দুর্নীতিতে জিডিপির ক্ষতি ২ থেকে ৩ শতাংশ

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেেেছন, বাংলাদেশে দুর্নীতির কারণে প্রতি বছর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ থেকে ৩ শতাংশ ক্ষতি হচ্ছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে জিডিপির আরও ১ শতাংশ ক্ষতি হচ্ছে। তবে দুর্নীতি বন্ধ করতে সরকার তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলনকক্ষে ঋণদাতাগোষ্ঠীর স্থানীয় পরামর্শক গ্রুপের (এলসিজি) সঙ্গে এক বৈঠকে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান ও উন্নয়ন সহযোগী বিভিন্ন সংস্থা প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ১ কোটি ৮৭ লাখ কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এটা অত্যন্ত ‘উচ্চাভিলাষী’। এ লক্ষ্য পূরণ করা ‘খুবই কঠিন’ হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
মুহিত বলেন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সংজ্ঞা অনুযায়ী দেশে বেকারের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ সংজ্ঞায় দেশে বেকারের বাস্তব চিত্র আসেনি। বাস্তবে দেশে বেকারের সংখ্যা আরও বেশি।
এ সময় অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রাথমিক শিক্ষার মান সন্তোষজনক হলেও মাধ্যমিক ও কারিগরি শিক্ষার মান ভাল নয়। এজন্য মাধ্যমিক ও কারিগরি শিক্ষার মান বাড়াতে হবে।
টানা ছয় বছর ধরে বাংলাদেশ ৬ শতাংশের বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর পেছনে জনসংখ্যা প্রবৃদ্ধির হার কমে আসার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
মুহিত বলেন, সামাজিক সুরক্ষায় বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ অনন্য। কিন্তু এদেশে আয় বৈষম্য বেশি। এটাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। সপ্তম পঞ্চম বার্ষিক পরিকল্পনায় ২০২০ সালের মধ্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৮ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে।
মুহিত বলেন, বর্তমানে দেশের আর্থিক খাতগুলোতে বিপর্যয় চলছে, সেগুলো আমরা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। তা কাটিয়ে উঠতে কিছু পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, পদ্ধতিগুলোর ফলে আর্থিক খাতের বিপর্যয় আর থাকবে না। তিনি বলেন, প্রাইভেট খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এ খাতে কেন বিনিয়োগ বাড়ছে না তা বুঝতে পারছি না। তবে মনে হয় রাজনৈতিক অস্থিরতা একটা বড় সমস্যা। বেসরকারি বিনিয়োগও বাড়াতে হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি কমাতে আমরা আইসিটি’র ওপর জোর দিচ্ছি। কারণ আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রধান নির্বাচনী স্লোগান ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ব। সুতরাং আমরা এই খাতকে গুরুত্ব দিচ্ছি। এতে জিডিপি’তে প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি পাবে। সভায় জানানো হয়, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রায় ৩ লাখ ৫ হাজার ২০০ কোটি টাকার বিদেশী সহায়তা প্রয়োজন হবে। ৫ বছরে দাতাদের কাছ থেকে এ অর্থ সংগ্রহে করণীয় নির্ধারণেই এলসিজির সঙ্গে সরকারের এ বৈঠক।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম তার উপস্থাপনায় বলেন, আগামী ৫ বছরে দেশের দারিদ্র্য ১৮.৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় সরকার। সেই সঙ্গে অতিদারিদ্র্য ৮.৯ শতাংশে নামানোর লক্ষ্য ধরা হচ্ছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় দারিদ্র্য নিরসনের এ লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে। উপস্থাপনায় বলা হয়, দেশের দারিদ্র্য বর্তমানে ২৪.৮ শতাংশ থেকে অর্থবছর ২০১৬-তে ২৩.৫ শতাংশ, অর্থবছর ২০১৭-তে ২২.৩ শতাংশ, অর্থবছর ১৮-এ ২১ শতাংশ, অর্থবছর ২০১৯-এ ১৯.৮ শতাংশ এবং ২০২০ অর্থবছরে ১৮.৬ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে।

No comments

Powered by Blogger.