সিলেটের সাঈদ হত্যা দ্রুততম রায়ের দৃষ্টান্ত by ওয়েছ খছরু

দ্রুততম রায়ে দৃষ্টান্ত গড়লেন সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবদুর রশীদ। মাত্র ৮ কার্যদিবসে তিনি ঘোষণা করলেন সিলেটের শিশু আবু সাঈদ হত্যা মামলার রায়। এর আগে সিলেটের আদালতে দ্রুততম সময়ের রায় ছিল শিশু সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলার রায়। ১৪ কার্যদিবসে মহানগর দায়রা জজ আকবর হোসেন মৃধা ওই রায় ঘোষণা করেছিলেন। দ্রুত সময়ে মামলা কার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবীরা কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করলেও সিলেটের সিনিয়র আইনজীবীরা দ্রুততম সময়ের রায় ঘোষণাকে ‘ইতিবাচক’ হিসেবেই দেখছেন। তারা বলেছেন, রায় ঘোষণা দ্রুততম সময়ে হলেও বিচারিক কার্যক্রমে কোনো ফাঁক ছিল না। সব আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সময় নিয়েই বিচার সম্পন্ন করা হয়েছে। এতে করে বিচার বিভাগের কার্যক্রমে আরও গতি এসেছে বলে মনে করেন তারা। ওদিকে, বিচার প্রক্রিয়া দ্রুততম সময়ে হলেও রাজন কিংবা আবু সাঈদ হত্যা মামলার ‘আমলি ধাপ’ সম্পন্ন হয়েছে মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে। সেখানে আসামিদের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড, চার্জশিট শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ কারণে আইনজীবীরা মনে করছেন, দুটি মামলার বিচারিক কার্যক্রমে ধারাবাহিকতায় কোনো গাফিলতি ছিল না। গতকাল  সোমবার আদালতে আলোচনায় ছিল শিশু আবু সাঈদ হত্যা মামলার রায়। আইনজীবীরা দ্রুততম সময়ে রায় ঘোষণাকে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার প্রতিফলন হিসেবে মনে করছেন। তারা বলেন, বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে। সেটি কোনো ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সব ঘটনা সমান নয়। আর সব মামলাও সমান নয়। সুতরাং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কোনো কোনো স্পর্শকাতর মামলা দ্রুততম সময়ে শেষ করতে হবে। সামপ্রতিক কালে সিলেটের আদালতের দুইজন জজ এ দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। এছাড়া, মামলার বিচারিক কার্যক্রমে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষের আইনজীবীদের আন্তরিকতা ছিল। প্রসিকিউশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল মহলের সহযোগিতায় সেটি সম্ভব হয়েছে। এর আগে রাজন হত্যা মামলার আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান হাবিব জানিয়েছিলেন, দ্রুততম সময়ে রায় ঘোষণা হওয়ায় কাগজপত্র পর্যালোচনার সুযোগ কম মিলেছে। ফলে যুক্তি খণ্ডন ও আনুষঙ্গিক কাজের জন্য পর্যাপ্ত সময় পাননি। তবে, রাজন হত্যা মামলার রায় ঘোষণার পর তিনি রায় নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। এমনটি গতকালও সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে করেছেন ফাঁসির দণ্ড পাওয়া আসামি আতাউর রহমান গেদার আইনজীবী শাহ আশরাফ। মামলার রায় ঘোষণার পর আদালত থেকে বেরিয়ে এসে জানিয়েছেন, মামলার তদন্তের অনেক গাফিলতি ছিল। সেগুলো কিছু কিছু উপস্থাপন করা হয়েছে। সময় পেলে আরও পর্যালোচনার সুযোগ পাওয়া যেতো। তবে, রায় নিয়ে তিনি কোন মন্তব্য করেননি। বলেন, আসামিরা চাইলে উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারবেন। চতুর্থ শ্রেণির স্কুলছাত্র আবু সাঈদ হত্যা মামলার বিচারিক আদালত সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি ও সিনিয়র আইনজীবী আবদুল মালেক জানিয়েছেন, মাত্র অষ্টম কার্য দিবসে রায় ঘোষণা করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন আদালতের বিচারক আবদুর রশিদ। তিনি জানিয়েছেন, ৮ কার্যদিবসে মামলা শেষ হলেও বিচারিক কার্যক্রম যথাযথ হয়েছে। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা পর্যাপ্ত জেরা ও যুক্তি খণ্ডনের সুযোগ  পেয়েছেন। আদালত প্রতি কার্যদিবসে বেশি সময় নিয়েই মামলা পরিচালনা করেছেন। তিনি বলেন, মামলার কার্যক্রম ও বিচার নিয়ে কোনো প্রশ্নের অবকাশ নেই। আর রায়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ইইউ শহিদুল ইসলাম শাহীন মানবজমিনকে জানিয়েছেন, সাঈদ হত্যা মামলা রায় অষ্টম কার্যদিবসে ঘোষণা করা হয়েছে সেটি বিচার বিভাগের জন্য দৃষ্টান্ত। এই হত্যা মামলার রায় রাজন হত্যা মামলার রায়েরও রেকর্ড ভেঙেছে। রাজন হত্যা মামলা শেষ হয় ১৪ কার্যদিবসে আর এটি হলো ৮ম কার্যদিবসে। এতে প্রমাণিত হয় আদালত, আইনজীবী ও প্রসিকিউশন সংশ্লিষ্ট সবাই আন্তরিক হলেই দ্রুততম সময়ে ন্যায় বিচার পাওয়া সম্ভব। তিনি বলেন, দ্রুততম সময়ের বিচার সম্পন্নের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করলে মামলাজট কমে যাবে। সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সামিউল আলম জানিয়েছেন, মামলা দ্রুততম সময়ে শেষ হলেও শিশু আবু সাঈদ হত্যা মামলা বিচারিক কার্যক্রমে কোনো ফাঁক ছিল না। উভয়পক্ষের আইনজীবীরা আদালতে সমান অগ্রাধিকার পেয়েছেন। এছাড়া, ৩৭ সাক্ষীর মধ্যে ২৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। তবে, তিনি বলেন, দ্রুততম কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট আদালতে চলমান অন্য মামলাগুলোর কার্যক্রমে কিছুটা সময়ক্ষেপণ হয়। সেটিও ভবিষ্যতে থাকবে না বলে মনে করেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.