বিয়ে বিয়ে খেলার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একজন শান্তা

মাত্র ১১ মাস বয়সে বিয়ে হয়েছিল ভারতের শান্তা দেবী মেঘওয়ালের। এখন তার বয়স ১৯ বছর। পরিপূর্ণ যুবতী তিনি। বিয়ের বয়স হয়েছে। নিজের ভাল-মন্দ বুঝতে শিখেছেন। তাই তিনি নবজাতক অবস্থার ওই বিয়েকে মেনে নিতে পারেন নি। এ নিয়ে আইনি লড়াইয়ে গিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত তার সেই বিয়ে বাতিল হয়েছে। এখন মুক্ত বিহঙ্গের মতো দম নিতে পারছেন শান্তা দেবী। তার বাড়ি ভারতের রাজস্থান রাজ্যের যোধপুরে। তার যখন জন্ম হয় তখন থেকে কিছুদিন পর ১১ মাস বয়সের সময় তাকে পরিবারের সদস্যরা শখ করে বিয়ে দিয়ে দেন সানভাল রামের সঙ্গে। সানভালের বয়স এখন ২৮ বছর। কিন্তু শান্তা দেবী বড় হয়ে যখন তা জানতে পারলেন তখন তিনি বেঁকে বসলেন। বললেন, এ বিয়ে তিনি মানেন না। গেলেন যোধপুরে পারিবারিক আদালতে। সেই আদালতে সম্প্রতি এ নিয়ে শুনানি হয়। সাক্ষীদের জেরা করা হয়। শান্তা দেবীর মা- বাবাকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করা হয়। অবশেষে মঙ্গলবার মামলার চূড়ান্ত রায় হয়। তাতে জয়ী হন শান্তা দেবী। তার মুখে বুলি ফোটার আগেই দেয়া ওই বিয়েকে আদালত বাতিল করে দেন। শান্তা দেবীকে এখন থেকে মাত্র দু’বছর আগে বলা হয়, তার বিয়ে হয়েছে সানভাল রামের সঙ্গে। তখন ওই বিয়ের সময় সানভালের বয়স ছিল নয় বছর। এ কথা শোনার পর শান্তা দেবী প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। এ জন্য তাকে ১৬ হাজার পাউন্ড জরিমানা করা হয়। সমাজ থেকে একঘরে করা হয়। কিন্তু থেমে থাকেন নি শান্তা দেবী। তিনি যোগাযোগ করেন এক দাতব্য সংস্থা ও শিশু বিয়েবিষয়ক এক সমাজকর্মীর সঙ্গে। তাদের মাধ্যমে শান্তা দেবী তার সমাজের রায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। এ বছরের ১৩ই মে তিনি ওই বিয়ে বাতিল চেয়ে আবেদন করেন পারিবারিক আদালতে। এ কথা জানতে পেরে তার কথিত স্বামী ও তার পরিবার গ্রাম্য পঞ্চায়েতের আশ্রয় নেয়। ওই পঞ্চায়েত শান্তা দেবীকে ১৬ হাজার পাউন্ড জরিমানা করে। তাকে সমাজচ্যুত করে। এতে পেছন দিকে ফিরে তাকান নি শান্তা দেবী। তিনি শৈশবের ওই বিয়ে বাতিল করতে প্রাণপণ লড়াই করতে থাকেন। তিনি বলেন, আমার বোধ হওয়ার আগেই আমাকে বিয়ে দেয়া হয়েছে। এ বিয়েকে বিয়ে-বিয়ে খেলা ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। এতদিন আমার কাছে বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছে। আমি তো এ বিয়ে মেনে নিতে পারি না। বিষয়টি তখনই আমি জানতে পারি যখন গ্রামের বয়স্ক ব্যক্তিরা আমার পিতাকে বললেন, মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে দাও। প্রথমে আমি বিষয়টি বুঝতে পারি নি। বিশ্বাস করতে পারি নি কি বলা হচ্ছে। যখন সব সত্য বেরিয়ে আসে তখন আমার পিতামাতা আমাকে বললেন, তোমার ভাগ্যকে মেনে নিতেই হবে মা। তাদের এ কথায় আমি বসে থাকি নি। কারণ, আমার জীবনকে পরিচালনা করতে হবে আমাকেই। তাদের কথা প্রত্যাখ্যান করি আমি। নানা অজুহাত দিতে থাকি। বলতে থাকি, আমি এখন শ্বশুরবাড়ি যাবো না। তাতে হুমকি দেয়া হলো আমাকে। বলা হলো জোর করে আমাকে পাঠিয়ে দেয়া হবে। তখনই আমি পারিবারিক আদালত সারথি ট্রাস্টে যাই। এই ট্রাস্টটি শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করে। এর প্রতিষ্ঠাতা কৃতী ভারতী (২৬)। তারা শিশু বিয়ে বন্দে কাজ করে যাচ্ছেন। আমার বিয়ে বাতিল সহ এ নিয়ে তারা ২৯টি শিশুর এমন বিয়ে বাতিল করলেন। তারা ২০১২ সালে প্রথম এমন একটি বিয়ে বাতিল করেন। সেবার লক্ষ্মী সারগারা নামে একটি শিশুর বিয়ে বাতিল হয়েছিল। তারা কাজ এগিয়েই নিচ্ছেন। কৃতী ভারতী বলেন, শান্তা দেবী যখন মামলায় বিজয়ী হলেন তখন আমার মনে হলো আমি খুশিতে চাঁদের দেশে চলে গিয়েছিলাম। ভারত থেকে শিশুদের বিয়েকে আমি নির্বাসনে পাঠাতে চাই। আমি শান্তা দেবীকে রক্ষা করতে পেরেছি। সে আমার কাছে সাহায্য চায় এপ্রিলে। তাকে সহায়তা করতে আমি দ্বিধা করি নি। তাৎক্ষণিকভাবে আমি তার পিতামাতাকে কিছু পরামর্শ দিলাম, কাউন্সেলিং করলাম। শেষ পর্যন্ত শান্তা দেবীর পক্ষ নিলেন তার পিতা।  শেষ পর্যন্ত তাতে শান্তা দেবীরই জয় হলো। জয়ের পর শান্তা দেবী বললেন, এ দিনটি আমার জীবনে সবচেয়ে আনন্দের। এখন তিনি নিজেকে একজন শিক্ষিকা হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। উল্লেখ্য, ট্রাস্ট ওমেন কনফারেন্সের স্কলারশিপ পেয়েছেন কৃতী ভারতী। আগামী মাসেই তিনি লন্ডনে যাচ্ছেন।

No comments

Powered by Blogger.