না বাদী হয়ে দেলোয়ারকে আসামি করে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
তিনি আরো জানান, মামলায় মোট ১৩ জন আদালতে সাক্ষী দিয়েছেন। বাদীপক্ষে মামলাটি পরিচলনা করেন অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, অ্যাডভোকেট বারী ভুইয়া ও অ্যাডভোকেট শামীম হোসেন।
চট্টগ্রামে ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড
স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম ও আনোয়ারা প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রামের একটি আদালত বোয়ালখালীতে  সিএনজি অটোরিকশা চালক ইউছুফকে খুনের দায়ে ৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও দুজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। আজ সোমবার চট্টগ্রামের বিভাগীয় জননিরাপত্তা ট্রাইব্যুনালের বিচারক সৈয়দা হোসনে আরা ওই রায় দিয়েছেন। এতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন নূরুল আলম, আবুল কালাম, কাউছার ও রুবেল। অন্যদিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দুজন হচ্ছেন আরিফ ও এস এম নঈমউদ্দিন। এদের মধ্যে শুধু কাউছার ও নঈমউদ্দিন কারাগারে আছে। বাকিরা পলাতক। আদালত ও এলাকাবাসী সূত্র জানায়, আনোয়ারার মোহছেন আউলিয়ার ?মাজারে যাবার কথা বলে ২০০৮ সালের ৩রা মে রাতে শহরের বহদ্দারহাট থেকে ইউছুফের অটোরিকশা ভাড়া নেয় আসামিরা। এরপর কালুরঘাট সেতু পার হয়ে অটোরিকশাটি বোয়ালখালীর গোমদণ্ডী ফুলতল এলাকায় পৌঁছালে ইউছুফকে খুন করে আসামিরা। পরে তারা অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যায়। ওই ঘটনার পর সাতকানিয়া থেকে অটোরিকশার মালিক সেটি কৌশলে উদ্ধার করে। একই ঘটনা ফাঁস হয়ে যায়। এ ঘটনায় নিহত ইউছুফের খালাতো ভাই হাশেম বোয়ালখালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এরপর উক্ত মামলার অভিযোগপত্র দাখিল ও অভিযোগ গঠন করে আদালত। মামলার সর্বমোট ২৭ জনের মধ্যে ১৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। সবশেষে আদালত আজ সোমবার দুপুরে এ রায় দিয়েছেন। এদিকে ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট আদালত এ রায় প্রদান করেন।
দৌলতপুরে স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড
দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি জানান, দৌলতপুরে স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। গতকাল সোমবার দুপুরে কুষ্টিয়া অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারত রেজা মো. আলমগীর হোসেন এ রায় দেন। আদালত সূত্র জানায়, ২০১১ সালের ২৬শে আগস্ট জেলার দৌলতপুর উপজেলার নাজিরপুর গ্রামের হুলি মণ্ডলের ছেলে ভ্যানচালক রোকন মণ্ডল জুয়া খেলে সর্বস্ব হারিয়ে বাড়ি ফিরে তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী লাইলীর সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে রোকন ক্ষিপ্ত হয়ে লাইলী খাতুনকে শ্বাসরোধে হত্যা শেষে লাশ বাড়ির পাশে ড্রেনে ফেলে দেয়। ঘটনার দুদিন পর নিহত গৃহবধূর গলিত লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করা হয়। ২৯শে আগস্ট নিহতের বাবা লাল চাঁদ বাদী হয়ে রোকন মণ্ডলকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে ৪ঠা সেপ্টেম্বর রাতে পলাতক রোকন মণ্ডলকে দৌলতপুর থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ করেন। রোকন মণ্ডল তার স্ত্রী লাইলী খাতুনকে হত্যার কথা স্বীকার করে। ৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ৪ বছর পর গতকাল বিজ্ঞ আদালত রোকন মণ্ডলের ফাঁসির রায় দেয়।
হত্যা মামলায় ৫ আসামির ফাঁসি বহাল
রাজধানীর পোস্তগোলা এলাকায় ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম হত্যা মামলায় তার স্ত্রী নাট্যশিল্পী সুমাইয়া কানিজ সাগরিকাসহ পাঁচ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে হাইকোর্ট। সাগরিকা ছাড়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্যরা হলো ইব্রাহীম ওরফে ইয়াছিন (২৯), হিজড়া খলিল (২২), আল আমিন ও খলিল শেখ। আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আলী আশরাফ লিটনের অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দেয়া হয়েছে। ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষে বিচারপতি সৌমেন্দ্র সরকার ও বিচারপতি এএনএম বশির উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল এ রায় দেন। ঢাকার তিন নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ২০১০ সালের ২১শে জুন এ মামলার রায়ে ছয় আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। ২০০৮ সালের ৪ঠা নভেম্বর খুন হন লোহা ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম। তিনি শ্যামপুরের আরসিন গেইট এলাকার এক বাসায় স্ত্রী সাগরিকা এবং মেয়ে অনামিকা, আশা ও অপূর্বাকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন। জাহাঙ্গীরের বাবা ফিরোজ আলম ওই ঘটনার পর সাগরিকাসহ সাতজনকে আসামি করে শ্যামপুর থানায় মামলা করেন। এজাহারে বলা হয়, অভিনেত্রী সাগরিকার ‘বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক’ ছিল এবং তাদের দিয়েই সে জাহাঙ্গীরকে খুন করায়।

No comments

Powered by Blogger.