মৌলভীবাজারে কিরণমালা পিকো, মন্টু ও পাটলুর দাপট by মাসুদ আহমদ

প্রবাসী অধ্যুষিত মৌলভীবাজারে ঈদের বাজার জমে উঠলেও সব দোকানে কাস্টমার আসছে না। কেউ ভাল বেচা-বিক্রি করছেন। আবার কেউ বসে বসে দিন কাটাচ্ছেন। এবার পাখি নয় কিরণমালা দখল করেছে বাজার। সঙ্গে আছে মোদি কোট, পিকো, মান্যবর ও মটু-পাটলু। তবে বেশি ক্রেতাদের পছন্দ সাধারণ ডিজাইনের সুতি কাপড়। ক্যাজুয়াল পোশাক।
মৌলভীবাজার শহরের এম সাইফুর রহমান সড়কের দু-পাশে বিভিন্ন বিপণিবিতান ও অভিজাত বা নামিদামি কাপড়ের দোকান সব ক’টির অবস্থান। শহরের বিভিন্ন সড়কে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আরও কিছু ফ্যাশন হাউজ থাকলেও মূল ক্রেতাদের ভিড় থাকে এই সড়কের দোকানগুলোতেই। বিশেষত ভি থাকে বেশি শহরের পশ্চিম বাজারে অবস্থিত বিশাল আকৃতির দুটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে। মুখোমুখি অবস্থিত এই দুটি প্রতিষ্ঠান এখন বলা যায় মৌলভীবাজারে ব্রান্ড হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। সব শ্রেণীর ক্রেতার কাছে প্রথম পছন্দ এমবি ও বিলাস থেকে ক্রয় করা কাপড়। ঈদ হউক বা অন্য যে-কোন সময়ে হউক। সোমবার মৌলভীবাজার শহরের বিভিন্ন বিপণি বিতান ঘুরে দেখা গেছে বেশ কিছু দোকানে ক্রেতাদের কিছুটা ভিড় আছে। কিন্তু কোন কোন দোকানের সেলসম্যানরা বেশ আয়েস করে বসে শুয়ে গল্প করে সময় কাটাচ্ছেন। তবে সব দোকানির আশা এখন থেকে ঈদের পূর্ব রাত পর্যন্ত বিক্রি বাড়বে। কথা হয় গতকাল দুপুরে এম সাইফুর রহমান সড়কের শিল্পী ক্লথ স্টোরের স্বত্বাধিকারী শক্তিপদ পালের সঙ্গে। বেশ বড় দোকান। কাপড়ও আছে প্রচুর। কিন্তু ক্রেতা নেই ৪ জন সেলসম্যান বলা যায় অবসর। কারণ জানাতে, বললেন এবার ক্রেতা কম। ফুটপাতে বিক্রি ভাল। মধ্যবিত্ত কাস্টমার বেশি। মানুষের কাছে টাকা নেই। তার কথা অন্য বছর রমজান মাসের মধ্য সময় থেকে বাজার জমজমাট হয়ে উঠে। এবার তা দেখা যাচ্ছে না। একই কথা জানালেন সেভেন স্টার মার্কেটের গার্ডেন ফেব্রিক্সের স্বত্বাধিকারী ফখরুল ইসলাম। তার কথা নরমাল সময়ে যা হয় তা-ই হচ্ছে। ঈদেরবাজার বলে মনে হচ্ছে না। তার কথা ধানের দাম কম থাকায় সাধারণ মানুষের কাছে টাকা কম। অন্যবার এই সময় দম ফেলার ফুসরত মিলত না। এবার অন্য সময়ের চাইতে কাপড়ের মূল্য কম তবুও কাস্টমার ভিড়ছে না। জেন্টস কর্নারের মালিক আবদুল হামিদও একই কথা বলেন। হাসি ক্লথ স্টোরের মালিক মাধব জানালেন এবার ব্যাংক সুদ কিছুটা কম হওয়ায় কাপড় কম মূল্যে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে। জানালেন এবার ক্রেতা তরুণীরা কিরণমালা ড্রেস চাচ্ছেন ঠিকই তবে আগেরবারের পাখির মতো এত চাহিদা নয়।
