ভারতের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য বৈষম্য শিগগিরই দূর হবে না -সংসদে বাণিজ্যমন্ত্রী

ভারতের সঙ্গে চলে আসা বানিজ্য বৈষম্য খুব শিগগিরই দূর হবে না বলে সংসদে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তবে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ট্যারিফ, নন-ট্যারিফ যেসব পণ্যের সমস্যা রয়েছে তা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে বলে জানান তিনি। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে এনামুল হকের পক্ষে হুইপ শহিদুজ্জমান সরকার উত্থাপিত প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
একই প্রশ্নের জবাবে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ভারত-চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে।  তবে এ বাণিজ্য ঘাটতিতে বাংলাদেশের তেমন ক্ষতি হচ্ছে না। মন্ত্রী বলেন, ভারতের সঙ্গে প্রধান বাণিজ্য ঘাটতি তৈরি পোশাকে। তবে ভারতের বাজারে আমাদের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেন না ব্যবসায়ীরা। কারণ তাদের বাজারে তৈরি পোশাক এতো বেশি উৎপাদন হয় যে আমাদের তৈরি পোশাক সেখানে রপ্তানি করা লাগে না।
মন্ত্রী বলেন, বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সার্কভুক্ত দেশ ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ২০১১ সালের ৯ নভেম্বর ভারত থেকে বাংলাদেশকে তামাক ও মদ জাতীয় পণ্য ব্যতীত সব পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের সুযোগ দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ও বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের মধ্যকার শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূরীকরণের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সাউথ এশিয়ান ফ্রি ট্রেড এরিয়ার (সাফটা) আওতায় অন্য সার্কভুক্ত দেশ থেকে বহু পণ্যের শুল্কুমুক্ত সুবিধা পাওয়ার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
মন্ত্রী আরো বলেন, ভারতে রপ্তানি বাড়ানোর লক্ষ্যে ভারতের গৌহাটি, কলকাতা, নয়াদিল্লী, শিলচর, মুম্বাই, রাঁচি ও ভুবনেশ্বরে বাংলাদেশি পণ্য সম্ভার পরিচিত করার জন্য নিয়মিতভাবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় অংশ নেয়া হচ্ছে। সার্কভুক্ত অন্য দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায়ও নিয়মিতভাবে অংশ নেয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
এ কে এম শাহজাহান কামালের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে রপ্তানির পরিমাণ ২৮ হাজার ১৪৪ দশমিক ৩৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত আমদানির পরিমাণ ৩১ হাজার ৯৬৭ দশমিক ৯৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ভবিষ্যতে রপ্তানি আয় বৃদ্ধির জন্য সরকার নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধিকে সুসংহত ও টেকসই রাখার পাশাপাশি সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে গতিশীল, বহির্মুখীকরণ ও রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে প্রতি তিন বছর অন্তর রপ্তানি নীতি তৈরি করা হয়। ত্রিবার্ষিক রপ্তানি নীতি ২০১৫-২০১৮-এর খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। দেশের রপ্তানি বাণিজ্যকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে অধিক সংখ্যক পণ্যকে ভর্তুকি ও নগদ সহায়তার আওতায় আনার বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি বাজারকে সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, জাপান, হংকং, ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, রাশিয়া, সিআইএসভুক্ত বিভিন্ন দেশ, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রাজিলসহ নতুন নতুন বাজারে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় অংশগ্রহণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া কোন কোন দেশে বাংলাদেশি পণ্যের একক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, বিদেশে নতুন নতুন বাজার অন্বেষণের লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির সমন্বয়ে বাণিজ্যক মিশন পাঠানো হচ্ছে। পণ্য পরিচিতি ও বহুমুখীকরণের জন্য প্রতি বছর জানুয়ারিতে এক মাসব্যাপী ঢাকায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানসমূহ এ মেলায় অংশগ্রহণ করায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রপ্তানি আদেশ পাওয়া যায়। একই সাথে পণ্য পরিচিত বৃদ্ধি পায়।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়ায় বাণিজ্যিক মিশন খোলা হয়েছে। এ ছাড়া তুরস্ক, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় কমার্শিয়াল উইং খোলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টায় ইউরোপিয়ানভুক্ত সকল দেশ, ভারত, জাপান, চীন অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ইত্যাদি দেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া গেছে। বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
ফরমালিনের অপব্যবহার রোধে আমদানি নিয়ন্ত্রণ
নিজাম উদ্দিন হাজারীর এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর ফরমালিনের অপব্যবহার রোধে ফরমালিন আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। ইতিপূর্বে ফরমালিন অবাধে আমদানিযোগ্য হলেও বর্তমানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ব্যতিরেকে বিদেশ থেকে ফরমালিন আমদানি বন্ধে ২০১৪ সালের ১৩ আগস্টে এস আর ও জারি করা হয়েছে। এ ছাড়া ফরমালিনের অপব্যবহার রোধে ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৫ প্রণয়ন করা হয়েছে এবং এ সংক্রান্ত বিধিমালা জারির বিষয়টিও বর্তমানে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, ফলমূলসহ খাদ্যদ্রব্যে কেমিক্যালের অপব্যবহার রোধে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারিতে বিভিন্ন কেমিক্যালের মাধ্যমে ফল পাকানো বন্ধকরণে গাইডলাইন প্রণয়ন করা হয়েছে। নিরাপদ খাদ্য গাইডলাইনটি বাস্তবায়ন ২০১৫ থেকে শুরু হয়েছে। এছাড়া রাসায়নিক জাতীয় দ্রব্যাদি আমদানির ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিন ও রাসায়নিক ব্যবহারের বিরুদ্ধে নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.