আট দিনেও খোঁজ মেলেনি বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমানের পাইলট তাহমিদের

বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান এফ-৭-এর পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট রুম্মান তাহমিদের আট দিনেও খোঁজ মেলেনি। পাইলটের খোঁজে সাগরে অভিযান চলছে বলে দাবি করেছে বিমানবাহিনী। কিন্তু আদৌ তাহমিদকে পাওয়া যাবে কি না, সে সম্পর্কে তারা কিছুই বলতে পারছে না। ঘটনার পর থেকে তাহমিদের পরিবার অপেক্ষা করছে চট্টগ্রামে বিমানবাহিনীর জহুরুল হক ঘাঁটিতে। তাদের আশা, তাহমিদ ফিরে আসবেই।
তাহমিদের মামা শাহাদত তাহের গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের ধারণা, তাহমিদ এমন কোনো জায়গায় আছে, যেখান থেকে নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে না। হয়তো কোনো মাছ ধরার নৌকায় বা আশপাশের কোনো দ্বীপে আছে। আমরা দ্বীপগুলোতে খোঁজ নেওয়ার কথাও বলেছি কর্মকর্তাদের।’
গত ২৯ জুন চট্টগ্রামের জহুরুল হক ঘাঁটি থেকে সকালে এফ-৭ যুদ্ধবিমান নিয়ে আকাশে ওড়েন তরুণ পাইলট রুম্মান তাহমিদ। বেলা ১১টা ১৪ মিনিটে নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে এর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে এটি পতেঙ্গায় বঙ্গোপসাগরের বহির্নোঙরের কাছে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিধ্বস্ত হয়। সেই থেকে নিখোঁজ হয়ে যান বৈমানিক তাহমিদ। দুর্ঘটনার কারণ উদ্ঘাটনে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি করেছে বিমানবাহিনী।
বিমানবাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ধ্বংস হওয়া বিমান ও তাহমিদের খোঁজে বিমানবাহিনীর চারটি হেলিকপ্টার, নৌবাহিনীর একটি বিমান ও একটি হেলিকপ্টার, চট্টগ্রাম বন্দরের জাহাজ এবং কোস্টগার্ডের উদ্ধারকারী জাহাজ অভিযান শুরু করে। অভিযানে বিমানের কিছু ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা হয়। তবে কর্মকর্তারা বলেছেন, সাগরে যে স্থানে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে, সেখানে এখনো অভিযান অব্যাহত আছে। নৌবাহিনীর একটি জাহাজ সেখানে অবস্থান করে অভিযান চালাচ্ছে। বিমানবাহিনীর একজন কর্মকর্তাও সেখানে অবস্থান করে উদ্ধার তৎপরতায় সহায়তা করছেন। তবে সাগর উত্তাল থাকায় উদ্ধার অভিযানে সমস্যা হচ্ছে বলে বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া সাগরের পানি অনেক ঘোলা। ডুবুরিরা সাগরে নেমেও কিছু দেখতে পাচ্ছেন না। তবে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যত দিন না তাঁর কোনো খোঁজ পাওয়া যাবে, তত দিন তল্লাশি অভিযান চালানো হবে।
তাহমিদের পরিবারের সদস্যরা বলেন, বিমানবাহিনীর কর্মকর্তারা তাঁদের জানিয়েছেন, ঘটনার দিন প্রায় ৪০ মিনিট পর্যন্ত আকাশে ওড়ে এফ-৭ যুদ্ধবিমানটি। এরপর নামার জন্য রানওয়ের কাছাকাছি এসে নিচু হয়েও আবার ওপরে উঠে যায় এটি। তখন তাহমিদ নিয়ন্ত্রণকক্ষে জানান, বিমানে ত্রুটি দেখা দিয়েছে। এর কিছুক্ষণ পরই নিয়ন্ত্রণ টাওয়ারের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
তাহমিদের মামা বলেন, তাহমিদের বাবা-মা কেউই কথা বলতে পারছেন না, শুধুই কাঁদছেন। ছেলের অপেক্ষায় বসে আছেন মা-বাবা। তাঁরা ছেলেকে না নিয়ে যেতে চাচ্ছেন না।
তাহমিদের ছোট ভাই আদনান তৌফিক প্রথম আলোকে বলেন, পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে সব সময় সংসারের সব কাজে দায়িত্ব পালন করেছেন তাহমিদ। সবকিছুতে ভাইবোনকে আগলে রেখেছেন তিনি। তাই ভাইয়ের ওপর আস্থা আছে ছোট ভাই আদনান তৌফিকের। তিনি বলেন, ‘তাঁদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক বিমানবাহিনীর বিভিন্ন কর্মকর্তাসহ তাহমিদের সহকর্মীরা যোগাযোগ রাখছেন। তাঁদের সঙ্গেই ইফতার ও সেহ্রি করছেন। সবাই বলছেন, ভাইয়া ফিরে আসবেন। অন্য কেউ হলে হয়তো আস্থা থাকত না। কিন্তু এটা ভাইয়া বলেই বিশ্বাস করছি, উনি ফিরে আসবেন।’

No comments

Powered by Blogger.