২০১১ সালেও মধ্যম আয়ের বাংলাদেশী ছিলেন ১.৪ ভাগ

বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে চিহ্নিত করার প্রেক্ষাপটে কাকতালীয়ভাবে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা পিউ ফাউন্ডেশন বিশ্বব্যাপী পরিচালিত একটি দারিদ্র্য ও উন্নয়নসূচক প্রকাশ করেছে। ৮ই জুলাই প্রকাশিত ওই সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য কমতে পারে। কিন্তু তার অর্থ এটা নয় যে, গতকাল যিনি দরিদ্র ছিলেন, আজ তিনি মধ্যম শ্রেণীতে (মধ্যবিত্তে) উন্নীত হয়েছেন। বিশ্বের অর্ধেকের বেশি মানুষ এখনও নিম্ন আয়ের রয়ে গেছেন। আর ১৫ ভাগ এখনও ‘দরিদ্র’। পিউর সমীক্ষায় বাংলাদেশসহ ১১১টি দেশের আয় ও ভোগের তথ্য বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।
বিশ্ব ব্যাংক সম্প্রতি বলেছে, বাংলাদেশ নিম্ন আয় থেকে নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। একইসঙ্গে অন্য আরও তিনটি দেশের অবস্থারও বদল ঘটেছে। তারা হল কেনিয়া, মিয়ানমার ও তাজিকিস্তান। গত ১৪ই মে মাসে বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটেসটিকস (বিবিএস) বলেছে, বাংলাদেশীদের মাথাপিছু আয় ১১৯০ ডলার থেকে বেড়ে ১৩১৪ ডলার হয়েছে।
ওদিকে পিউর নতুন প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থা চিত্রিত হয়েছে এভাবে: ২০০১ সালে দরিদ্র ৫৫ দশমিক ২ ভাগ। নিম্ন আয় ৪৩ . ৭ ভাগ। মধ্যম আয় ১ দশমিক শূন্য। উচ্চ মধ্যবিত্ত দশমিক দুই। তখন জনসংখ্যা ছিল সাড়ে ১৩ কোটি। ২০১১ সালে জনসংখ্যা ১৫ কোটির বেশি। আর দরিদ্র ৩৯ ভাগ। নিম্ন আয় ৫৯.৩ ভাগ। মধ্যম আয় ১ দশমিক চার। উচ্চ মধ্যবিত্ত দশমিক তিন।
ওয়াকিবহাল বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দারিদ্র্য পরিস্থিতির নিশ্চয় উন্নতি ঘটেছে। কিন্তু তাই বলে কোন নাটকীয় পরিবর্তন ঘটার কোন কারণ নেই। ২০১১ সালে যেখানে ৫৯ ভাগ মানুষ নিম্ন আয়ের এবং মাত্র ১ ভাগ মানুষ মধ্যম আয়ের ছিলেন  সেখানে বিশ্ব ব্যাংক বর্ণিত ‘নিম্ন মধ্য আয়ের’ দেশ বলতে বিরাট কোন পরিবর্তন আশা করা যায় না। বাংলাদেশে এমন কিছুই ঘটেনি যার বৈশ্বিক সাধারণ গড়কে কোনভাবে অতিক্রম করেছে বলে প্রতীয়মান হতে পারে। 
পিউ বিশেষজ্ঞরা দেখিয়েছেন কে দরিদ্র, আর কি করে নিম্ন আয় ও মধ্যম আয়ের মান নির্ধারণ করা হয়। তাদের কথায়, দু ডলার বা তার কমে দিন গুজরানকারী মানুষের সংখ্যা ২০০১ সালে ২৯ ভাগ ছিল, সেটা এখন কমেছে। কিন্তু তাই বলে তাদের উন্নতি আহামরি নয়, আগের চেয়ে অবস্থার সামান্য বদল ঘটেছে। ২০১১ সালে যাদেরকে ‘‘নিম্ন আয়ের’’ হিসেবে দেখানো হয়েছে তারাই ৫৬ ভাগ , আর তারা দৈনন্দিন ২ থেকে ১০ ডলার খরচ করে জীবন ধারণ করেছে। পিউ প্রতিবেদনে ‘মধ্য’’ ও ‘‘উচ্চ’’ আয়ের মানুষের একটা সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। যারা প্রতিদিন ১০ থেকে ৫০ ডলার অর্থাৎ প্রায় ৮শ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা খরচ করেন, তাদেরকে ‘‘মিডল’’ ও ‘‘আপার মিডল’’ বলা হয়েছে।
আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দারিদ্র্য রেখা আর অবশিষ্ট বিশ্বের দারিদ্র্য সীমা এক নয়। ২০১১ সালে সরকারিভাবে চারজনের একটি মার্কিন পরিবারের দারিদ্র্য রেখায় থাকা বলতে বোঝাতো যারা বছরে ২৩,০২১ মার্কিন ডলার (প্রতিদিন ৬৩ ডলার) খরচ করে থাকে। এই মার্কিন দারিদ্র্য রেখার উপরে বিশ্বের মাত্র ১৬ শতাংশ মানুষ বাস করে।
গতকাল নিউইয়র্ক টাইমসে সোমিনি সেনগুপ্ত এক প্রতিবেদনে বলেছেন, জাতিসংঘ এ সপ্তাহের গোড়ায় মিলেনিয়াম ডেভলপমেন্ট গোল (সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্য) বিষয়ে যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তাতে উল্লেখ করা কিছু মন্তব্যের প্রতিফলন ঘটেছে পিউ রিপোর্টেও। সোমিনি লিখেছেন, জাতিসংঘের ওই রিপোর্ট বলেছে, চরম দারিদ্র্যের মধ্যে থাকা বলতে যারা সোয়া ডলারের কমে জীবনযাপন করতো তাদের বোঝানো হতো। ১৯৯০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যবর্তী সিকি শতাব্দীতে এই রকম লোকের সংখ্যা অর্ধেকের বেশি কমেছে। এখন পিউ রিপোর্ট অধিকতর সংযমী ভাষায় বলেছে, ‘‘এই যে যাদের আয় বেড়েছে, তাতে কিন্তু তাদের দারিদ্র্য সেভাবে ঘোচেনি, বিশেষ করে এটা ভারত ও বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে ঘটেছে, যেখানে হঠাৎ চাকরি হারানো বা অসুস্থ হয়ে পড়া  জনগোষ্ঠীর জন্য কোন নিরাপত্তা রক্ষাকবচ নেই।
উল্লেখ্য, পিউ রিপোর্টে এই ইঙ্গিত রয়েছে যে,  যিনি প্রতিদিন ১০ ডলার খরচ করেন তাকে মধ্যবিত্ত বলার ব্যাপারে বিশ্বে ঐক্যমত বাড়ছে। প্রতিদিন ১০ থেকে ২০ ডলার খরচা করার মতো লোকের সংখ্যা ২০০১ এর চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ  বেড়ে ২০১১ সালে ৭৮৪ মিলিয়নে উন্নীত হয়। তবে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের বসতি হিসেবে দক্ষিণ এশিয়া ও সাব সাহারান আফ্রিকার নাম আগের মতোই অটুট রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.