ঢাকার চাওয়া, ব্যাংককের না by মিজানুর রহমান

ভারত, চীন, মিয়ানমারসহ বিশ্বের ৪৪টি দেশের কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীরা ভিসা ছাড়া থাইল্যান্ড ভ্রমণের সুযোগ পান। বাংলাদেশীদের জন্য এমন সম্ভাবনা তৈরি হতে যাচ্ছিল। দেশটির সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে এ নিয়ে আলোচনার প্রেক্ষিতে চলতি বছরের শুরুতে দ্বিপক্ষীয় একটি ‘কাঠামো চুক্তি’তে রাজি হয়েছিল ব্যাংকক কর্তৃপক্ষ। একটি খসড়াও বিনিময় হয়েছিল। কিন্তু প্রস্তুতি পর্বেই তা নিয়ে বেঁকে বসেছে থাই কর্তৃপক্ষ। এখানে রাজনৈতিক বিবেচনায় বিশেষ ওই পাসপোর্ট দেয়া এবং কোন কোন ক্ষেত্রে তার অপব্যবহার হয় এমন অভিযোগও আনা হয়েছে দেশটির পক্ষ থেকে। সমপ্রতি ঢাকা সফর করে গেছেন থাই পররাষ্ট্র দপ্তরের স্থায়ী সচিব নরাসিত সিনহাসেনা। এখানে দু’দিনের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের পরামর্শ সভায় দেশটির প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন তিনি। সফরকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে তার আলোচনা হয়েছে। সেগুনবাগিচার কর্মকর্তারা বলছেন, সচিবের দু’দিনের ঢাকা সফরে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের ভিসা সহজীকরণে পারস্পরিক সুবিধা চালুর বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনায় এসেছে। জবাবে স্থায়ী সচিব বাংলাদেশের কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের থাইল্যান্ডে ভিসা মুক্ত সুবিধা দেয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব জানিয়ে গেছেন। ঢাকার কর্মকর্তারা মানবজমিনকে জানান, কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের বিষয়ে বরাবরই ইতিবাচক ব্যাংকক কর্তৃপক্ষ। তাদের আপত্তি অফিসিয়াল পাসপোর্ট নিয়ে। এখানে ওই জাল-জালিয়াতি করে অফিসিয়াল পাসপোর্ট বের করা এবং তা ধরা পড়ার বিষয়টিকে সামনে আনছে ব্যাংকক। তারা বাংলাদেশের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপদেষ্টাদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের অনেকে অফিসিয়াল পাসপোর্ট (সরকারি কর্মকর্তা না হয়েও) ব্যবহারসহ সরকারি চাকুরেদের সহজে ওই বিশেষ পাসপোর্ট সুবিধা দিয়ে দেয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, মূলত অফিসিয়াল পাসপোার্টে আপত্তির কারণেই থাইল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের ভিসা সহজীকরণ চুক্তি আটকে আছে। তিনি দেশটির সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এমন চুক্তির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, মোট ৪৫টি দেশের সঙ্গে ব্যাংককের ভিসা-সহজীকরণ চুক্তি রয়েছে। সেখানে একটি দেশ ব্যতিক্রম। তা হলো ফ্রান্স। ৪৪ দেশের কূটনৈতিক এবং অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীরা এ সুবিধা পেলেও ফ্রান্সের শুধু কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের এ সুবিধা পেয়ে থাকেন। তাদের অফিসিয়ালদের এ সুবিধা নেই। সেগুনবাগিচার দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা মানবজমিনের সঙ্গে আলাপে বলেন, বাংলাদেশ এ নিয়ে তার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। চলতি বছরের শেষার্ধে ঢাকায় বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের যৌথ কমিশনের বৈঠক হবে। বৈঠকে উপকূলীয় জাহাজ চলাচলসহ বেশ কিছু চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে থাইল্যান্ডের রেনাং থেকে বাংলাদেশের মংলাবন্দর পর্যন্ত জাহাজ চলাচলে চুক্তির খসড়া তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। ওই বৈঠকের আগেই ভিসা সহজীকরণ চুক্তি নিয়ে (পূর্ণাঙ্গ কিংবা আংশিক) একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হতে চায় ঢাকা। এ নিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শহরিয়ার আলমের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মানবজমিনকে তিনি বলেন, অফিসিয়াল পাসপোর্ট ইস্যু নিয়ে গুরুতর অভিযোগের বিষয়টি এরই মধ্যে আমলে নিয়েছে সরকার। এ নিয়ে আরও সতর্কতা অবলম্বনে প্রধানমন্ত্রীও নির্দেশনা দিয়েছেন বলে তিনি জানান।

No comments

Powered by Blogger.