নতুন রুট খুঁজছে পাচারকারীরা

মালয়েশিয়ায় মানব পাচারের নতুন নতুন রুট খুঁজছে পাচারকারীরা। এ বছর থাইল্যান্ড পাচারের বিষয়টি উন্মোচিত করার পর থেকে পাচারকারীরা তাদের কার্যক্রম চালু রাখার চেষ্টা করছে। থাইল্যান্ড পাচারকারীদের বিরুদ্ধে জোরালো ভূমিকা নেয়ার পর গত প্রায় ছয় মাস মিয়ানমার বা বাংলাদেশ থেকে অভিবাসীবাহী বোট দেখা যায়নি। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এইড এজেন্সিগুলো মনে করছে, সমুদ্রপথে মানবপাচার বন্ধ হওয়া এমন ইঙ্গিত দেয় না যে, পাচার বন্ধ হয়েছে। এর অর্থ হলো পাচারকারী চক্র নতুন নতুন রুট আবিষ্কারের চেষ্টা করছে। রোহিঙ্গাদের অধিকার নিয়ে কাজ করে আরাকান প্রজেক্ট। এর প্রতিষ্ঠাতা ক্রিস লিওয়া বলেন, আমরা নতুন করে কোন বোট দেখতে পাইনি। তবে পাচারকারীরা বিভিন্ন রুট নিয়ে গবেষণা করছে, যেসব রুটে পাচার কাজে বোট ব্যবহার করা হবে না। তিনি বলেন, হয়তো কিছু বোট মানুষ পাচারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে থাকতে পারে। কিন্তু থাই সরকার পাচারের বিরুদ্ধে যে শক্ত অবস্থান নিয়েছে তাতে এমন ঘটনা এ বছর ধরা পড়েনি। তারা আরও চোরাগোপ্তা পথের আশ্রয় নিয়ে থাকতে পারে। তার মতে, নতুন যেসব রুট বেছে নেয়া হতে পারে তার মধ্যে রয়েছে আকাশপথ অথবা স্থলপথ। সম্প্রতি জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর সতর্ক করেছে যে, সাম্প্রতিক সময়ে পাচারকারীদের বোটে করে মানুষ পাচার বঙ্গোপসাগর দিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। যদি মূল কারণ চিহ্নিত করা না যায় তাহলে এই প্রবণতা চলতেই থাকবে। ২০১৩ ও ২০১৪ সালে  অধিকার বিষয়ক কর্মীরা একটি টালি করেছেন। তাতে দেখা গেছে, রাখাইন রাজ্য ও বাংলাদেশ থেকে প্রতি মাসে কমপক্ষে এক হাজার মানুষকে পাচার করা হয়েছে। কখনো এ সংখ্যা কয়েক হাজার পর্যন্ত হয়। এক বছর আগে এই মাসে এই সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ। সেই সংখ্যা ছিল কমপক্ষে ১৩ হাজার। কিন্তু মে মাসে থাইল্যান্ডের দমন অভিযান ও ভাসমান বোট সংকটের কারণে তা থেমে যায়। ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন আঞ্চলিক অফিসের প্রধান জেফ ল্যাবোভিটজ বলেন, মে মাসের পর থেকে এ সংখ্যা শূন্যতে নেমে এসেছে। এতে মৌলিক একটি পরিবর্তন এসেছে। এখন কোন বড় বোটকে এমন পাচারে দেখা যাচ্ছে না। আগামী মাসে মিয়ানমারে জাতীয় নির্বাচন। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাখাইন প্রদেশের রোহিঙ্গাদের দুর্দশা এ বছর বেড়েছে। কট্টরপন্থি বৌদ্ধ ভিক্ষুরা তাদেরকে আরও কঠিন অবস্থায় ফেলেছে। ২০১২ সালে রাখাইন প্রদেশে যে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ হয় তাতে কমপক্ষে এক লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গাকে বাড়িঘর ছাড়া করা হয়। অনেক মানুষ এখনও বন্দিশিবিরগুলোতে আটক রয়েছেন। তাদের সফরে বিধিনিষেধ রয়েছে। তাদের স্বাস্থ্যসেবা নেই। নেই শিক্ষা। ফেব্রুয়ারিতে রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী ভিত্তিতে দেয়া হয় ‘হোয়াইট কার্ড’। এটা তাদের পরিচয়পত্র। এই পরিচয়পত্রের জোরে তারা আগামী ৮ই নভেম্বর নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। কিন্তু রোহিঙ্গাদের এই কার্ড বাতিল করার দাবিতে বিক্ষোভ করেছে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা। কার্যত এর মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়ার দাবি করা হয়েছে। ক্রিস লিওয়া বলেন, ভোটাধিকার কেড়ে নেয়ার বিষয়টি রাজনৈতিক। এক বছর আগের চেয়ে রাখাইনের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়েছে। তাদের ওপর গত বছরের চেয়ে বেশি শক্তিশালী চাপ দেয়া হচ্ছে। এর ফলে তারা থাইল্যান্ডের দিকে চলে যেতেন। কিন্তু এখন থাই সরকারের কড়াকড়িতে সেই সুযোগও বন্ধ। রোহিঙ্গাদের অনেকেই পাচার হয়ে বোটে করে চলে যেতেন থাই উপকূলে। তারপর তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হতো আরও দক্ষিণে মালয়েশিয়ার স্পর্শকাতর সীমান্তে। সেখানে থাই-মালয়েশিয়া সীমান্তে তাদেরকে গোপন আস্তানায় আটকে রাখা হতো। মুক্তিপণ দাবি করা হতো। দিতে না পারলে নির্যাতন করে হত্যা করা হতো। অন্যরা মারা যেতেন রোগে, অবহেলায়। মে মাসে থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়া সীমান্তে কয়েক ডজন কবর আবিষ্কার করা হয়। পাচারকারীরা সমুদ্রে ফেলে যায় হাজার হাজার অভিবাসীকে। এশিয়া প্যাসিফিক রিফিউজি রাইটস নেটওয়ার্ক-এর অন্তর্বর্তী নির্বাহী পরিচালক জুলিয়া মায়েরহোফার বলেন, সমস্যার মূলে এখনও রয়েছে সেই মিয়ানমার। ওদিকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ওই অঞ্চলে পাচার নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তাতে রোহিঙ্গাদের যাতে সহিংসতা থেকে রক্ষা করা হয় সে জন্য মিয়ানমারের প্রতি চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। একই সঙ্গে আইন সংশোধন করে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে বলা হয়েছে। মায়েরহোফার বলেন, এখনও মানুষজন সেখান থেকে সরে যেতে উন্মুখ। যদি আপনি তাদের সামনের একটি পথ বন্ধ করেন তারা অন্য একটি পথ বের করে নেবে। তা এসব মানুষের জন্য আরও ভয়াবহ ও ঝুঁকিপূর্ণ।

No comments

Powered by Blogger.