হবিগঞ্জে বাজার চড়া, তারপরও...

হবিগঞ্জে ঈদের বাজার জমে উঠেছে। ১৫ রমজানের পর থেকে শহরের বিভিন্ন রাস্তায় জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন মার্কেটগুলোতে আসায় সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। শহরের চৌধুরী বাজার, ঘাটিয়া বাজারের কাপড়ের মার্কেটগুলো লোকজনদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের ঈদে মূল্য বেশি হওয়ায় নিম্ন আয়ের ক্রেতারা কাপড়-চোপড় ক্রয় করতে হিমশিম খাচ্ছেন।  বিশেষ করে ধান বিক্রির টাকার উপর নির্ভরশীল গ্রামাঞ্চলের মানুষ রয়েছেন বেকায়দায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হবিগঞ্জের গ্রামাঞ্চলের মানুষজন ঈদের মার্কেটে কেনাকেটা করেন ধান বিক্রির টাকা দিয়ে। কিন্তু বর্তমানে মোটা ধানের মূল্য মণপ্রতি  ৫শ’ টাকার নিচেই রয়েছে। চিকন ধানের মূল্যও ৬শ’ টাকার নিচে। উৎপাদন খরচের তুলনায় এই দাম কম হওয়ায় এবং কাপড়ের মূল্য আকাশচুম্বি হওয়ায় তারা সুবিধা করতে পারছেন না। পরিবারের কাউকে ভাল একটি শাড়ি ঈদে উপহার দিতে হলে ৪-৫ মণ ধান বিক্রি করতে হবে। আর মেয়েদের জন্য বতর্মান মডেলের ভাল একটি শাড়ি ক্রয় করতে নিম্নে ১০ মণ ধান বিক্রি করতে হবে। যে কারণে গ্রামের ক্রেতারা এখন বাজারে এসে ঈদের জামা-কাপড় ক্রয় করতে হাবুডুবু খাচ্ছেন।
সরজমিন চৌধুরী বাজার, ঘাটিয়াবাজার শংকর সিটি, এসডি ক্লথ স্টোর, এসডি প্লাজা, পরশমণি, মধু মিতা ক্লথ স্টোর, আল-নূর সিটি, মহা প্রভুর আখড়া রোডের পিয়ারা ম্যানশনের এমজি প্লাজাসহ বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের ভিড়। কিন্তু অধিকাংশ ক্রেতা মালামাল দেখে দাম জিজ্ঞাসা করে চলে যাচ্ছেন। আবার অনেক ক্রেতা জামা-কাপড় ক্রয় করছেন। তবে ব্যবসায়ী জানান, মার্কেটগুলোতে এখন বেশি ভাগ প্রবাসী স্ত্রী সন্তানরা জামা-কাপড় ক্রয় করছেন। আগামী ২৫ রমজানের পর থেকে পুরোদমে বিক্রি শুরু হবে।
এ ব্যাপারে কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে আলাপ হলে তারা জানান, অন্যান্য বছরে যে মডেলের জামা-কাপড়টি ২ হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করা যেতো এবার সেই মডেলের জামা কাপর ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করতে হচ্ছে। আর ৫ হাজার টাকার জামা ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করতে হচ্ছে। অনেক ক্রেতা অভিযোগ করেন একদল মুনাফা লোভী ব্যবসায়ীরা নিজের ইচ্ছামতো কাপড়ে দাম ফেলে সাধারণ ক্রেতাদের কাছ থেকে উচ্চ মূলধন আদায় করছেন।
তবে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার কাপড়ের দাম তেমন বেশি নয়। বর্তমানে বাজারে ধান-চালের দাম কম থাকায় গ্রামের সাধারণ ক্রেতারা এখনও কাপড়ের মার্কেটে আসছে না। তবে কয়েকজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, তারা ১৫ রমজান থেকে পুরোদমে বিক্রি করে যাচ্ছেন।
এসডি ক্লথ স্টোরের মালিক দুলাল সূত্রধর জানান, এবার সর্বোচ্চ ২২ হাজার টাকা দামে শাড়ি বিক্রি করেছেন। তার দোকানে প্রতিদিন ক্রেতাদের ভিড় লেগে থাকছে। পরশমণি’র স্বত্বাধিকারী মোকাররম হোসেন, কাপড়ের দাম তেমন একটা বাড়েনি। অন্যান্য বছরের সমান দামেই এবারও জামা-কাপড় বিক্রি হচ্ছে। তবে গ্রামে ছিন্নমূল মানুষগুলো এখনও মার্কেটে আসা শুরু করেনি। এর কারণ হলো- গ্রামের অধিকাংশ মানুষই ধান-চাউল বিক্রি করে ঈদের মার্কেট করে থাকেন। ধানের দাম কম হওয়ায় কৃষকরা ১ মণ ধান বিক্রি করে ভাল একটি শাড়ি কাপড় কিংবা তাদের সন্তানের জন্য জামা-কাপড় ক্রয় করা দূরে থাক, একটি ভাল লুঙ্গি ক্রয় করতে পারবে না। তবে তিনি জানান, তারপরও আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি মালামাল বিক্রি হচ্ছে।
এবার মার্কেটগুলো অন্যান্য বছরের মতো ভারতীয় সিরিয়ালরে নামীয় কিরণ মালা জামা বেশি তরুণ-তরুণীরা ক্রয় করছেন। কিরণ মালা জামা ১ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। মেয়েরা দোকানে এসে কিরণ মালা জামার খোঁজ করেন। এছাড়া দ্বিতীয় নম্বরের কটকটি জামা ১ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পায়েল দেড় থেকে ৬ হাজার টাকা, ফোর টার্চ ২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শাড়িগুলো মধ্যে জামদানি ২ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা, সিল্ক জামদানি ৩ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা, জর্জেট ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছেলেদের ভাল মানের পাঞ্জাবি ১ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া জুতার দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে।
হবিগঞ্জ মফস্বল শহর হওয়ায় একসময় ভাল ব্র্যান্ডের শো-রুম ছিল না বললেই চলে। এ বছর ঈদকে সামনে রেখে লোটা, এ্যাপেক্সসহ বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডের মো-রুম চালু হয়েছে। একদিকে প্রবাসীর আগমন, অন্যদিকে শিল্পায়ন। সর্বোপরি জেলা শহরের সাথে উপজেলাগুলোর ভাল যোগযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠায় দিন দিন ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে হবিগঞ্জ শহরগুলোর মার্কেটগুলোতে। এতে করে যানজট ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতেও প্রশাসনকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ঈদের মার্কেট নির্বিঘ্ন করতে ব্যাপক নিারপত্তা ব্যবস্থা ও যানজট দূর করতে প্রশাসন উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র।

No comments

Powered by Blogger.