হামলায় চমকে ওঠেন বাবলু

হামলা ও সংঘর্ষ শেষ হওয়ার পর সার্কিট হাউজের বাইরে যান জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়া উদ্দিন বাবলু। দৃষ্টিনন্দন সিলেট সার্কিট হাউজ  ভাঙচুরের দৃশ্য দেখে চমকে ওঠেন। তাণ্ডবলীলায় দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। বলেন, যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে। আর গতকাল সিলেট ছাড়ার প্রাক্কালে দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছে তিনি নিজের ক্ষোভের কথা জানালেন। বললেন, ‘দলের চেয়ারম্যান আলহাজ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কাছে তিনি এ ব্যাপারে অভিযোগ করবেন।’ জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেটের আহ্বায়ক আবদুল্লাহ সিদ্দিকী ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরে বলেন, বুধবার মেট্রো হোটেলে ইফতার সেরে তারা ওলিকুল শিরোমণি হযরত শাহজালাল (রহ.) দরগাহে চলে যান। সেখানে মাগরিবের নামাজ আদায় করেন। এরপর বৃষ্টি চলে আসায় তারা মাজারেই আটকা পড়েন। ওদিকে, সিলেট সার্কিট হাউজের ভিআইপি কক্ষে নেতা-কর্মীরা মহাসচিবের অপেক্ষা করছিলেন। এমন সময় সার্কিট হাউজে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে, খবর পেয়ে সংঘর্ষের মাঝামাঝি তারা সার্কিট হাউজে চলে যান। এ সময় মহাসচিবের সঙ্গে ছিলেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য তাজ রহমানও। সংঘর্ষ তখন সুরমা মার্কেট এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এই সময়ে তারা এসে দেখেন সার্কিট হাউজে তাণ্ডব চালানো হয়েছে। চারদিকে গ্লাস ও থাই ভাঙ্গার দৃশ্য। ফুলের টবগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে। এই তাণ্ডবলীলা দেখে চমকে উঠেন দলের মহাসচিব। তাজ রহমানকে বলেন, ‘এটা আশা করিনি। অথচ এটাই ঘটানো হলো।’-এ কথা বলে নিজের জন্য রাখা ভিআইপি স্যুটে চলে যান জিয়াউদ্দিন বাবলু। তাজ রহমান, আবদুল্লাহ সিদ্দিকীসহ দলের সিনিয়র নেতারা তার সঙ্গে ভিআইপি স্যুটে চলে যান। এ সময় বেশ রাগান্বিত হন তিনি। এদিকে, রাত দেড়টার দিকে সার্কিট হাউজে যান সিলেট-২ আসনের এমপি ইয়াহহিয়া চৌধুরী এহিয়া। তিনি দলের মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রায় আধ ঘণ্টাব্যাপী বৈঠককালে এমপি ইয়াহহিয়া তার পক্ষের নেতা-কর্মীদের উপর হামলার ঘটনার বিচার দেন। বলেন, তার পক্ষের নেতাকর্মীরা সার্কিট হাউজে মতবিনিময়ে এসেছিল। এ সময় তাদের মারধর করে তাড়িয়ে দেয়া হয়। তারা ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। এরপর তার অজ্ঞাতেই গ্রুপের নেতাকর্মীরা সার্কিট হাউজে এলে তাদেরও মারধর করা হয়। এ ঘটনার জন্য তিনি প্রতিপক্ষ গ্রুপের নেতাদের দায়ী করেন। তবে, আবদুল্লাহ সিদ্দিকী দাবি করেছেন, এমপি এহিয়ার গ্রুপের নেতা-কর্মীরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সার্কিট হাউজে গুলি চালিয়েছে। এ সময় তারা সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। এদিকে, ঘটনার পর পুলিশ জকিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাব্বির আহমদ, জেলা জাতীয়পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল মালেক খানসহ ১৮ জনকে আটক করেছিল পুলিশ। এর মধ্যে রাত দুইটার দিকে জাতীয় পার্টির জেলার আহ্বায়ক আবদুল্লাহ সিদ্দিকীসহ সিনিয়র নেতারা গিয়ে শাব্বির আহমদসহ ১০ নেতাকর্মীকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন। আর বাকি ৮জন হাজতেই থাকেন। গতকাল সিলেটের কোতোয়ালি থানায় সিলেটের জেলা নাজির এ সংক্রান্ত একটি মামলা করেন। ওই মামলায় হোসাইন আহমদ, রানা আহমদসহ ৮ জনকে আসামি দেখিয়ে গতকাল আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালত তাদের জেল হাজতে পাঠিয়ে দেন। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি মিডিয়া মো. রহমতুল্লাহ গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, পুলিশ মামলা নিয়ে আইনমত এগিয়ে যাচ্ছে। আটক ৮ জনকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। ১০ জনের নাম উল্লেখ করে ৪০-৫০ জনকে মামলার আসামি করা হয়েছে। এদিকে, আবদুল্লাহ সিদ্দিকী জানিয়েছেন, পার্টির মহাসচিব গতকাল দুপুরে বিমানের একটি ফ্লাইটে ঢাকা চলে গেছেন। যাওয়ার আগেও তিনি ক্ষোভ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সন্ত্রাস করে সন্ত্রাসী। সন্ত্রাস করে কেউ নেতা হতে পারে না।

No comments

Powered by Blogger.