বি. চৌধুরীকে ঠেকাতে মরিয়া জামায়াত by কাজী সুমন

সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিকল্পধারার সভাপতি প্রফেসর বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিএনপিতে যোগ দেয়া ঠেকাতে নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছে জামায়াত। এমন কি বিকল্পধারাকে ২০ দলীয় জোটে ভেড়ানোর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে দলটি। জোটের কয়েকটি শরিক দলকে বাগে এনে তাদের প্রেসক্রিপশন দিচ্ছে। শরিক দলের নেতারা কাজ করছেন সেই প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী। কাজী জাফর আহমদের জাতীয় পার্টি ছাড়া জোটের কোন শরিক দলের ইফতার পার্টিতেও বি. চৌধুরীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এছাড়া বিকল্পধারা আয়োজিত ইফতার পার্টিতে যোগ না দিতে প্ররোচনা দিয়েছে। ওদিকে ৬ই জুলাই রাজধানীর হোটেল লেকসোরে ইফতার পার্টির আয়োজন করে বিকল্পধারা। ওই ইফতার পার্টিতে জামায়াতসহ বেশ কয়েকটি শরিক দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এতে শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে বি. চৌধুরীর দূরত্ব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ২০০৪ সালে প্রেসিডেন্ট থাকাবস্থায় বি. চৌধুরীর সঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারসনের দূরত্ব তৈরি হয়। ওই সময় তিনি বিএনপি ছেড়ে গঠন করেন বিকল্পধারা। এর প্রায় একযুগ পর ২০১৪ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি বি. চৌধুরীর অভিমান ভাঙাতে তার বারিধারার বাসায় যান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তখন থেকেই মূলত আলোচনা শুরু হয় বি. চৌধুরীর বিএনপিতে ফেরা নিয়ে। তবে তার দলের প্রভাবশালী এক নেতা বাধা হয়ে দাঁড়ান। তখনই আটকে যায় বিএনপিতে তার প্রত্যাবর্তন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে টানা তিন মাস আন্দোলনের পর বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে পড়ে। মামলা-হামলা, পুলিশি গ্রেপ্তার-নির্যাতনে দলটির নীতি-নির্ধারণী ফোরামের নেতারা অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েন। এরপর থেকেই বিএনপির বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বি. চৌধুরীর সরব উপস্থিতি দেখা যায়। গত ২৯শে মে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় আবেগমাখা বক্তব্য রাখেন দলটির প্রতিষ্ঠাকালীন এই মহাসচিব। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে দেয়া ওই বক্তব্যে বিএনপির জন্মের ইতিহাস, বিকাশ, জিয়াউর রহমানের ক্যারিশমেটিক নেতৃত্ব ও ভবিষ্যৎ করণীয় বিশদভাবে তুলে ধরেন। এরপর বি. চৌধুরীকে নিয়ে বিএনপি নেতাদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়ে যায়। দলের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের একটি অংশ তাকে বিএনপিতে ভেড়াতে নেপথ্যে কাজ করেন। গত ১২ই জুন হোটেল সোনারগাঁওয়ে একটি বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে দেয়া বক্তব্যে বি. চৌধুরী বলেন, বিএনপি রাজনীতির জামায়াতনির্ভর হয়ে উঠেছে। আর এ কারণে চারদিক থেকে চাপে রয়েছেন খালেদা জিয়া। এ ধাপটি বেশিদিন থাকবে বলে মনে হয় না। দলটিকে বাঁচতে হলে চতুর্থ ধাপে জিয়াউর রহমানের রাজনীতির আদর্শে ফিরে আসতে হবে। এছাড়া সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকারেও বিএনপির পাশে দাঁড়াতে চান বলে জানান তিনি।  