ব্রহ্মপুত্রে বাঁধ: বাংলাদেশ-ভুটানকে নিয়ে এগোতে চায় ভারত by সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়

ব্রহ্মপুত্র নদে চীন বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়িত করায় এখনই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত নয় ভারত। তবে ভবিষ্যতে নিম্ন অববাহিকার দেশ হিসেবে আশঙ্কা দেখা দিলে ভারত অবশ্যই তার মোকাবিলা করবে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও ভুটানের সঙ্গে একযোগে কিছু করা যায় কি না তা তখন ভেবে দেখা হবে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র আজ শুক্রবার প্রথম আলোকে এই কথা জানান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ এই বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ভারতের সঙ্গে একযোগে বিষয়টির মোকাবিলা নিয়ে বাংলাদেশ এখনো কোনো আগ্রহ দেখায়নি। ভুটানও দেখায়নি। তিনি জানান, ব্রহ্মপুত্রের প্রবাহ নিয়ে ভারতকে যেসব তথ্য চীন দিয়ে আসছে তাতে ভারত খুশি। ভারত চাইবে চীন তথ্যের পরিধি আরও বাড়াক।
সরাসরি প্রকাশ না করলেও চীনের এই উদ্যোগ ভারতকে চিন্তায় রেখেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রটির ভাষ্য মতে, প্রথম চিন্তা ব্রহ্মপুত্রে জলপ্রবাহে হেরফের ঘটবে কি না, দ্বিতীয় চিন্তা নিম্ন অববাহিকায় ভবিষ্যতে ব্রহ্মপুত্র অস্বাভাবিক আচরণ করবে কি না। তিনি বলেন, চীন সময়ে সময়ে এই নদের জলপ্রবাহ, তার সম্ভাব্য গতি-প্রকৃতি এবং অন্যান্য বিভিন্ন তথ্য ভারতকে দিয়ে আসছে। তাতে ভারতের উপকারই হচ্ছে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে ভবিষ্যতে ভারতের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ দেখা দেবে না। দিলে ভারত দ্বিপক্ষীয় স্তরে তার মোকাবিলা করবে।
চীন থেকে বেরিয়ে ব্রহ্মপুত্র ভারত, ভুটান ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ভারতের কোনো আশঙ্কা থাকলে সেই আশঙ্কায় ভুটান ও বাংলাদেশও ভুগবে। কাজেই তিন দেশ একযোগে বিষয়টি নিয়ে চীনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারে কি না জানতে চাওয়া হলে সূত্রটি বলেন, এখনই বহুপক্ষীয় তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। ভারত দ্বিপক্ষীয় স্তরে বিষয়টি নিয়ে চীনের সঙ্গে ইতিমধ্যেই কথা শুরু করেছে। চীন সময়-সময় যেসব তথ্য দিয়েছে এতে ভারত সন্তুষ্ট। তিনি বলেন, ভারত অবশ্য চায় তথ্যের বহর চীন আরও বাড়াক। ব্রহ্মপুত্র প্রতি বছরেই আসামকে ভাসিয়ে দেয়। এই জলোচ্ছ্বাস ও দুর্গতির আগাম আভাস আরও নিখুঁতভাবে পেতে ভারত আগ্রহী। পাশাপাশি ভারত চায়, এই বিস্তীর্ণ নদের জলপ্রবাহ যেন না কমে। সূত্রটি জানান, বাংলাদেশও প্রয়োজন হলে নিশ্চিতই দ্বিপক্ষীয় স্তরে চীনের সঙ্গে আলোচনা করবে। বিকাশ স্বরূপ জানান, এই নিয়ে ভারতের সহযোগিতা বাংলাদেশ চেয়েছে বলে তিনি কিছু এখনো শোনেননি।
ব্রহ্মপুত্র নিয়ে বাংলাদেশেও চর্চা শুরু হয়েছে। এই কথা জানিয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশনের একটি সূত্র আজ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ বিষয়টি নিয়ে তার মতো করে ভাবছে। তিন দেশের সম্মিলিত কোনো উদ্যোগের কথা বাংলাদেশ এখনই ভাবছে না। সূত্রটি বলেন, ক্ষতির আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশের। কারণ, চীন, ভারত ও ভুটান হয়েই ব্রহ্মপুত্র বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

No comments

Powered by Blogger.