জানালেন বেশির ভাগ তরুণ-তরুণীর এবার দৃষ্টি নর্মাল সুতি কাপড়ের প্রতি। তরুণীদের চাহিদা কিছুটা আছে ভারতীয় সিরিয়ালের আলোচিত কিরণমালা, কিটকাট ড্রেস। তরুণরা নর্মাল শার্ট পেন্ট বেশি চাইেতে দেখা যাচ্ছে। চায়না টি শার্টেরও কদর আছে। তবে জিন্স পেন্টের মধ্যে পিকো, ইধহম ইধহম এর চাহিদা আছে তরুণদের। পাঞ্জাবির মধ্যে বেশি চলছে মান্যবর, মোদি কটি।  মেয়ে শিশুদের কিনতে দেখা গেছে ডিভাইডার, আর ছেলে শিশুরা মান্যবর, মোদি কটি। শাহমোস্তফা গার্ডেন সিটিতে ট্রাডিশন এ রাজনগর মৌলানা মোফাজ্জল হোসেন মহিলা কলেজের এক শিক্ষিকা পরিচিত একজনকে নিয়ে এসেছেন ঈদের কেনাকাটায়। জানালেন এবার কাপড়ের দাম একটু রিজনেবল আছে। এবং চাহিদামতো কাপড়ও পাওয়া যাচ্ছে। তবে জুলিয়া শপিং সেন্টারে কেনাকাটা করার সময় আরেক শিক্ষিকা সামিনা জানালেন কাপড়ের দাম একটু বেশি। বাজারের খবর নিতে গিয়ে দেখা হয় কমিউনিটি রেডিও পল্লী কণ্ঠের স্টেশন ম্যানেজার মেহেদী হাসানের সঙ্গে। ছেলে নিয়নকে নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে এসে জানালেন ছেলের জন্য মটু-পাটলু (কার্টুন সিরিয়ালের) নামের পোশাক কিনতে গিয়ে গলদগর্ম অবস্থা। স্বাদ আর সাধ্য মিলছে না। সুমাইয়া বুটিক, জেদ্দা ক্লথ স্টোরের মালিক জানালেন এবার একটু দেরিতে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। ঈদকে সামনে রেখে দোকানিরা প্রচুর মাল উঠিয়েছেন বেচা-বিক্রির আশায়। তাদের কথা রাজনৈতিক অস্থিরতায় মন্দা গেছে বহুদিন। সেই মন্দা কাটাতে ঈদ সামনে নিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছেন। তাদের বিশ্বাস এবার কাপড়ের মূল্য সহনীয় পর্যায় থাকায় বিক্রি ভাল হবে। বিলাস ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মালিক সোহাগ গতকাল জানান মাত্র বাজার জমতে শুরু করেছে। এই প্রতিষ্ঠানের সেলসম্যানরা জানালেন এবার বাজারে হিট আইটেম হচ্ছে শাড়ির মধ্যে দু-পিয়ান কাতান, ভাগলপুরি কাতান, বেঙ্গালুর কাতান, সাউথ কাতান, তবে বেশি হিট কিরণমালা, অপেরা, গাদোয়ান। শাড়ির মূল্য সাড়ে তিন থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। ড্রেসের মধ্যে বেশি চলছে কিরণমালা, কিটকাট, ঝিলিকতা পাশাপাশি দেশী ড্রেসগুলো সমান তালে চলছে। মূল্য ৫ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছেলেদের পোশাকের মধ্যে মোদি কটি হট আইটেম জানালেন এই দোকানের আরেক সেলসম্যান। তবে চুপি চুপি বললেন নাম শুধু বিক্রির জন্য। ক্রেতা চায় তাই বলতে হয়। রাঙ্গামাটি সুতা ঘরের মালিক নুরুল ইসলাম জানালেন এই ঈদে থান কাপড় বিক্রি হচ্ছে কম। টেইলারদের কাজ নেই বললেই চলে। তবে ব্যতিক্রম দেখা যায় লেইক রোডের মোহাম্মদিয়া টেইলার্স অ্যান্ড বোরকা হাউসে। মালিক পক্ষের মৌলানা শিহাব উদ্দিন জানালেন ১০ রমজানের পর থেকে তারা অর্ডার কাটা বন্ধ রেখেছেন। ১৫ জন কারিগর রাত আড়াইটা পর্যন্ত কাজ করেন। মূলত পাঞ্জাবি তৈরি করেন। মাস্টার শিহাব উদ্দিন জানালেন তাদের এখানে পাঞ্জাবী তৈরি করাতে আসেন মৌলভীবাজার জেলা ছাড়াও অন্য জেলার কাস্টমার। জুলিয়া শপিং সেন্টারে নিজের ছেলের দোকান আনন্দ আলোয়’ বসে গণতন্ত্রী পার্টির প্রবীণ নেতা সিরাজ উদ্দিন বাদশা বলেন আগেকার দিনের মতো মানুষ ঈদে আনন্দ করতে পারে না। সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য বেড়ে গেছে বিস্তর। এক শ্রেণীর কাছে প্রচুর টাকা। ঈদের বাজার করতে বিদেশ যায়। অন্য শ্রেণী সাধারণ চাহিদা মেটাতে পারে না। তাই ঈদ আর সেই আনন্দ নিয়ে আসে না।

No comments

Powered by Blogger.