এরপর থেকে বি. চৌধুরীর বিএনপিতে ফেরা নিয়ে জোর গুঞ্জন শুরু হয়। বিএনপির ভেতর থেকেও একটি বড় অংশ তাকে ফিরিয়ে আনার দাবি তুলেন। এছাড়া তারা জানান, এই মুহূর্তে বি. চৌধুরীর মতো ব্যক্তিসম্পন্ন ক্লিন ইমেজের রাজনীতিকের বিএনপিতে প্রয়োজন। একই বি. চৌধুরীর জামায়াত ছাড়ার বক্তব্যকে বিএনপির অনেকে সমর্থন করেন। ফাঁস হওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি বজলুল করিম চৌধুরী আবেদের কথোপকথনেও সেটি স্পষ্ট হয়। কিন্তু বিষয়টি আঁচ করতে পেরে নেপথ্যে কলকাটি নাড়ে জামায়াত। সূত্রে জানা গেছে, জামায়াতের পৃষ্টপোষকতায় জোটের যে কয়েকটি দল পরিচালিত হয় তাদের পক্ষে আনার চেষ্টা করছে। জামায়াতের ইফতার পার্টিতে ২০ দলীয় জোটের সমমনা দল হিসেবে বিকল্পধারাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। একইভাবে জোটের অন্য শরিক জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) ও ইসলামী ঐক্যজোটের ইফতার পার্টিতেও বি. চৌধুরীকে দেখা যায়নি। অথচ বিএনপি আয়োজিত প্রায় প্রতিটি ইফতার পার্টিতে উপস্থিত ছিলেন বি. চৌধুরী। এমনকি ড্যাবের ইফতার পার্টিতে পাঁচ মিনিট পরে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য রাখেন। ওদিকে ৬ই জুলাই বিকল্পধারার ইফতার পার্টিতে জামায়াতসহ বেশ কয়েকটি দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। ওই সূত্রটি জানিয়েছে, বি. চৌধুরী যাতে বিএনপিতে ভিড়তে না পারে সেজন্য নেপথ্যে কাজ করছে জামায়াত। শরিক দলের দ্বিতীয় সারির নেতাদের দিয়ে বিএনপি নেতাদের কাছে বি. চৌধুরীর বিরুদ্ধে বলানো হচ্ছে। জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য মো. মোবারক হোসেন বলেন, বিকল্পধারার ইফতার পার্টির আমন্ত্রণের বিষয়ে আমার কাছে তথ্য নেই। এছাড়া অনেক ইফতার পার্টির আমন্ত্রণ পেলেও সবগুলোতে আমরা যাই না। তবে বিকল্পধারার সঙ্গে আমাদের কোন দূরত্ব নেই। এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদত হোসেন সেলিম বলেন, বি. চৌধুরী আমাদের সমমনা নয়। দাওয়াত দিলেও  উনার দলের ইফতার পার্টিতে যাবেন না বলে সরাসরি জানিয়ে দেন তিনি। বি. চৌধুরীকে নিয়ে জোট নেতাদের মধ্যে সামান্যতম আগ্রহ নেই। আর বিএনপি নেতাদেরও তাকে নিয়ে আগ্রহ আছে বলে আমার মনে হয় না। এখন বিএনপি বা জোটের খারাপ সময় বিদায় পাশে দাঁড়ানো কথা বলছেন। আবার সুবিধা মতো সময় হলে বেরিয়ে যাবেন। তিনি বলেন, গত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বি. চৌধুরী প্রথমে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পরে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। তখন তিনি জামায়াতের বিরুদ্ধে কোন বক্তব্য দেননি। এখন সুযোগ পেয়ে জামায়াতের বিরুদ্ধে বলছেন। এগুলো সুবিধাবাদী বক্তব্য। তবে তাকে যদি বিএনপি কিংবা জোটে ভেড়ানো হয় তাহলে আমরা ২০ দলীয় জোট নেতারা জোটে থাকব কিনা এনিয়ে ভাববো। জোটের আরেক শরিক বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা বলেন, বি. চৌধুরী হলেন ব্রাহ্মণ আর আমরা হলাম নমশূদ্র। তাই আমাদের দাওয়াত দেয়নি। তবে আমাদের দাওয়াত দিলেও আমরা যাব না। কারণ তিনি ইদানীং জোট ভেঙে দিতে নানাভাবে প্ররোচনা দিয়েছেন। এছাড়া জামায়াতের বিরুদ্ধে নানা বক্তব্য দিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.